সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৩:০৭

নির্বাচন কমিশন গঠনে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ ছয়জনের মধ্যে চারজন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন আর বাকি দুইজন অধ্যাপক। এ কমিটি পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করবে, কমিটির প্রধান করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে। বর্তমান ইসি গঠনে গতবারও একই দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

গতবারের মতোই সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ও কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) পদধারী ব‌্যক্তিরা থাকছেন এই কমিটিতে। তারা হলেন পিএসসির এবারের চেয়ারম‌্যান মোহাম্মদ সাদিক এবং সিএজি মাসুদ আহমেদ। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য শিরীণ আখতারকে সার্চ কমিটিতে নেওয়া হয়েছে।

আপিল বিভাগের বিচারপতি মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে গতবার সার্চ কমিটিতে ছিলেন হাই কোর্টের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান, পিএসপির তৎকালীন চেয়ারম্যান এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী ও তৎকালীন সিএজি আতাউল হাকিম।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান চারজনের সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন; এবার সদস‌্য সংখ‌্যা দুজন বাড়িয়ে দুই বিশ্ববিদ‌্যালয় শিক্ষককে এতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন আবদুল হামিদ। প্রয়াত জিল্লুর রহমানের মতোই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মাসব‌্যাপী সংলাপের পর বুধবার সার্চ কমিটি গঠন করেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

এ কমিটি আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারের নাম প্রস্তাব করবে। এক্ষেত্রে কমিটি প্রতিটি পদের বিপরীতে একাধিক ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে পারবে। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির দেওয়া নাম থেকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন।

এর আগে সকালে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানান, ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন সংক্রান্ত চিঠি বঙ্গভবন থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। অবশ্য একজন কমিশনার একেএম শাহনেওয়াজের মেয়াদ শেষ হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। তিনি যোগ দিয়েছিলেন পরে।

কারও কারও মতে, একজন কমিশনার থাকলেও ইসির অস্তিত্ব থাকবে। তবে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে হলে আবারও পৃথক শপথের প্রয়োজন হবে। কেননা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের শপথ আলাদা। এই বিবেচনায় অনেকে বলছেন, ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইসি পুনর্গঠন করলেও চলবে।

তবে সংবিধান অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে কমিশন থাকার কথা বলা হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারির আগে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে বলে সরকারি একটি সূত্রে জানা গেছে।

সার্চ কমিটি গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে বঙ্গভবনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন। সংসদের বাইরে থাকা সরকারবিরোধী প্রধান দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এই সংলাপ শুরু হয়। এরপর ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এক মাসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ৩১টি দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে সংলাপে করেন রাষ্ট্রপতি।

সংলাপে অংশ নেওয়া অন্য দলগুলো হচ্ছে— জাতীয় পার্টি (জাপা), জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (আম্বিয়া), জাতীয় পার্টি (জেপি), কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ, এলডিপি, বিএনএফ, ইসলামী ঐক্যজোট, তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), সিপিবি, ন্যাপ, সাম্যবাদী দল, বিকল্প ধারা, জেএসডি, বাসদ, ইসলামী আন্দোলন, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ন্যাপ, গণফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জাকের পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট ও মুসলিম লীগ (বিএমএল)।

প্রজ্ঞাপন জারির পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি গঠনের লক্ষ‌্যে এই সার্চ কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।”

সৈয়দ মাহমুদ হোসেন
ছয় বছর ধরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ১৯৮১ সালে জেলা আদালতের আইনজীবী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। হাই কোর্টে আসেন তার দুই বছর পর। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এর দুই বছর পর হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি হওয়া মাহমুদ হোসেন আপিল বিভাগে উন্নীত হন ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি।

ওবায়দুল হাসান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং আইন বিভাগ থেকে এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে ওবায়দুল হাসান জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন ১৯৮৬ সালের মার্চে। তার দুই বছর পর হাই কোর্ট বিভাগে এবং ২০০৫ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। ২০০৯ সালের জুনে হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসাবে নিয়োগ পান। ২০১১ সালের জুনে স্থায়ী হন সেখানে। ২০১২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের দায়িত্বে আছেন তিনি।

মোহাম্মদ সাদিক
১৯৮২ সালের নিয়মিত বিসিএস ব্যাচের প্রশাসন ক‌্যাডারের কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ সাদিক নির্বাচন কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকার সময় ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর পিএসসি সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। গত বছরের ২৫ এপ্রিল পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ১৯৫৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে জন্ম নেওয়া সাদিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি নিয়ে যুক্তরাজ‌্যে উচ্চ শিক্ষা নেন। পরে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সিলেটিনাগরী লিপির উপর গবেষণার জন্যে ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। আমলাদের মধ‌্যে কবি হিসেবে পরিচিত সাদিক বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনে সক্রিয় রয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর জীবন-সদস্য। জাতীয় কবিতা পরিষদ ও বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি।

মাসুদ আহমেদ
২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পান মাসুদ আহমেদ। ’৮১ ব‌্যাচের এ কর্মকর্তা হিসাব ও নিরীক্ষা ক‌্যাডারে সরকারি চাকরি শুরু করেন। তিনি পার্বত‌্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস‌্য ছিলেন। সরকারি কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদও লেখালেখি করেন। তার প্রকাশিত গল্পের সংখ্যা ১০০টি, এছাড়া সাতটি উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। তার লেখা নিয়ে তৈরি আটটি টেলিফিল্ম বিভিন্ন টেলিভিশনে সম্প্রচার হয়েছে।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম অধ‌্যাপনার পাশাপাশি গল্প, উপন‌্যাস, প্রবন্ধ সমানভাবে লিখে যাচ্ছেন। বাংলা একাডেমি, কাগজ সাহিত‌্য পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস‌্য তিনি। সিলেট এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা সৈয়দ মনজুরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন ১৯৭২ সালে। এর দুই বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন তিনি। ১৯৮১ সালে কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি নেন।

শিরীণ আখতার
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শিরীণ আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী উপ-উপাচার্য হিসেবে গত বছরের ২৮ মার্চ কাজ শুরু করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির অষ্টম উপ-উপাচার্য। ১৯৮৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া শিরীণ আখতার ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিইএচডি ডিগ্রি নেন তিনি। বিশ্ববিদ‌্যালয়ে যোগ দেওয়ার আগে চট্টগ্রামের এনায়েত বাজার মহিলা কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত