সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০১:৫০

ঢুকে পড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিন, মিয়ানমারের প্রতি বাংলাদেশ

রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর হামলায় সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট নিরসন করতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা। একইসঙ্গে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার মিয়ানমারের বিশেষ দূত ও দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিও তিনের সঙ্গে বৈঠকে এই জোরালো বার্তা দেওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, মিয়ানমারের বিশেষ দূতের সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এর আগে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন কিও তিন।

বৈঠক প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘ঢাকার তরফ থেকে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে, রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে। এর সমাধানও মিয়ানমারকে করতে হবে। এজন্য রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালের মিয়ানমার নাগরিক আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশসহ অনেক দেশ মনে করে—এটি রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ।

অক্টোবরের ৯ তারিখে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে পুলিশ চৌকিতে আক্রমণে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। এ ঘটনার তিন মাস পর বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার জন্য মিয়ানমার প্রতিনিধি ঢাকায় পাঠালো।

এর আগে গত তিনমাসে এ ধরনের কোনও বৈঠকে তারা আগ্রহ দেখায়নি। বরং মিয়ানমারের নেত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করেননি। অথচ নভেম্বরে মিয়ানমার-চীন সীমান্তের শান প্রদেশে পুলিশ চৌকিতে আক্রমণের এক সপ্তাহের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘১৯৭৮ সালে এবং ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার সময়ে মিয়ানমার স্বীকার করে নিয়ে বলেছিল, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের আইনগত নাগরিক। আলোচনায় সেই উদাহরণ টেনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়। তবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা বিষয়ে তাদের মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে কিনা, সে রকম কোনও ইঙ্গিত মিয়ানমার প্রতিনিধি দল দেয়নি। ’

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা ১৯৭৮ সাল থেকে তারা যে মনোভাব পোষণ করছিল, সেই একই মনোভাব তারা এবারও ব্যক্ত করে।

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর হামলায় শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহারা হয়েছে। এছাড়া গত তিন মাসে প্রায় ৭০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে নতুনভাবে অনুপ্রবেশ করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইন প্রদেশে ধর্মীয় কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার পরে অং সান সু চির নেতৃত্বে গঠিত সরকারের টনক নড়ে।

আগামী ১৯ জানুয়ারি শুধু রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালয়েশিয়ায় ইসলামিক দেশগুলোর সংস্থা ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকে একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।

এছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্ট ডিসেম্বরে রোহিঙ্গা নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করে। সেখানে মিয়ামারের প্রতিবেশী ও আসিয়ানের সদস্য মালয়েশিয়া প্রকাশ্যে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা নির্যাতনের জন্য দায়ী করেছে।

বর্তমান মিয়ানমার সরকার ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে, তাদের ফসল নষ্ট করে দিচ্ছে। এর মাত্রা এত বেশি যে, তারা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চাইছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত