নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ মার্চ, ২০২০ ১০:৩৮

ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম হলে আমি কিন্তু কাউকে ছাড়ব না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রত্যেকের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া সাহায্য সহযোগিতা পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন। এই কাজে কোনধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি হলে সেটা সহ্য করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি ক্রান্তিকালে এই ভিডিও কনফারেন্স। এরকম পরিস্থিতি বোধহয় আমরা জাতীয় জীবনে আর কখনও দেখিনি।’

দরিদ্র মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথাও বলেন তিনি। সেইসঙ্গে আইনশৃঙখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে কাজ না থাকা মানুষদের কাছে সরকারের দেওয়া সাহায্য সহযোগিতা পৌঁছে দিতে হবে। একজন যেন বারবার না পায়, কেউ যেন বাদ না যায়, প্রত্যেকে যেন এই সহযোগিতা পায়, এটা নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্যে তালিকা করতে হবে। প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের এক্ষেত্রে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, অসহায় মানুষদের অসহায়ত্ব নিয়ে কোন অনিয়ম চলবে না। এই জায়গায় কোন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পেলে আমি কিন্তু কাউকে ছাড়ব না।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকাল ১০টায় গণভবনে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত এই ভিডিও কনফারেন্সে দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। জেলা প্রশাসকদের পাশাপাশি দেশের ৮ বিভাগীয় কমিশনারও এতে যুক্ত আছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মোকাবিলায় দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করাটা জরুরি। আমাদের দেশটা ছোট কিন্তু মানুষ বিশাল। এরপরও আমরা মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছি। সেজন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণ পর্যায়ে রয়েছে।

‘বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নিজের সুরক্ষা নিজেকেই দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিসমূহ মেনে চলতে হবে। এতেই করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।’

সবাইকে ঘরে অবস্থানের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা প্রতিরোধে মানুষের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আপনারা এসব নির্দেশনা মেনে চলুন।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার থাবা রয়ে গেছে। আমরা বিশ্ব থেকে দূরে নই। আমাদের আরও সচেতন থাকা দরকার। আমরা আমাদের দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য অনেক আগে থেকেই কাজ করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে যাতে করোনা না ছড়ায় সেজন্য সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে।

করোনা উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে কোনো লুকোচুরি করার সুযোগ নেই। লুকোচুরি করলে নিজের জীবনকেই ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া। জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। জনকল্যাণে যেসব কাজ করতে হবে তা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আজ যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটা কেবল বাংলাদেশে নয়। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে এই সমস্যাটা রয়েছে। এখানে ধনী-দরিদ্র, দুর্বল কিংবা শক্তিশালী দেশ, উন্নত বা অনুন্নত সবাই এই পরিস্থিতির শিকার। কেউই বাদ যায়নি। এরকম পরিস্থিতি বোধ হয় আমরা জাতীয় জীবনে আর কখনও দেখিনি। অতীতের ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে শত বছরে একবার করে এরকম একটা ধাক্কা আছে।’

জনগণের নিরাপত্তা আমাদের কাছে সবার থেকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করেনা ভাইরাসের কারণে সরকার মুজিববর্ষসহ সব কর্মসূচি স্থগিত করেছে। যাতে মানুষ সমাগম কম হয় তার জন্য এটা করা হয়েছে।’

ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। এতে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত