সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ মার্চ, ২০১৮ ১৬:০৩

তনু হত্যার দুই বছর: ধরাছোঁয়ার বাইরে ঘাতকেরা

দেশব্যাপী আলোচিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ২বছর পূর্ণ হলো আজ মঙ্গলবার। কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা আজও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।

তনু হত্যা মামলার তদন্ত মাঝপথে আটকে আছে স্বীকার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘এ সময়ে অন্তত দেড়শ লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের তালিকায় থাকা আরও ৪-৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের কেউ কেউ দেশের বাইরে ও প্রশিক্ষণে আছেন। জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই মামলার তদন্ত একটা পর্যায়ে যাবে।’

মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সোমবার (১৯ মার্চ) গভীর হতাশা প্রকাশ করেন নিহত তনুর মা আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন- পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না। গত ৮ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন আহমদ দেখা করে গিয়েছে। মামলার অগ্রগতির বিষয়ে সিআইডি পুলিশের কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা দেখতাছি। আনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, পুলিশ আসামিদের ধরছে না। আমার মেয়ে তো অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়নি, মেরে ফেলেছে।

তিনি আরও বলেন, তনুর বাবা তিন মাস ধরে অসুস্থ। বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। কেউ এখন আর আমাদের খোঁজ নেয় না। তিনি তার মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার চায়।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, তার মেয়ে সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় পড়াতেন। তার স্ত্রীর সঙ্গে মেয়ের যোগাযোগ ছিল। সেই দিকে না গিয়ে উল্টো দিকে হাঁটছেন সবাই।

তদন্ত কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, তনুর সঙ্গে সার্জেন্ট জাহিদের স্ত্রীর পরিচয় হয় সেলাই কাজ শিখতে গিয়ে সেনাকল্যাণ মার্কেটে। তাও ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের দিকে। এখন বললেই এভাবে তদন্ত করা যায় না।

প্রসঙ্গত, তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ না করে প্রতিবেদন দেওয়ায় ঘটনার রহস্য উৎঘাটন নিয়ে শুরু থেকেই সংশয় দেখা দেয়। ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। ২০১৬ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল এমন তথ্যও তারা নিশ্চিত হয়েছিল।

পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ মেলানোর (ম্যাচিং) কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা কিংবা ফলাফল কি- এ নিয়েও সিআইডি মুখ খুলছে না। তাই দীর্ঘ ২ বছরেও তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে না পারা, সামরিক-বেসামরিক অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, এমনকি ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রাণু পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ মিলিয়ে ঘাতকদের সনাক্ত করতে না পারায় আলোচিত এ হত্যার বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবারসহ সচেতন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত