২২ জানুয়ারি, ২০১৯ ১২:৩৫
বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক, গীতিকার ও সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আর নেই। মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর বাড্ডায় নিজ বাসায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুর আগে সর্বশেষ গত ২ জানুয়ারিতে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেসবুকে নিজের একটা ছবি ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পোস্ট করে লিখেন, “আমাকে যেন ভুলে না যাও... তাই একটা ছবি পোস্ট করে মুখটা মনে করিয়ে দিলাম”। কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরে এয়ারপোর্টে বসে ছবিটি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি, আর এটিই ছিল ফেসবুকে তাঁর দেওয়া শেষ স্ট্যাটাস।
কিন্তু কে জানতো, মাত্র ২০ দিন পরে তার ছবির ক্যাপশন কাঁদাবে ভক্ত-শ্রোতাসহ দেশবাসীকে। তিনি চলে যাবেন না ফেরার দেশে। কোনদিন ফেসবুকে আর তাকে ভুলে না যাওয়ার আবদার করবেন না।
তাঁর ওই পোস্টে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী বিভিন্ন কমেন্টে এই গুণী শিল্পীকে ভুলা যাবে না বলে মন্তব্য করেন।
গীতিকার শামসুল আলম সেলিম লিখেন, সালাম গুরু। আপনাকে ভুলে যাবো এমন স্বার্থপর যেন না হই। আপনি দীর্ঘজীবী হউন।
শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ লিখেন, প্রিয় মানুষের জন্য ভালোবাসা।
গল্পকার রুমা মোদক লিখেন, বীর যোদ্ধাদের সবাই ভুলে না।
মাগফেরা খাতুন রুমা লিখেন, কোথায় যাচ্ছেন? আপনাকে সুন্দর লাগছে।
নার্গিস রহমান লিখেন, না না ভাইয়া, আপনি ভুলার মানুষ নয়। আপনি বাংলার সম্পদ। আপনার সুর ও গীতিকার আমাদের মনের খাবার যোগায়।
ফজলুল হক লিখেন, বুলবুল ভাই, আপনাকে কি ভুলা যায়! আপনি বাংলার গানের বুলবুল, আপনি স্বাধীন দেশের গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা। যতদিন লাল সবুজের পতাকা থাকবে, আপনিও ততদিন সবার হৃদয়ে চিরজীবী থাকবেন।
ডা. রওনক আফরোজ কমেন্টে লিখেন, কী যে বলেন না! সুরের আকাশ থেকে যুদ্ধের মাঠ....ভুলে যাওয়া সম্ভব? যে ভুলবে সে হতভাগাকে ভুলতে দেন!
অনামিকা আনিসা লিখেন, আপনি আছেন এদেশে প্রতিটি মানুষের অন্তরে, তাই আপনাকে ভুলে যাওয়া কখনো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়, আপনাকে ভুলে যাওয়া মানে তো নিজেকেই ভুলে যাওয়া
জালাল মুন্না কমেন্টে লিখেন, সালাম গুরুজি, আপনি মানে বাংলায় সুস্থ সংগীত, এ সুস্থ সংগীত যেমন আমাদের রক্তে রক্তে তেমনি আপনার নাম আমাদের রক্তে আর রক্ত ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচেনা তেমনি আপনাকে ছাড়া আমাদের মৃত্যুর সমান।
সাহেরা খাতুন বেলা লিখেন, হৃদয়ে বাংলাদেশ, হাতে সবুজ পাসপোর্ট, এই আমাদের বুলবুল ভাই। রক্তে সব কালজয়ী গান। এই বুলবুল ভাইকে যে না চিনে, সে বাঙালি হতে পারে না।
নাসরিন ইব্রাহীম রেজা লিখেন, সব কটা জানালা খুলে দাও না। আমি গাইবো গাইবো বিজয়েরই গান। ওরা আসবে চুপিচুপি। আপনাকে কী করে ভুলি। আমার সে কথা জানা নেই। আপনি কি শিখাতে পারেন কী করে ভুলতে হয়?
প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দেশের একজন সংগীত ব্যক্তিত্ব। একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। ১৯৭০ দশকের শেষ লগ্ন থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পসহ সংগীতশিল্পে সক্রিয় ছিলেন।
তিনি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭৮ সালে মেঘ বিজলী বাদল ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তিনি স্বাধীনভাবে গানের অ্যালবাম তৈরি করেছেন এবং অসংখ্য চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন।
সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আবদুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনক চাঁপাসহ বাংলাদেশি প্রায় সব জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল নিয়মিত গান করেন ১৯৭৬ সাল থেকে।
আপনার মন্তব্য