নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ মার্চ, ২০১৬ ০০:৩৭

আজাদ-রনজিতের বিরোধের ‘বলি’ সিলেট জেলা ছাত্রলীগ

মহানগর আওয়ামীলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ আর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এডভোকেট রনজিত সরকার। দু'জনেরই উত্থান ছাত্র রাজনীতিতে থেকে। ছাত্রলীগের টিলাগড় কেন্দ্রীক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন এই দুই নেতা। এই দু'জনের নামেই পরিচিত ছাত্রলীগের এই অংশটি।

দীর্ঘদিন থেকেই ‌একসাথে থেকে গ্রুপ পরিচালনা করেছেন এই দুইনেতা। দু'জন 'ঐক্যবদ্ধ'ভাবে গড়ে তুলেছেন সিলেটে ছাত্রলীগের নিজস্ব বলয়।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধ দেখা দেয় এই দুই নেতার মধ্যে। প্রকাশ্যে এখন পর্যন্ত তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে কিছু না বললেও ছাত্রলীগের আধিপত্য নিয়ে এই দুই নেতার বিরোধ এখন অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।

ফলে আজাদ-রনজিত এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে সৌহার্দ্য বজায় রেখে চললেও তাদের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ-সংঘাত এখন নিত্তনৈমেত্তিক। টিলাগড় এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে প্রায় প্রতিদিনই সংঘাতে জড়াচ্ছে আজাদ-রনজিতের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে ঘটছে অস্ত্রবাজি-ভাংচুর হতাহতের ঘটনা। ত্রাস সৃস্টি হচ্ছে টিলাগড় এলাকা ও আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। টিলাগড় কেন্দ্রীক সংঘাত-সহিংসতার কারণেই শুক্রবার স্থগিত ঘোষনা করা হলো ছাত্রলীগের কমিটি। এই দুই নেতার বিরোধের বলি হয়েই জেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হলো বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের পর প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনও জানিয়েছেন, সিলেট নগরীর টিলাগড় ও এমসি কলেজে সংঘর্ষ-গোলাগুলিসহ সংঘটন বিরোধী কর্মকান্ডের কারনে ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের কেন্দ্র থেকে শোকজ করাও হবে বলে জানান জাকির।

জানা যায়, আজাদ-রনজিতের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ অনেকদিন থেকেই চলে আসছিলো। এই বিবাদে একাধিকবার সংঘাতের ঘটনাও ঘটে। সর্বশেষ সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন আজাদুর রহমান আজাদ অনুসারী অনুসালি রায়হান চৌধুরী। এতে ক্ষুব্দ হন রনজিত অনুসারীরা। জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও আজাদ অনুসারীরা আধিপত্য ধরে রাখেন।

এই পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিরোদ্ধে আন্দোলনে নামেন বিদ্রোহীরা। এই আন্দোলনেরও নেতৃতে ছিলেন রনজিত অনুসারী ছাত্রলীগ নেতারা। কমিটিতে কোণঠাসা হয়েও টিলাগড় ও এই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন রনজিত অনুসারী ছাত্রলীগ নেতারা। যাঁর নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরন মাহমুদ নিপু। অপরদিকে রাহয়ান চৌধুরীর নেতৃত্বে আজাদ অনুসারীরাও আধিপত্য বজায় রাখতে মাঠে নামেন। এই আধিপত্যের লড়াই থেকে একের পর এক সংঘাত সহিংসতার ঘটনা ঘটতে থাকে।

সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কমিটি নিয়েও সংঘাতে জড়ায় এই দুই গ্রুপ। ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপের এই বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সহিংসতার সম্প্রতিক সময়ে বারবার ওঠে এসেছে মিডিয়ায়। কমিটির স্থগিতের ঘোষনার দিনও সংঘাতে জড়িয়েছে টিলাগড়ের বিবাদমান এই দুই গ্রুপ। এম.সি কলেজ ও সিলেট সরকারী কলেজেও ঘটেছে একাধিক সংঘাত।

সম্প্রতি বেশ ক’টি বিতর্কিত আর সংগঠনবিরোধী ঘটনা ঘটেছে টিলাগড়ে। দিনদুপুরে মারামারি, গোলাগৃুলি, অস্ত্রের প্রদর্শন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলাসহ একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। টিলাগড়ে একটি সংঘর্ষের ঘটনায় এই অঞ্চলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত জেলা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে সাময়িক বহিস্কারও করা হয়। তাঁরা সকলেই রনজিত বলয়ের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এমসি কলেজেও অতিসম্প্রতি দিনদুপুরে ছাত্রলীগের প্রকাশ্য অস্ত্রবাজি ও কর্মীদের হামলা-পাল্টাহামলার ঘটনা ঘটে। এতে আহতও হয় অনেকে। এ ঘটনার তদন্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কয়েকজন একটি প্রতিনিধিদল সিলেট আসে। ঘটনার ব্যাপারে এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মহলের সাথে কথা বলে প্রতিনিধিদলে সদস্যরা ঢাকায় যান। তাদের তদন্তে ওঠে আসে টিলাগড়ে সংঘটিত একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার সাথে জড়িত বেশ কয়েকজন ছ্ত্রালীগ নেতার নাম -যারা জেলা ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে রয়েছেন।

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতেই স্থগিত করা্ হয় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি।

তবে রনজিত অনুসারী ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করেছেন, আজাদ-রনজিত বিরোধ নয়, বরং সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরীর সংগঠনিরোধী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণেই স্থগিত হয়েছে কমিটি।

আর আজাদ অনুসারীদের দাবি, ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠির সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে কমিটি সাময়িকভাবে স্থগিত হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত