সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০৪:১৩

বারী সিদ্দিকী মারা গেছেন

বাংলা লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী বারী সিদ্দিকী আর নেই। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত (২৪ নভেম্বর) ২টা ৩০ মিনিটে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। বারী সিদ্দিকীর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তাঁর ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী।

গত ১৭ নভেম্বর রাতে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক আবদুল ওয়াহাবের তত্বাবধায়নে টানা সাতদিন আইসিইইউ-তে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখলেও তার শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, হৃদরোগ ছাড়াও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী। তিনি বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বাঁশিবাদক। মূলত গ্রামীণ লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গান করতেন তিনি।

মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তাঁর আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষ সহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন।

ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারি সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাঁকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাথে যুক্ত হন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিক এরপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসংগীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।

কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে নব্বইয়ের দশকে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছান এ শিল্পী। ১৯৯৫ সালে বারী সিদ্দিকী ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত “শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন। এর মধ্যে ‘শুয়া চান পাখি’ গানটির জন্য তিনি অতিদ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। একক গানের পাশাপাশি বারী সিদ্দিকী বেশকিছু চলচ্চিত্রেও কণ্ঠ দিয়েছেন।

তাঁর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত