সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ১৭:৩০

হাতঘড়ির সাহায্যে এটিএম কার্ড জালিয়াতি; ৪ দিনের রিমান্ডে শরিফুল

হাতঘড়িতে সংযুক্ত বিশেষ মিনি কার্ড রিডারের মাধ্যমে গ্রাহকের এটিএম কার্ডের অভ্যন্তরীণ তথ্য স্ক্যান করা হতো। তারপর গ্রাহক যখন পিন নম্বর দিতো কৌশলে সেটিও টুকে নেওয়া হতো এবং বিলের রি-প্রিন্ট দিয়ে ওই কপির পেছনে লিখে রাখতো। এভাবেই এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি করতো এটিএম কার্ড জালিয়াতির 'মূল হোতা'  শরিফুল ইসলাম (৩৩)।

পাঁচটি ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শরিফুলকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে বুধবার (২৫ এপ্রিল)  দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মোল্যা নজরুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর থেকে শরিফুলকে আটক করার সময় তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের ১ হাজার ৪শ’ ক্লোন কার্ড, একটি ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ড রিডার ও রাইটার, তিনটি মেশিন, সচল ডিজিটাল হাতঘড়ি (গ্রাহকদের তথ্য চুরিতে ব্যবহৃত), দু’টি মিনি কার্ড রিডার ডিভাইস, পাসপোর্ট ১৪টি, মোবাইল ফোন সেট (৮টি), ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস ক্রেডিট কার্ড একটি, পরচুলা একটি  ও একটি কালো রংয়ের সানগ্লাস এবং তিনটি এনআইডি কার্ড জব্দ করা হয় বলে জানিয়েছেন মোল্যা নজরুল ইসলাম।



তিনি জানান, এ বছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংঘটিত পাঁচ (ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইবিএল ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া) ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি ঘটনার তদন্তে আমরা জানতে পারি যে, ব্যাংকের গ্রাহকরা যখন বিভিন্ন সুপারশপ ও ডিপার্টমেন্ট স্টোর থেকে পণ্য ক্রয়ের পর কার্ড পাঞ্চ করার সময় একটি চক্র সুকৌশলে গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করে এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি করে নিচ্ছে। সেই অভিযোগে শরিফুলকে মিরপুর থেকে আটক করা হয়।

রাজধানীর বনানী এলাকার একটি সুপারশপের চাকরিকেই হাতিয়ার বানিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন শরিফুল।

এমনটাই জানিয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, তদন্তে আমরা জানতে পারি, প্রতারক শরিফুল ইসলাম একটি ডিপার্টমেন্টাল শপের বনানী শাখায় কাজ করতেন। হাতঘড়িতে থাকা বিশেষ স্ক্যানিং ডিভাইসের মাধ্যমে তিনি গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি করতেন। এরপর বাসায় গিয়ে ল্যাপটপ এবং ডিভাইসের মাধ্যমে গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের তথ্যাবলী ভার্জিন কার্ড বা খালি কার্ডে স্থাপন করে ক্লোন এটিএম কার্ড বানান। পরে যেকোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতেন। বুথে টাকা তোলার সময় সিসি ক্যামেরায় যাতে তাকে চেনা না যায় তার জন্য  শরিফুল পরচুলা এবং চশমা ব্যবহার করতেন।

শরিফুলের ব্যাংক একাউন্ট পর্যালোচনা করে এ পর্যন্ত কয়েক কোটি  টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন মোল্যা নজরুল। এছাড়া ব্যক্তিগত চলাচলের জন্য ব্যবহার করতেন টয়োটা এলিয়ন মডেলের গাড়ি। জালিয়াতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ টাকায় যাপন করতেন বিলাসবহুল জীবন।

মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতারক শরিফুল ইসলাম মেহেরপুরের গাঙনী উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের ইয়াজ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। সে মেহেরপুর হাট বোয়ালীয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে এসএসসি এবং গাঙনী ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৩ সালে এইচএসসি পাস করে। পরে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটিতে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি নিতে যান। ২০১০ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় তার রাশিয়ান রুমমেট ইভানোভিচের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড প্রতারণার কৌশল শিখে শরিফুল। দেশে আসার পরপরই সে কার্ড জালিয়াতি শুরু করে।

২০১৩ সালে এই সংক্রান্তে দুটি মামলা হয় এবং সেই মামলায় প্রতারক শরিফুল ১৮ মাসের হাজতবাস করে। এরপর সে কিছু দিনের জন্য স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি ফার্ম খোলে। সেখানে তেমন সুবিধা করতে না পেরে রুমমেটের কাছ থেকে শেখা কৌশল আবারও কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়।’

এছাড়া বুধবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন সিআইডির উপপরিদর্শক এএইচএম ফজলে রাব্বি।

শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফাহাদ বিন আমিন চৌধুরী ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত