ডেস্ক রিপোর্ট

০৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৯:৩০

গণজাগরণ মঞ্চের গণসমাবেশ কর্মসূচি পালন

পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশের কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সকল কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধের দাবিতে শাহবাগে গণসমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।

আজ শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হবার পর যখনই কোনো যুদ্ধাপরাধীর বিচারিক রায় কার্যকর হচ্ছে, তখনই পাকিস্তান নড়েচড়ে বসছে। সাথে সাথে বাংলাদেশের ভেতরে যারা পাকিস্তানের দোসর, যুদ্ধাপরাধীদের দোসর, তারাও নড়াচড়া শুরু করছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটা চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর রায় কার্যকর করার ঠিক আগেরদিন ব্যর্থরাষ্ট্র, উপমহাদেশের বিষফোঁড়া পাকিস্তান বাংলাদেশের কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে বহিষ্কার করেছে।

বাংলাদেশে পাকিস্তানের যে কূটনীতিক জঙ্গী অর্থায়নের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে, পাকিস্তান সেই কূটনীতিককে ভিয়েনা কনভেনশনের ইমিউনিটির সুযোগে পাকিস্তান নিয়ে গেল। বাংলাদেশ সরকার এবং পররাষ্ট্র দপ্তর সেই কূটনীতিকের অপরাধের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে। অথচ মৌসুমী রহমানকে কেন পাকিস্তান বহিষ্কার করলো, তার কোনোরকম ব্যাখ্যা তারা দেয়নি। অথচ এই ব্যাখ্যা দেয়াটা কূটনৈতিক নিয়মের মধ্যে পড়ে, এটাই ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী আইন। তারা সেই আইনের কোনো তোয়াক্কা করেনি। কূটনৈতিক সম্পর্কের কোনো তোয়াক্কা তারা করছে না”।

তিনি বলেন, “পাকিস্তান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একের পর এক বিভ্রান্তিমূলক ও কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে জোর দাবি উঠেছে পাকিস্তানের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। পাকিস্তানের সাথে ততক্ষণ কোনো সম্পর্ক রাখা যাবে না, যতক্ষণ তারা বাংলাদেশের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা না করে, যতক্ষণ তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দেয়া বন্ধ না করে, যতক্ষণ পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের যে পাওনা রয়েছে, সেই পাওনা দিয়ে ক্ষতিপূরণ প্রদান না করে”।

বাংলাদেশের কূটনীতিককে বহিষ্কার পরিষ্কারভাবেই পাকিস্তানের একটি কূটনৈতিক উস্কানি এবং ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ। একইরকম ধৃষ্টতা তারা দেখিয়েছিলো একাত্তরে, ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে, আড়াই লক্ষ নারীর সম্ভ্রমহানি করে। মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে সেই ধৃষ্টতার জবাব দিয়েছেন। আবারও পাকিস্তান বাংলাদেশের আত্মমর্যাদাকে অপমান করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।

সরকারের প্রতি পাকিস্তানের ধৃষ্টতার জবাব দেবার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের এখনই পাকিস্তানের এই ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার প্রশ্নে শক্ত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে, আত্মমর্যাদার প্রশ্নে কোনোরকম আপোষের সুযোগ নেই। যে রাষ্ট্রই বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার চেষ্টা করবে, তাকে ক্ষমা করার কোনো সুযোগ সরকারের নেই।

পাকিস্তান এবারই প্রথমবার না, ২০১৩ সালে কাদের মোল্লার রায় কার্যকরের পরেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছিলো। পাকিস্তানের আদালত থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনার দুঃসাহস তারা দেখিয়েছিলো। বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় কাকে ফাঁসি দেয়া হবে, কাকে যাবজ্জীবন দেয়া হবে আর কাকে দশ বছর সাজা দেয়া হবে সেটা দেখবার এখতিয়ার পাকিস্তানের নেই, যুক্তরাষ্ট্রের নেই, কোনো রাষ্ট্রেরই নেই। এটা বাংলাদেশের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। তারপরেও সরকার পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেনি, যে জবাব দিয়েছে, আমরা মনে করি সেটি উপযুক্ত জবাব হয়নি”।

আবারও পাকিস্তান হাইকমিশন ঘেরাও করার কর্মসূচি দেয়া হতে পারে বলে জানান ইমরান এইচ সরকার।

তিনি বলেন, “আজকে পাকিস্তানকে কঠোর জবাব দিয়ে সরকারকে জানান দিতে হবে, আত্মমর্যাদার প্রশ্নে কোনো আপোষ তারা করবে না। আপনারা জানেন, ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর আমরা পাকিস্তানের হাইকমিশন ঘেরাও করেছিলাম। আজকে সরকার যদি পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাদের আবারও আরো কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতে হবে।

আমি সরকারকে জানান দিতে চাই, সরকার কঠোর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের হাইকমিশন ঘেরাও করে সকল পাকিস্তানি কূটনীতিককে আটক করে পাকিস্তানি ফ্লাইটে করে পাকিস্তান ফেরত পাঠাবে”।

মুক্তিযুদ্ধ, ত্রিশ লক্ষ শহিদ এবং জাতির জনকের প্রশ্নে কোনো আপোষ চলবে না উল্লেখ করে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিক যদি এসব ব্যাপারে বিভ্রান্তি তৈরি করে, তাহলেও তাদের ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষ এসব প্রশ্নে কোনো আপোষ মেনে নেবে না”।

সরকারকে ৭২ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়ে তিনি বলেন, “ ৭২ ঘন্টার মধ্যে সরকার পাকিস্তানের কূটনীতিকদের ফেরত পাঠিয়ে উপযুক্ত জবাব না দিলে আবারও পাকিস্তান হাইমকমিশন ঘেরাও এবং পাকিস্তানি পণ্য বর্জনের কর্মসূচি দেয়া হবে। এবারও যদি ২০১৩ সালের মতো আঘাত আসে, তাহলে সেই আঘাত উপেক্ষা করেই পাকিস্তানের হাইকমিশন ঘেরাও করা হবে”।

গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মারুফ রসূলের সঞ্চালনায় গনসমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামশেদ আনোয়ার তপন, ভাস্কর রাশা, মুক্তা বাড়ুই প্রমুখ।

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত