সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ নভেম্বর, ২০১৬ ০৪:১৭

সন্ত্রাসবাদে পারিবারিক উদাসিনতা ও রাজনৈতিক উস্কানি, জরিপে তথ্য

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার পেছনে পারিবারিক অসচেতনতা বা উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী, এজন্যে রাজনৈতিক উস্কানিকে কারণ হিসেবে দেখছেন ৯০ ভাগ; আর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ শতাংশ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে বলে একটি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে, আর এমন পরিস্থিতিতে এ বছরের পহেলা জুলাই ঢাকার হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় নজিরবিহীন জঙ্গিবাদী ঘটনা ঘটে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীদের করা এক জরিপে ওঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারপারসন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর অধ্যাপক তুরিন আফরোজ রোববার (২০ নভেম্বর) জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।

এতে দেখা যায়, সন্ত্রাসবাদকে যারা সমর্থন করছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। বয়সের দিক দিয়ে সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণদের (১৮-২৫ বছর) মধ্যে এ ধরনের ভাবনার প্রাধান্য ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশের।

তুরিন আফরোজ বলেন, গত ২৭ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর সন্ত্রাসবাদ ও তারুণ্য নিয়ে ২০টি প্রশ্নের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার শিক্ষার্থীর মতামত নেওয়া হয়। ৬৬৩ জন ছেলে ও ৩৩৭ জন মেয়ে শিক্ষার্থী জরিপে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ১০ দশমিক শূন্য ২ ভাগ তরুণ-তরুণীর সন্ত্রাসবাদ সমর্থনকে ‘দুঃখজনক’ ও ‘অপ্রত্যাশিত’ মন্তব্য করে সন্ত্রাসবাদ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান আইনজীবী তুরিন আফরোজ।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৪ দশমিক ২ ভাগ মনে করেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে তরুণদের সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ৩৭ দশমিক ৬ ভাগ শিক্ষার্থী মনে করেন, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি।

সন্ত্রাসবাদে ঝোঁকার জন্য পারিবারিক অসচেতনতা বা উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী, এরপর আছে রাজনৈতিক উস্কানি, বেকারত্ব, ধর্মীয় অজ্ঞতা, ইন্টারনেটের সুবাদে যোগাযোগ সহজ হওয়া এবং হতাশা ও শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটির কথা বলেছেন শিক্ষার্থীরা।

তুরিন আফরোজ বলেন, সন্ত্রাসবাদ রোধে প্রতিটি পরিবারকে এক একটি দুর্গের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। পরিবার যদি তার আপন লোকের ওপর সতর্ক নজরদারি রাখে তাহলে হয়তো একজন ব্যক্তির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, অর্থনৈতিক লাভ নয়, আদর্শিক বিচ্যুতি থেকে সন্ত্রাসবাদে ঝুঁকেছে তরুণরা। সন্ত্রাস দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ৭৩ দশমিক ৭ ভাগ শিক্ষার্থী।

সন্ত্রাসবাদ দমনে বিচার ব্যবস্থার উপরও আস্থায় ঘাটতি জরিপে বেরিয়ে এসেছে বলে জানান তুরিন আফরোজ।

সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, পারিবারিক নজরদারি, যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

জরিপের বিবরণ তুলে ধরতে গিয়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, গত ২৭ অক্টোবর হতে ৩রা নভেম্বর ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত মোট ৮ দিন ব্যাপী ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৩০ জন শিক্ষার্থী মোট ১০০০ (এক হাজার) জন বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উপর এক জরিপ পরিচালনা করে। এই জরিপে মোট ৬৬৩ জন পুরুষ এবং ৩৩৭ জন নারী শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৮ বছর বয়সী ছিল ২২%, ১৯ বছর বয়সী ছিল ৯.৯%, ২০ বছর বয়সী ছিল ২৪.৩%, ২১ বছর বয়সী ছিল ২৫%, ২২ বছর বয়সী ছিল ১৯.৪%, ২৩ বছর বয়সী ছিল ৯.৭%, ২৪ বছর বয়সী ছিল ৩.৬% এবং ২৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সী ছিল ৫.৯% । সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬৮.৭% ছিল, উল্লেখ করেন তিনি।

জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমএম শহীদুল হাসান এবং পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত