পুরো জানুয়ারি মাস জুড়ে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোট। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে এই আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশাবাদি তারা। কারণ সে সময় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনরত অন্যান্য দলের সাথে সিপিবি-বাসদও যোগ দিতে পারে বলে আশাবাদি তারা।
দল ও জোটের নেতা-কর্মীদের ‘হত্যা-গুম’, গ্রেফতার ও মামলার প্রতিবাদে এবং তাদের মুক্তির দাবিতে বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলায় হরতাল দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া সরকার বিদ্যুত-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করলে ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ দলের বাইরের কয়েকটি দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে চলমান আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
'অবরুদ্ধ' অবস্থা থেকে 'মুক্তি' পেলেও বেগম খালেদা জিয়া সহসা গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় ছাড়ছেন না বলে জানা গেছে। বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি গুলশান থাকছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে- অব্যাহত অবরোধ এবং এর ফাঁকে ফাঁকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে হরতালে গত ১৭ দিনে আন্দোলন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে। দল ও জোটের নেতা-কর্মীরা আশানুরূপভাবে মাঠে না নামলেও এ যাবৎ যা কিছুই ঘটেছে তাতে এক ধরনের ‘সন্তোষ’ রয়েছে শীর্ষ নেতাদের মাঝে। অন্তত পুরো জানুয়ারি জুড়ে এভাবে কর্মসূচি চালিয়ে নিতে পারলে নিজেদের অনুকূলে এর একটি ফল মিলবে বলেও তাদের বিশ্বাস।
তাদের ধারণা, সবকিছু মিলিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও সরকারবিরোধী ক্ষোভ বাড়ছে। একটি পর্যায়ে গিয়ে সাধারণ মানুষও নিজেদের প্রয়োজনেই রাস্তায় নেমে আসতে পারে বলেও ধারণা করছেন তারা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমকে জানান- আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার বিদ্যুত্-গ্যাসের মূল বৃদ্ধি করলে ফেব্রুয়ারি থেকে সাধারণ মানুষও আন্দোলনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন জানাবে। ২০ দলের বাইরেও যেসব দল পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি, সেসব দলের কয়েকটির সঙ্গে ইতোমধ্যে বিএনপি নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে। বিদ্যুত-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে ওই দলগুলোও বিএনপি’র সঙ্গে যুগপত আন্দোলনে নামতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডি সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সিপিবি-বাসদের নেতা-কর্মী-সমর্থকরাও নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বিদ্যুত-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্তায় নামবেন বলে বিএনপি ধারণা করছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং বাসদও (খালেকুজ্জামান) এই ইস্যুতে নিজেদের অবস্থানে থেকেই আন্দোলনমুখর হতে পারে বলেও বিশ্বাস করছে বিএনপি। এর বাইরে একাধিক নাগরিক সংগঠনও এই ইস্যুতে রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে বলেও দলটির ধারণা।
এদিকে, খালেদা জিয়া তার কার্যালয়ে অবস্থান করলেও মূলত তিনি দলের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। টেলিফোনের মাধ্যমে তিনি মাঠ নেতাদের কোনো নির্দেশনা দিচ্ছেন না। টেলিফোনে কথা বললে বা কোনো নির্দেশনা দেয়া হলে সেসব তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে সহজেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছে চলে যাবে ভেবে এই কার্যক্রম থেকে তিনি বিরত থাকছেন।
আপনার মন্তব্য