সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ জুন, ২০১৬ ০১:৫১

আওয়ামী লীগে ‘বিস্ময়’!

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণত কম কথা বলেন, যা বলেন মেপে বলেন। কিন্তু প্রায় হঠাৎ করে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে তিনি যে ভাষায় ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদকে তুলোধোনা করেছেন, তাতে তার দলের ভেতরেই বিস্ময় তৈরি হয়েছে।

ঐ অনুষ্ঠানে সৈয়দ আশরাফ বলেন, জাসদ শেখ মুজিব হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছিলো। সরকারে জাসদের একজনকে মন্ত্রী করার জন্য আওয়ামী লীগকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে, এমন মন্তব্যেও করেন তিনি ।

সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য নিয়ে মঙ্গলবার দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বিবিসির কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত তিনজন সিনিয়র মন্ত্রী বলেন, তারা বুঝতে পারছেন না সৈয়দ আশরাফ কেন হঠাৎ করে জাসদের বিরুদ্ধে এ ধরনের বিষোদগার। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ঐ বক্তব্য ব্যক্তিগত, কারণ দলের কোন পর্যায়েই জোটের শরিকদের নিয়ে সম্প্রতি কোনো আলোচনা হয়নি।

গত বছরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাসদ সম্পর্কে একই ধরণের মন্তব্য করেছিলেন। তখন অনেকে বলেছিলেন, ঐ নেতা মন্ত্রী হতে পারেনি তাই রাগ ঝাড়ছেন। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদকের সোমবারের বক্তব্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

জাসদ নেতা এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে লক্ষ্য করে সৈয়দ আশরাফের বিষোদগারের করলেও  জবাব দেন নি ইনু। তবে তার দলের অন্য নেতারা বলেছেন, এমন মন্তব্য ১৪দলীয় জোটের ঐক্য বিনষ্ট করতে পারে। জাসদের এই অংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার বলেছেন, দেশে যখন সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র এবং জঙ্গিদের গুপ্তহত্যার ঘটনা যখন চলছে, তখন জোটের ঐক্য রক্ষায় সকলের দায়িত্ব রয়েছে।

সিনিয়র মন্ত্রীদের অনেকেও স্বীকার করেছেন, তারা কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোন ইঙ্গিত আছে কিনা, এমন আলোচনাও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিবিসিকে বলেন, এটা ক্ষমতা ভাগাভাগির বা নির্বাচনের জোট নয়। ১৪দলীয় জোট আদর্শিক জোট। শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা স্থাপন করেই এই জোট দীর্ঘসময় ধরে কাজ করছে। সেকারণে (সৈয়দ আশরাফের) এমন মন্তব্য দু:খজনক। এ ধরণের মন্তব্য না করলেই ভাল হতো।

শরিক দলের মন্ত্রী হলেও হাসানুল হক ইনু সরকারের ভূমিকা কার্যক্রমের সমর্থনে অপেক্ষাকৃত সরব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত দুজন মন্ত্রী বিবিসির কাছে বলেছেন, হাসানুল হক ইনুর এই মুখপাত্রের ভূমিকা সরকার এবং আওয়ামী লীগের একটি অংশ পছন্দ করেনা।

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক ফোরাম সহ পেশাজীবী সংগঠনগুলোতেও জাসদ বা বামপন্থীদের একটা প্রভাব রয়েছে। সরাসরি আওয়ামী লীগ করে আসা পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে জাসদকে চাপে রাখার এক ধরণের কৌশল থেকেও আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ অতীত টেনে আনতে পারেন বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন।  বিবিসি বাংলা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত