নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ মে, ২০২১ ০২:২৪

সিলেট-৩ আসনে নির্বাচন: লুৎফুরের প্রার্থী হাবিব, সমালোচনা

সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া সিলেট-৩ আসনে জুলাইয়ে উপ নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন নির্বূাচন কমিশন। এই উপ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতারা আগে থেকেই শুরু করেছেন দৌড়ঝাপ।

রোববার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দিয়েছেন, বিএনপি এই উপনির্বাচনে অংশ নেবে না। বিএনপিবিহীন এই উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে রীতিমত হুড়াহুড়ি লেগে গেছে। অন্তত এক ডজন নেতা ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

কে হতে পারেন নৌকার প্রার্থী এই নিয়ে আলোচনার মধ্যে সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট মো. লুৎফুর রহমান নিজের পছন্দের প্রার্থীর নাম ঘোষশণা করেছেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব এই আসনে তার পছন্দের প্রাথৃী বলে জানিয়েছেন লুৎফুর।

দলীয় একাধিক প্রার্থী সিলেট-৩ আসনের মাঠে সরব থাকলেও জেলা সভাপতি এককভাবে একজননের প্রতি নিজের পক্ষপাত প্রকাশ করায় দলীয় ফোরামে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার দুপুরে দক্ষিণ সুরমায় হাবিবুর রহমান হাবিবের উদ্যোগে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে গিয়ে হাবিবের প্রতি নিজের সমর্থনের কথা প্রকাশ্যে জানান লুৎফুর রহমান।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিবুর রহমান হাবিবকে এ আসনে মনোনয়ন দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ করেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মো. লুৎফুর রহমান

এই আসনে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন প্রয়াত সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীও। এছাড়াও আরও ডজনখানেক নেতা নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী। এই অবস্থায় দলীয় সভাপতি হিসেবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান একজনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অন্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির উদ্দিন বলেন, দলীয় সভাপতি আমাদের সবার মুরব্বী। তবে বিভ্রান্ত করে এমন বক্তব্য দেওয়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, যিনি নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পাবেন আমরা তার সাথেই আছি।

জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ শমশের জামাল বলেন, সিলেটের জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান যে বক্তব্য রেখেছেন তা আবেগ থেকে দিয়েছেন বলে আমি মনে করছি। দলীয় ফোরামে এখন পর্যন্ত সিলেট-৩ আসন উপ নির্বাচন নিয়ে কোন বৈঠক হয়নি। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেই মনোনয়ন পাবে আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। আওয়ামী লীগ থেকে যারা মনোনয়ন চাচ্ছেন সকলেই যোগ্য প্রার্থী। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে তার সাথেই কাজ করবেন।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোহাম্মদ আবু জাহিদ বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির বক্তব্য দলীয় বক্তব্য নয়, এটা উনার আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তির পক্ষে ব্যক্তিগত বক্তব্য বলে আমি মনে করি।

উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান ২ ডজন নেতা। এদের মধ্যে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির রয়েছেন ৬ জন নেতা। তাই সভাপতি হিসেবে সরাসরি কারও পক্ষে অবস্থান নেয়া নিয়ে সমালোচনায় পড়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মো. লুৎফুর রহমান।

সাবেক ছাত্রনেতা মিসবাহ উদ্দীন সিরাজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। এডভোকেট নিজাম উদ্দিন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাকুর রহমান মফুর বর্তমানে বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

এছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির উদ্দিন, জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ শমশের জামাল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোহাম্মদ আবু জাহিদ, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুল বাছিত টুটুল, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এডভোকেট বদরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক দুলাল, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, সাংবাদিক শাহ্ মুজিবুর রহমান জকন, সহকারী অ্যাটর্নী জেনারেল আাব্দুর রকিব মন্টু, স্যার এনামুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন।

সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও সিলেট জেলা দায়রা জজ আদালতের পিপি নিজাম উদ্দিন বলেন, এডভোকেট লুৎফুর রহমান শুধু জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নন, জেলার একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদও বটে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে উনার কথাব লা উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ উনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তি। একজনের পক্ষ নেওয়ায় অনেকেই উনার প্রতি বিরাগভাজন হতে পারেন। যা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত