নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ২০:৪৬

বিএনপিকে এখন সামলাতে হচ্ছে ‘আসল’ বিএনপিকেও

এমনিতেই দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো না, একই সঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি- এমন পরিস্থিতিতে কামরুল হাসান নাসিমের নেতৃত্বাধীন 'আসল বিএনপি' নামক এক সংগঠনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলের চেষ্টার পর বিএনপিকে এখন সামলাতে হচ্ছে তাদেরকেও। 

গত কয়েক মাস ধরে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির প্রতি অভিযোগ ও দোষারোপের তীর ছুঁড়তে থাকা ‘আসল বিএনপি’ নামের এক সংগঠন এবার খানিকটা আগ্রাসী ভূমিকায় নেমেছে। গত শনিবার নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কার্যালয় দখল করতে গিয়ে ধাওয়া খেয়েছে ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীদের দ্বারা।

কামরুল হাসান নাসিম নামের জনৈক ব্যক্তি এ সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিএনপির অভিযোগ সরকারের মদদে ‘আসল বিএনপি’ নামের এ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ। তারা আশঙ্কা করছেন কার্যালয় দখলের চেষ্টা হতে পারে। এজন্যে রোববার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে পাহারাও বসিয়েছিলেন তারা।

জানা যায়, নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী রোববার সকাল থেকেই ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের নেতৃত্বে সংগঠনটির তিন শতাধিক নেতাকর্মী কার্যালয় ও অবস্থান করছিলেন। ‘আসল বিএনপি’ নামের এক দখল করতে গেলে তাদের প্রতিরোধ ছিল লক্ষ্য।

এদিকে, কামরুল হাসান নাসিম রোববার দুপুরে সংবাদমাধ্যমকে বলেন,‘পাহারা দিয়ে বিএনপি কার্যালয় রক্ষা করা যাবে না, আমাদের মা খালেদা জিয়াকে দলীয় চেয়ারপারসনের পদে রাখা যাবে না। বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যেকোনো মুহূর্তে দলীয় বিপ্লব ঘটানো হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী জনতার নিম্ন আদালতের রায় অনুযায়ী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী জনতার উচ্চ আদালত বসানো হবেই। সেটি যেকোনো সময় হতে পারে’।

এর আগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘জাতীয়তাবাদী জনতার নিম্ন আদালত’ বসান আসল বিএনপির নেতা কামরুল হাসান নাসিম। ওই আদালত থেকে বিএনপি পুনর্গঠনের জন্য দলটির গঠনতন্ত্র (সংবিধান) অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়। একইসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘জাতীয়তাবাদী জনতার উচ্চ আদালত’ বসানোর ঘোষণা দেয়া হয়।

কে এই নাসিম?
কামরুল হাসান নাসিম প্রথমে আলোচনায় আসেন ২০১০ সালে ‘গড়বো বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে। বিএনপির প্রয়াত নেতা ওবায়েদুর রহমানের স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদ এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এমন শুনা গেলেও নাসিম নিজেকে এর প্রতিষ্ঠাতা মুখপাত্র দাবি করেছেন।

জননেতা ডটনেট নামে একটি অনলাইন নিউজপোর্টালের এডিটর ইন চিফ নাসিম। সেই সুবাদে নিজেকে সাংবাদিক ও গবেষক পরিচয় দেন। ২০১২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার স্পেশাল এডিটর (বিশেষ সম্পাদক) ছিলেন। 

সম্প্রতি বিএনপির ক্রান্তিকালীন রাজনীতির ‘মুখপাত্র’ দাবি করে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত ‘আসল’ বিএনপি গড়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি। নিজেকে কৃষক দলের সদস্য বলেও দাবি করেছেন।

তাঁর দাবি, তিনি খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ ইস্কান্দারের মালিকানাধীন ইসলামিক টিভির ‘লাল সবুজের বাংলাদেশ’ টকশো অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন। চ্যানেলটির সম্প্রচার বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি যশোর থেকে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু জোটের স্বার্থে আসনটি জামায়াতকে দেয়া হয়। এরপর ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে তিনি রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।

২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘গড়বো বাংলাদেশ বিপ্লবী সংগঠন’ সংবাদ সম্মেলন করে দুই নেত্রীর অবসর দাবি করে। সেবছর ২১ ফেব্রুয়ারিতেই তাদের অবসরের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। এসময় এ সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে কথা বলেন কামরুল হাসান নাসিম। সে সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- প্রফেসর ড. শাহেদা ওবায়েদ, সংগঠনের সদস্য মহিবুল আলম লিটন, শামসুল আলম, অ্যাড. আবুল খায়ের প্রমুখ।

এর আগে ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর পল্টন ময়দানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় গড়বো বাংলাদেশ। এ নিয়ে সারা ঢাকায় রঙিন পোস্টারও ছাপা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সমাবেশ হয়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত