সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ জুলাই, ২০১৭ ২২:২০

উন্নত চিকিৎসার জন্যে সিদ্দিকুরকে ভারত পাঠাচ্ছে সরকার

আহত সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র মো. সিদ্দিকুর রহমান

তিতুমীর কলেজের আহত শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিদ্দিকুরের চিকিৎসার খরচসহ সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছে সরকার।

সোমবার (২৪ জুলাই) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, সিদ্দিকুরের চোখ ভালো করতে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নির্দেশ দিয়েছেন।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফাকে তিনি এ নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তার চোখ ভালো করতে যা যা করণীয় চিকিৎসকরা যেন সেই পদক্ষেপ নেন।

এরআগে দুপুরে চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে আহত সিদ্দিকুরকে দেখতে যান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ওবায়দুল কাদের সিদ্দিকুরকে প্রয়োজনে বিদেশ পাঠানো হবে বলে ঘোষণা দেন।

সকালে সর্বশেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে সিদ্দিকুরের দুই চোখে আলো ফেলেন চিকিৎসকরা। কানের দিক থেকে বাঁ-চোখে আলো ফেললে সিদ্দিকুর সাড়া দিয়ে জানান তিনি দেখেছেন। কিন্তু ডান চোখে আলো দিলে তিনি কিছুই দেখেননি বলে জানান।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সকালে সিদ্দিকুর যেহেতু জানিয়েছে যে, সে বাঁ-চোখে আলো দেখতে পাচ্ছে, তাই আমরা মোটামোটি নিশ্চিত যে সে ওই চোখে দেখতে পাবে। তারপরও কিছু পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন আছে। তাকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তার চোখের উন্নতি হবে আশা করা যায়।’

তিনি আরো বলেন, কর্নিয়ার ফোলা ভাবটা কমে গেলে পরিবারে সঙ্গে কথা বলে তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সিদ্দিকুরের দুই চোখেই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ডান চোখটা পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ডান চোখ প্রায় অকেজো হয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, পরীক্ষার রুটিন ও তারিখ ঘোষণাসহ কয়েকটি দাবিতে ২০ জুলাই সকাল ১০টার দিকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

পুলিশ তাদের ওই জায়গা ছেড়ে যেতে বললে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুট ওভারব্রিজের পাশের অংশে অবস্থান নেন। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ারশেল ছোঁড়ে। এসময় খুব কাছ থেকে ছোড়া একটি টিয়ারশেলে সিদ্দিকুর রহমানের দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সিদ্দিকুর স্নাতক শেষে সরকারি চাকরির জন্য বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। পুলিশের ‘কাঁদানে গ্যাসের শেলের’ আঘাত লাগে তার দুই চোখে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের একজন সদস্য দৌড়ে এসে খুব কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছেন। তার পরপরই মাটিতে পড়ে যান সিদ্দিকুর। রাস্তার ওই স্থানটি রক্তে লাল হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘সিদ্দিকুরের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।’

ময়মনসিংহের তারাকান্দার ঢাকেরকান্দা গ্রামে সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বয়স যখন মাত্র তিন বছর, তখন বাবা মারা যান। মা সুলেমা খাতুন কিষানির কাজ করে লেখাপড়া করান সিদ্দিকুর ও আর তার বড় ভাইকে। মাধ্যমিক পাস করার পর পড়ালেখা ছেড়ে দেন বড় ভাই নায়েব আলী। হাল ধরেন সংসারের। রডমিস্ত্রির কাজ করে সিদ্দিকুরের পড়ালেখার খরচ জোগাতে থাকেন।

সিদ্দিকুর তিতুমীর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। খিলক্ষেতের একটি মেসে থাকেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত