সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ জুলাই, ২০১৬ ১৪:০৭

নিজে ছাড়া অন্যদের ধর্মচর্চা ‘ভুল’, মনে করতেন নিহত ‘জঙ্গি’ সাব্বির

রাজধানীর কল্যাণপুরেপুলিশের অভিযানে নিহত 'জঙ্গি'দের একজন চট্টগ্রামের আনোয়ারার সাব্বিরুল খান বলে নিশ্চিত করেছে তার পরিবার। সাব্বির দীর্ঘদিন থেকে নিঁখোজ ছিলেন।

জামায়াত-শিবির পরিচালিত রেটিনায় কোচিং করতে গিয়ে 'হঠাৎ করে তার কথাবার্তা, চালচলনে পরিবর্তন দেখা দেয়' বলে দাবি করেন সাব্বিরের পরিবারের সদস্যরা।

স্বজনরা জানান- আচার আচরণে পরিবর্তন আসার পর সাব্বির প্রায়ই অন্যদের বলতেন, তিনি ছাড়া স্বজন-শুভার্থী কারো ধর্মকর্ম শুদ্ধ নয়। অন্যদের ধর্ম চর্চা ভুল। অনৈতিক, অনৈসলামিক বলেও কাছের লোকদের গালি দিতেন।

জানা যায়, তাবলিগের কথা বলে মাঝে মাঝে সপ্তাহ-দশদিনের জন্য উধাও হয়ে যেতেন। বছরখানেক আগে একবার তিন মাসের জন্য নিরুদ্দেশ থাকার পর বাসায় ফিরে আসেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত ‘জঙ্গি’ সাব্বিরুল হক চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক চৌধুরীর ছেলে।

অভিযানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক জঙ্গি হাসান নিহত ৯ জনের মধ্যে যে ৮ জনের নাম জানিয়েছে। তার মধ্যে ছবির তৃতীয় সারির মাঝের জন অর্থ্যাৎ আট নম্বর লাশের ছবিটিই সাব্বিরের বলে ‘অনেকটা নিশ্চিত’ করেছে তার পরিবার।

মঙ্গলবার গভীররাতে আনোয়ারা থানার ওসি আবদুল লতিফ বরুমচড়ায় সাব্বিরদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেন।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, 'নিহত ৯ জঙ্গির মধ্যে সাব্বির নামে একজনের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বলে তথ্য পেয়েছি। তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তার প্রোফাইল তৈরির কাজ চলছে, এটি শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।'

এদিকে সাব্বিরুল হকের পরিবার নগরীর বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুলের বাসায় মঙ্গলবার রাত থেকে কান্নার রোল পড়েছে। গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশের পর এর মধ্যে গত চারমাস আগে নিখোঁজ তাদের সন্তান সাব্বিরুলও রয়েছে বলে তার পরিবার নিশ্চিত হয়েছেন। তার বাবা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক চৌধুরী পরিবার নিয়ে পুলিশের ভয়ে তার চাচাতো ভাইয়ের বাসায় রাত কাটিয়েছেন।

সাব্বিরের পরিবারের ঘণিষ্ট এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, নিজের ছেলে বিপথগামী হয়েছে এ খবর পেয়েও আইনি ঝামেলা এড়ানোর পাশাপাশি মানসম্মানের ভয়ে থানায় জিডি পর্যন্ত করেননি আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক চৌধুরী। এখন নিজের ছেলের লাশ নিহত জঙ্গিদের দলে দেখেও চাপা কান্না আসলেও কাউকে কিছুই বলতে পারছেন না তিনি। এমনকি পুলিশি হয়রানি এড়াতে রীতিমত তাকে আত্মগোপনেই থাকতে হচ্ছে।

সাব্বিরুলেন বাবা আজিজুল হক সপরিবারে চট্টগ্রাম শহরের রাহাত্তার পুল এলাকায় বাস করেন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। তার বড় ভাই মোজাম্মেল হক চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা। তারা পারিবারিকভাবেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

পারিবারিক সূত্র জানায়, সাব্বিরুল হক কণিক জামায়াত নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসির): ইকনোমিক অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে সরকারি মুসলিম হাই স্কুল থেকে ২০১০ সালে এসএসসি এবং ২০১২ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এইচএসসির পর চকবাজারে জামায়াত-শিবির পরিচালিত রেটিনায় কোচিং করতে গিয়ে হঠাৎ করে তার কথাবার্তা, চালচলনে পরিবর্তন দেখা দেয়।


সর্বশেষ চার মাস আগে রাউজানে এক বিয়েতে যাওয়ার কথা বলে বাবার কাছ থেকে পাঁচশ টাকা নিয়ে বের হন। সেই থেকে সাব্বির নিখোঁজ। দীর্ঘদিন কোনো খোঁজ না থাকায় সন্তানের আশা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছিলেন বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা। সন্তান নিজে বিপথগামী হয়েছেন বুঝতে পেরে নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরি করারও প্রয়োজন মনে করেননি তারা।

সম্প্রতি ‘আইডি নাম্বার দুই’ নামে ফেইসবুকের একটি ভুয়া আইডি থেকে তার কিছু তৎপরতা স্বজনদের কাছে ধরা পড়ে। ওই আইডি থেকে জানান, তিনি বিয়ে করেছেন। কিন্ত কোথায় আছেন, কেমন আছেন কিছুই বলেননি।

২০০৮ সালে ‘আমাগো সাব্বির দা’ নামে একটি ফেইসবুক আইডি খোলে ব্যবহার করে। গত দু’বছর ধরে সেটি ইনএকটিভ করে রাখে। সম্প্রতি ‘আইডি নাম্বার দুই’ থেকে তার তৎপরতা দেখা যায়। এই আইডিটি ছিল কোরআন-হাদিসের আলোকে নানা স্ট্যাটাসে ভরা। সর্বশেষ এটির ব্যবহার হয়েছিল ২০১৪ সালে। এই আইডিতে অস্ত্র তাক করা এক জঙ্গির ছবি প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে। আছে পোশাকধারী কিছু মানুষের লাশ বহন করা এবং উটের দৌড়ের ছবি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত