সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ মার্চ, ২০১৬ ০২:৫৩

পুলিশও জানে না কী কারণে তারেকের ইন্টারপোল রেড অ্যালার্ট বাতিল

বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতর থেকে সোমবার (২৮ মার্চ) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে তারেক রহমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবির মাধ্যমে ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষের কাছে 'বিভ্রান্তিকর তথ্য' উপস্থাপন করে রেড অ্যালার্ট নোটিশ বাতিল করিয়েছেন।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)-এর ওয়ান্টেড তালিকা থেকে কী কারণে তারেক রহমানের নামটি সরিয়ে নিয়েছে, তার ‘সন্তোষজনক’ ব্যাখ্যা সংস্থাটি থেকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রেড অ্যালার্ট জারি করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা-ইন্টারপোলকে অনুরোধ জানায় বাংলাদেশের পুলিশ।

২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলাসহ অন্যান্য ১৩ মামলায় চার্জশিটভুক্ত হওয়ায় এ আবেদন জানানো হয়। এ সংক্রান্ত তথ্য ও দলিল বিশ্লেষণ করে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল।

নোটিশটি রিভিউ করার পর্যায়ে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ বিভাগ।

“রেড অ্যালার্ট প্রত্যাহার করার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, তারেক রহমান প্রটেকটিভ স্ট্যাটাস-এ আছে বলেই তার রেড নোটিস বাতিল করার সুযোগ রয়েছে।”

কে বা কোন দেশ তাকে প্রটেকটিভ স্ট্যাটাস দিয়েছে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে ইন্টারপোল থেকে কোনো সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যায়নি বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধারণা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার মতো প্রটেকটিভ স্ট্যাটাসও বিদেশে আশ্রয় গ্রহণের আরেকটি পথ। তারেক রহমান একাধিক ফৌজদারি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি, যা আদালতে বিচারাধীন। তা সত্ত্বেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জারি করা রেড অ্যালার্ট নোটিশ কী কারণে প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।

ইন্টারপোলের সঙ্গে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশ যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে এতে আরও বলা হয়, যে মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের নোটিশ জারি করা হয়েছিল, তা রাজনৈতিক মামলা নয়।

খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলায় হুলিয়া জারির পর তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি হয়।

তারেকের বাংলাদেশি পাসপোর্ট মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর তা নবায়ন করা হয়নি বলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো ইতোপূর্বে জানিয়েছিল।  

ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা মনে করছে, লন্ডনে থেকে তারেক বিভিন্ন লবির মাধ্যমে কমিশন ফর দি কনট্রোল অব ইন্টারপোল ফাইলসের (সিসিএফ) কাছে বিকৃত ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করে রেড নোটিসটি বাতিল করিয়েছেন।

২০০৪ সালে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় ২২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তারেকের বিরুদ্ধে মামলাটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক নয় দাবি করে পুলিশ বলেছে, বিচারাধীন মামলার পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার বিষয়ে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়ে থাকে।

পুলিশ সদর দফতর বলছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ অনেক ব্যক্তিকে প্রটেকটিভ স্ট্যাটাস বা রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে থাকে। সাধারণত যেসব দেশ মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় বা প্রটেকটিভ স্ট্যাটাস পাওয়ার সুযোগ বেশি। অনুরূপ স্ট্যাটাস কোনোভাবেই বাংলাদেশে ফৌজদারি মামলায় চার্জশিটভুক্ত, পলাতক ও বিচারাধীন কোনো আসামিকে তার দেশে ফৌজদারি অপরাধের দায় থেকে অব্যাহতি দেয় না। একইভাবে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট নোটিশ প্রত্যাহারের বিষয়টি কোনোভাবে ফৌজদারি অপরাধ থেকে দায়মুক্তির মানদণ্ড বলে বিবেচিত নয়।

এর আগে রোববার (২৭ মার্চ) রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় গণমাধ্যম তার বক্তব্য প্রচার করতে পারছে না। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এবার ইন্টারপোলের সেই রেড অ্যালার্ট প্রত্যাহারের পর নতুন করে এ বিষয়গুলো নিয়ে আইনি লড়াই হবে। তারেক রহমানকে পলাতক দেখিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পুলিশ যেসব তথ্য পাঠিয়েছে, ইন্টারপোল তার 'সত্যতা' খুঁজে পায়নি। তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা এরইমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত