নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ অক্টোবর, ২০১৬ ২১:৩১

“দেশের প্রত্যেকটি আন্দোলনের সূচনা করেছে সিপিবি”

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সিলেট জেলা সম্মেলনে কমরেড মনজুরুল আহসান

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি কমরেড মনজুরুল আহসান খান বলেছেন, “যতদিন পর্যন্ত শোষণ বঞ্চনা থাকবে ততদিন পর্যন্ত লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। পার্টিকে সঠিক পথে রাখার জন্য সকল কমরেডকে সতর্ক থাকতে হবে। যেখানে অত্যাচার নির্যাতন সেখানে কমিউনিস্টরা উল্কার বেগে ছুটে যাবে। দেশের প্রত্যেকটি আন্দোলনের সূচনা করেছে কমিউনিস্ট পার্টি। তেভাগা আন্দোলন, নানকার বিদ্রোহ, ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির বিশাল ভূমিকা রয়েছে”।

শনিবার (১ অক্টোবর) বিকেলে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা শাখার একাদশ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল ইসলাম খোকার সভাপতিত্বে আয়োজিত জেলা সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় সদস্য শাহরিয়ার মো. ফিরোজ, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ডা. বীরেন্দ্র চন্দ্র দেব, কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলার সাবেক সভাপতি বেদানন্দ ভট্টাচার্য, উদীচী সিলেটের সভাপতি একে শেরাম, খেলাঘর সিলেটের সভাপতি তাজুল ইসলাম বাঙ্গালী, সিপিবির বিয়ানীবাজার উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, যুব ইউনিয়ন নেতা নিরঞ্জন দাস খোকন, ইফতেখারুল হক পপলু, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সভাপতি সপ্তর্ষি দাস ও শাবি সভাপতি স্বপন দেবনাথ প্রমুখ।

মনজুরুল আহসান খান আরো বলেন, “জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী পৃথিবীর শতকরা বিশভাগ লোক যাদেরকে বড়লোক বলা চলে তারা শতকরা ৯৬ ভাগ সম্পদের মালিক, আর বাকি চারভাগের মালিক ৮০ ভাগ লোক। বৈষম্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সাম্রাজ্যবাদের হোতা বারাক ওবামাও বলেছে যে একটা পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এমন বৈষম্য সৃষ্টি করে টিকে থাকতে পারে না। শুধু তাই না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছে, আর তাদের অর্থনীতিও এখন বিপর্যয়ের দিকে”।

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে জামায়াতে ইসলামী টেলিভিশনে গৃহযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে ২০১৩ সালের পর থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সমস্ত গণতান্ত্রিক দলগুলো জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের দাবি করেছে কিন্তু জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করা হয় না কারণ জামায়াতকে লালন পালনকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা চায় না। দেশে যখনই জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা হয়, তখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলে আসে”।

বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একজন নেতা ছিলেন জিয়াউর রহমান। তার নেতৃত্বে গঠিত বিএনপি, আর এ দলের নেতৃত্বে রয়েছেন খালেদা জিয়া। অথচ সেই দলটি এখন যুদ্ধাপরাধী বিচারের বিরোধিতা করছে কারণ বিএনপির উপরে এখন জামায়াতে ইসলামী ভর করেছে। এছাড়াও রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতা করছে দলটি”।

বাংলাদেশে বর্তমানে কোন জায়গায় আছে এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “বিএনপি-আওয়ামী লীগ সমস্যার আবর্তে থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারছে না। উন্নয়নের নামে মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে, দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা আগে পুকুর চুরির কথা শুনতাম, এখন দেশে অর্থমন্ত্রীর ভাষায় ‘সাগর চুরি’ হচ্ছে। মন্ত্রীই বলেছেন আমাদের আশেপাশের লোকজনই এসবের সাথে জড়িত”।

বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ ও ফ্যাসিস্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সরকারের দুঃশাসনের ফলে জনজীবনে সংকট বেড়ে গেছে, ফলে বিগত বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়েছে। গ্রামে শহরে যে লুটপাট হচ্ছে, মানুষ তা দেখছে, আর এর ফলই এ ধরণের নির্বাচনী ফলাফল। দেশে রাজনীতি হচ্ছে, কিন্তু রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে”।

দেশের এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টিকে বিকল্প শক্তি হিসেবে দাড়াতে হবে, আর এজন্য সমস্ত মানুষকে দলে টেনে নিতে হবে”।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত