সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ জুলাই, ২০১৮ ০২:৪২

হাওর উন্নয়ন পরিকল্পনা দলিলে আছে, বাস্তবায়নে নেই

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, জন্ম থেকে দেখে আসছি হাওরের মানুষের ওপর বৈষম্য করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট কোনো ক্ষেত্রে নয়— শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে এ বৈষম্য করা হয়। হাওরের উন্নয়নে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর পদক্ষেপ নিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি।

রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ ও অক্সফাম যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ৩৭৩টি হাওর এলাকার উন্নয়নের জন্য হাওর উন্নয়ন বোর্ডের যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তা দৃশ্যমান নয়। হাওর উন্নয়নের জন্য মাস্টারপ্লান করা হয়েছে। কিন্তু আমি কোথাও এর বাস্তবায়ন দেখিনি। ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কি কেবল দলিলে থেকে গেছে?

হাওরের পরিবেশগত উন্নয়নের জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, হাওরের পরিবেশ অপরিবর্তিত রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। হাওরের শিক্ষা ব্যবস্থা, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।

এ সময় হাওরের মিঠা পানির সদ্ব্যবহার, ডিম ছাড়ার মৌসুমে মাছ আহরণ বন্ধ, মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও কৃষি ব্যবস্থার জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের পরামর্শও দেন তিনি।

হাওর অঞ্চলে পর্যটন বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, নেত্রকোনার ধর্মপাশা থেকে গারো পাহাড়ের পাদদেশ হয়ে হাওরের মধ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ শহর অবধি একটি রেললাইন নির্মাণ করা গেলে তা পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। থাকা, খাওয়া, চলাচলের সমস্যার কারণে পর্যটকরা হাওরে যায় না।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজের পরিচালক আনিসুল ইসলাম।

নিজেদের একটি গবেষণার ফলাফল থেকে পাওয়া হাওরের পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে বন্যায় হাওরের ফসলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকার। এছাড়া শীতকালীন ফসলের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাওরে এক সময় ৭০ থেকে ৮০ প্রজাতির ৬০ হাজার থেকে এক লাখ পাখি আসত। এখন প্রজাতির সংখ্যা নেমে এসেছে সাতচল্লিশে, আর পাখি আসে ৩৫ হাজারের মতো।

গবেষণায় আরও বলা হয়, হাওরে এখন ৩০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। মাত্র ২৬ শতাংশ কৃষক এখন হাওরের ৬৫ শতাংশ জমির মালিক।

আনিসুল ইসলাম বলেন, বাকি ৭৪ শতাংশ কৃষক বর্ষা মৌসুমে বেকার হয়ে পড়েন। এ হার বাড়তে থাকায় হাওরের কৃষক এখন পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছেন।

হাওর এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আনিসুল ইসলাম জানান, হাওরে শিক্ষার হার ৩৮ শতাংশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭১ শতাংশ শিশু ভর্তি হলেও বছর শেষে তা দাঁড়ায় ৪৪ শতাংশে। হাওরের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার গড় হার ৪৪ শতাংশ। নেত্রকোনায় এ হার আরও কম। মাত্র ৩৫ শতাংশ। হাওরে নলকূপের পানিতে আর্সেনিক সমস্যাও মেটেনি, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়নি।

আনিসুল ইসলাম পরিসংখ্যান ব্যুরোর পভার্টি ম্যাপ জরিপ নিয়ে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, এ জরিপে বলা হয়েছে, হাওরে কোনো দারিদ্র্য নেই। তাই বিশ্বব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ফুড ব্যাংক যখন দরিদ্র এলাকার উন্নয়নে নানা তহবিল দিচ্ছে, তখন হাওর এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

আলোচনা সভায় হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মজিবুর রহমান বলেন, হাওর এলাকার উন্নয়ন ও বন্যা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন অধিদপ্তরের কাজে কোনো বরাদ্দ নেই। অধিদপ্তরের মূল কাজ বায়োডাইভার্সিটি ও ইকোসিস্টেম রক্ষা করা। সেসব কাজ করা হচ্ছে। যতটা সম্ভব ইকোসিস্টেম রক্ষা করে কাজ করা হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত