সিলেটটুডে ডেস্ক

৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ২২:২৭

২০১৯ সালে ১৪৯৩ ধর্ষণ

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে তথ্য

ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।

আসকের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে দেশে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৭৬ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন। ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ৭৩২ নারী এবং ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ৮১৮।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে 'বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৯ : আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন আসক কর্মকর্তারা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে আসকের তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

আসকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নিনা গোস্বামী প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, বিদায়ী বছরে ৩৮৮ জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। গুমের অভিযোগের সংখ্যা কিছুটা কমে এলেও বছরজুড়ে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ছিল। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার মধ্যে নারী ধর্ষণ, দল বেঁধে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও হতাহতের ঘটনা অনেক। বছরের মাঝামাঝি ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন অনেক নিরীহ মানুষ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীদের উত্ত্যক্ত করা ও যৌন হয়রানির ঘটনাও বেড়েছে। ২০১৯ সালে ২৫৮ জন নারী যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ৪৪ পুরুষ। উত্ত্যক্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১৮ নারী। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয়েছেন চার নারীসহ ১৭ জন। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে শিশু নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে। ২০১৯-এ শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ ও নিখোঁজের পর মোট ৪৮৭ শিশু নিহত হয়েছে। ২০১৮-তে এ সংখ্যা ছিল ৪১৯। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে এ বছর নিহত হয়েছে ১৮৭ জন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের পর হেফাজতে ১৪ জন মারা যান। গ্রেফতারের আগে নির্যাতনে মারা যান ছয়জন এবং গুলিতে নিহত হয়েছেন আরও ১২জন। এ বছর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ৩৭ জন এবং তাদের শারীরিক নির্যাতনের কারণে ছয় জনসহ ৪৩ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ১৪২ জন সাংবাদিক শারীরিক নির্যাতন, হামলা, হুমকি ও হয়রানির মুখে পড়েন। গত বছর দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ৭২টি প্রতিমা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩৯টি বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে আহত হয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫১ ব্যক্তি। বিদায়ী বছরে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গিয়ে শারীরিক-মানসিকসহ নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নারী শ্রমিকরা।

আসক সরকারের কাছে কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো- এ পর্যন্ত সংঘটিত সব গুম, অপহরণ ও 'বিচারবহির্ভূত হত্যা'র অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮-এর প্রয়োজনীয় সংশোধনী, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করতে সহযোগিতা দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন আসকের মহাসচিব তাহমিনা রহমান, নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা, জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত