সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ জুলাই, ২০১৭ ১৩:৫০

সিদ্দিকুরের চিকিৎসার দায়ভার নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধনে ছাত্রলীগের বাধা

আহত সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র মো. সিদ্দিকুর রহমান

পুলিশের ছোঁড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে দুচোখ হারাতে চলা তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানের চিকিৎসার দায়ভার নেওয়া এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীদেরকে মানববন্ধন করতে দেয় নি ছাত্রলীগ।

রোববার (২৩ জুলাই) সকালে প্রথমে কলেজ ক্যাম্পাসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন আন্দোলনকারীরা। এরপর পৌনে ১১টার দিকে মহাখালীর আমতলী এলাকায় মানববন্ধনে দাঁড়ান প্রায় দেড়শ’ শিক্ষার্থী। সেখানেও বাধা দেয় ছাত্রলীগ। তারা মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করে।

মহাখালীর আমতলি এলাকায় মানববন্ধন চলার ১৫ মিনিটের মাথায় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী মিরাজুল ইসলাম ডলার এবং সাধারণ সম্পাদক মানিক হোসেন মানিক সহ একদল ছাত্রলীগ নেতাকর্মী শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেয়। এ সময় মানববন্ধনকারী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন, আনারুলসহ তিনজনকে চড়-থাপ্পড়ও দিতে দেখা যায়। এরপর শিক্ষার্থীদের কলেজ ক্যাম্পাসে নিয়ে যান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে বৃহস্পতিবার শাহবাগে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। ওই সময় পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল লেগে আহত সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানের দুই চোখে আর আলো ফিরবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ওই দিন রাতেই অজ্ঞাতনামা ১২শ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করে পুলিশ।

এদিকে, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মানববন্ধন ভেঙে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী আনিতা বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করছিলাম। কলেজ ক্যাম্পাসে দাঁড়াতে দিল না, এরপর এখানে এসে মারধর করছে। এ কেমন বর্বরতা!

“তারা বলছে, আমরা সরকারবিরোধী কাজ করছি। আমরা কিসের সরকারবিরোধী কাজ করছি? আমরা শুধু আমাদের সিদ্দিকুরের দায়ভার নেওয়ার কথা বলছি। এভাবে পুলিশ একজনকে অন্ধ করে দিবে, আর আমরা কথা বলতে পারব না।”

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা সিদ্দিকুরের দায়ভার সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনাসহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ভণ্ডুল করে দেওয়ার বিষয়ে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ডলার বলেন, “সিদ্দিকুরের চিকিৎসার ব্যবস্থা সবচেয়ে ভাল ডাক্তার দিয়ে করানো হচ্ছে। আমরা চাই না, এভাবে আন্দোলন হোক। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখানে আন্দোলন করছে ঠিক, কিন্তু তাদের মধ্যে দুষ্কৃতকারীরা ঢুকে যদি সংঘর্ষ বাধায় তার দায়ভার কে নিবে।”

সিদ্দিকুর স্নাতক শেষে সরকারি চাকরির জন্য বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। পুলিশের ‘কাঁদানে গ্যাসের শেলের’ আঘাত লাগে তার দুই চোখে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের একজন সদস্য দৌড়ে এসে খুব কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছেন। তার পরপরই মাটিতে পড়ে যান সিদ্দিকুর। রাস্তার ওই স্থানটি রক্তে লাল হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘সিদ্দিকুরের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।’

ময়মনসিংহের তারাকান্দার ঢাকেরকান্দা গ্রামে সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বয়স যখন মাত্র তিন বছর, তখন বাবা মারা যান। মা সুলেমা খাতুন কিষানির কাজ করে লেখাপড়া করান সিদ্দিকুর ও আর তার বড় ভাইকে। মাধ্যমিক পাস করার পর পড়ালেখা ছেড়ে দেন বড় ভাই নায়েব আলী। হাল ধরেন সংসারের। রডমিস্ত্রির কাজ করে সিদ্দিকুরের পড়ালেখার খরচ জোগাতে থাকেন।

সিদ্দিকুর তিতুমীর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। খিলক্ষেতের একটি মেসে থাকেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত