নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ নভেম্বর, ২০২২ ১৭:১৮

সমাবেশ সফলে বিভেদ ভুলে সিলেট বিএনপিতে ঐক্য

বৃহস্পতিবার সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে পাশাপাশি বসা বিএনপির বিরোধী বলয়ের দুই নেতা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী

দীর্ঘদিন ধরেই দুই ধারায় বিভক্ত সিলেট বিএনপি। আগে বিভক্তি ছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীর নামে। সাইফুর রহমান ২০০৯ সালে প্রয়াত হয়েছেন আর ইলিয়াস আলী ২০১২ সাল থেকে নিখোঁজ।

তাদের দীর্ঘ অনুপস্থিতিতেও বিভেদ ঘুচেনি দলটির। এখনও সিলেট বিএনপি দুই ধারায় বিভক্ত। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নেতৃত্বে রয়েছে এই দুই বলয়ের। সাম্প্রতিক সময়ে সকল দলীয় কর্মকাণ্ডে এই দুই নেতা ও তাদের অনুসারীদের বিপরীতমুখী অবস্থানে দেখা গেছে।

তবে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে দীর্ঘদিনের এই বিভেদ ভুলে সিলেট বিএনপিতে এখন ঐক্যের সুর। দলের সব পর্যায়ের নেতারাই মাসখানেক ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাবেশের প্রচার চালাচ্ছেন। প্রচার কার্যক্রমের শুরু থেকেই সক্রিয় রয়েছেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির আর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে চলতি সপ্তাহে সমাবেশের প্রচার কার্যক্রমে সক্রিয় হয়েছেন।

সমাবেশ সফলে গঠিত ছয়টি উপকমিটির মধ্যে দুটির আহ্বায়কেরও দায়িত্বে রয়েছেন এই দুই নেতা। পারস্পরিক বিরোধ থাকলেও তাদের দুজনকে একসঙ্গেও সমাবেশের প্রচার ও প্রস্তুতির কার্যক্রমেও দেখা গেছে। বৃহস্পতিবারও সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মুক্তাদির ও আরিফকে পাশাপাশি বসে শলাপরামর্শ করতে দেখা গেছে।

সিলেটের বিএনপি নেতারা জানান, কেবল দুই নেতার মধ্যেই নয়, সিলেটে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অন্তকোন্দল রয়েছে। তবে এই সমাবেশের জন্য এসব বিভেদ ভুলে তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করছেন।

জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, সকল বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে বিভাগীয় সমাবেশ সফলে কাজ করার জন্য কেন্দ্র থেকে সিলেটের নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রিয় শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে একটি দল সিলেটে অবস্থান করে প্রস্তুতি ও প্রচার কার্যক্রম তদারকি করছেন। এছাড়া ঢাকায় বসে শীর্ষ নেতারা এমনকি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনও সব কার্যক্রম তদারকি করছেন। ফলে পারস্পরিক সকল বিরোধ ও বিভেদ আপাতত দূরে রেখে সব নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছেন।

এই নেতারা জানান, অন্য বিভাগীয় সমাবেশে ও সিলেটে সমাবেশের পক্ষে মানুষের বিপুল সাড়া পেয়েও নেতারা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। ফলে আন্তঃকোন্দল ভুলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এক কাতারে মাঠে নেমেছেন তারা।

সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সর্বশেষ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল আহাদ খান জামাল বলেন, বিএনপিতে কোন কোন্দল নেই। বড় দল হওয়ায় নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। তিনি বলেন, ছোটখাটো কিছু বিভেদ থাকলেও দল ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ। এই সরকারের পতন দাবিতে কারো মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। ফলে এই আন্দোলনে সব নেতাই সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন।

বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, সাইফুর রহমানের প্রয়াণ ও এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর সিলেটে বিএনপির একক নেতা হয়ে ওঠেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। যুক্তরাজ্য ঘনিষ্ঠতা তাকে আরও ক্ষমতাবান করে তোলে। এর ফলে বিএনপি ছাত্রদল, যুবদল থেকে শুরু করে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে তার অনুসারী নেতাদেরই ছিল দাপট।

তবে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দলের মধ্যে নিজেকে শক্তিশালী করে তুলতে শুরু করেন আরিফ। এ থেকে মুক্তাদিরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে তার। গত সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে মুক্তাদির বিএনপির মনোনয়ন চাইলেও আরিফুল হক চৌধুরী ছিলেন প্রবীন নেতা ইনাম আহমদ চৌধুরীর পক্ষে।

মুক্তাদিরকে ঠেকাতে সাবেক আমলা ইনাম আহমদকে আরিফই মাঠে নামান বলে দলের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। যদিও সেবার দলীয় মনোনয়ন পান খন্দকার মুক্তাদির। আর মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগের যোগ দেন প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী।

তবে এরপর থেকে মুক্তাদির ও আরিফের দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনে দুই বলয় থেকেই আলাদা আলাদা প্রার্থী দিতে দেখা গেছে।

তবে ক্রমেই দূরে সরে যাওয়া এই দুই নেতা বিভাগীয় গণসমাবেশের ছুঁতোয় এককাতারে নেমে এসেছেন।

তবে দলের বিরোধ নেই জানিয়ে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা আছে। তাই যে কেউ প্রার্থী হতে পারে। প্রার্থী দিতে পারে। আর কর্মীরা ভিন্ন ভিন্ন নেতাকেও পছন্দ করতে পারে। এটা বিরোধ নয়। আর ছোটখাটো সমস্যা থাকলেও এগুলো ভুলে আমরা সবাই সমাবেশ সফলে মাঠে নেমেছি। শনিবার সিলেটকে জনসমুদ্রে পরিণত করাই আমাদের লক্ষ্য।

এ ব্যাপারে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, বড় দলের ভেতরে মতানৈক্য-মতবিরোধ থাকবেই। এটাই রাজনীতির সৌন্দর্য। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে সব মতানৈক্য ভুলে আমরা এই অবৈধ সরকার পতনের লড়াইয়ে নেমেছি। জনগণকে ভোটাধিকার, জীবনের নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেয়ার লড়াইয়ে নেমেছি। এসব বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত