সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ আগস্ট, ২০১৫ ০১:২৫

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচার হয়নি ১১ বছরেও

সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে সন্ত্রাস তথা বোমাবাজির আশ্রয় নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলার ১১ বছর পূর্তি আজ। গ্রেনেড হামলার এই ১১ বছরে এখনও শেষ হয়নি এর বিচার কাজ।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।

সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। সমাবেশে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিকালে শেখ হাসিনা বক্তব্য শেষ করে নামার মুহূর্তে শুরু হয় গ্রেনেড হামলা। ১৩ থেকে ১৪টি গ্রেনেড সেদিন বিস্ফোরিত হয়েছিল বলে গোয়েন্দারা জানান।

হামলায় রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ নিহত হন ২৪ জন, আহত হন অনেকে। ওই হামলায় শেখ হাসিনার শ্রবণেন্দ্রীয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গ্রেনেড হামলার ১১বছর পেরিয়ে গেলেও অদ্যাবধি বিচার শেষ হয়নি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এ হামলাকে ঘিরে জজ মিয়ার নাটক সাজানো হয়, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। সে জজ মিয়া নাটকের জজ মিয়া এখন এ মামলার একজন সাক্ষী। অথচ এ জজ মিয়াকে আসামি করা হয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে।

বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে এ মামলাকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলেও দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালেই কেটে গেছে সাত বছর তবু মামলার শেষ হয়নি।

জানা যায়, ২০০৮ সালে মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার পর আইনি জটিলতায় একবার ফেরত এসেছিল। পরে আবার দ্রুতবিচারে যায় মামলাটি।

১১ বছর আগের আলোড়ন তোলা ঘটনাটির হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলার বিচার এখন চলছে ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে।

পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে আদালতের বিশেষ এজলাসে বসে বুধবার ১৭৫ ও ১৭৬ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে আগামী ২৪ ও ২৫ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন তিনি।

মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে এগোচ্ছে দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, “আশা করেছিলাম, এই আগস্টেই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করতে পারব। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি।

“তবে ন্যায়বিচার সমুন্নত রেখে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি মামলার বিচার নিষ্পত্তির জন্য আমরা চেষ্টা করছি।”

অন্যদিকে আসামি আব্দুস সালাম পিন্টুর আইনজীবী মোহাম্মদ আলী বলছেন, সরকার পক্ষের গাফিলতির কারণেই বিচার বিলম্ব হচ্ছে। নতুন করে তদন্ত করার নামে ধাপে ধাপে ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পযন্ত তিন বছর সময় নিয়েছে তারা।

নতুন করে তদন্ত এবং সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়ার কারণে দেরির বিষয়টি স্বীকার করে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহহার আকন্দ বলেন, “এখন বিচারিক কার্যক্রম বেশ দ্রুতই চলছে।”

এই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির তাগিদ যেমন রয়েছে, তেমনি ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় রয়েছেন সেদিনের হামলায় নিহত ২৪ জনের পরিবার এবং আহতরা।

ঘটনায় পরদিন ২২ আগস্ট মতিঝিল থানায় পুলিশের উপপরিদর্শক শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। থানা পুলিশ তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। পরে সিআইডিকে যায় মামলাটি।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে এই হামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলে। জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরেকে আসামি সাজিয়ে নানা কথা বলানো হয়, যা পরবর্তীকালে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়।

তৎকালীন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মুন্সি আতিকুর রহমান, এবং এএসপি আবদুর রশিদ- যারা মামলাটির তদন্ত করেছিলেন, তারা এখন আসামি হিসেবে বিচারের মুখোমুখি।

আর বিএনপি-জামায়াত আমলের তদন্ত কর্মকর্তাদের চোখে মামলার আসামি জজ মিয়া এখন এই মামলার সাক্ষী। তিনি সাক্ষ্যও দিয়ে গেছেন আদালতে। জরুরি অবস্থা জারির পর ক্ষমতা নেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

২০০৮ সালের ৯ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।
ওই বছরই মামলা দুটি বিচারের জন্য দ্রুত বিচার আদালতে পাঠানো হয়।

এরই মধ্যে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর ২৫ জুন অধিকতর তদন্তের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন জানালে ৩ আগস্ট আদালত তা মঞ্জুর করে। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহহার আকন্দকে।

এই কর্মকর্তা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ আরও ৩০ জনকে আসামির তালিকায় যোগ করে ২০১১ সালের ২ জুলাই আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।

অধিকতর তদন্তে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনের সংশ্লিষ্টতাও খুঁজে পান কাহহার আকন্দ।

এতে বলা হয়, হাওয়া ভবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীরা হুজিকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালিয়েছিল এবং তাতে রাষ্ট্রীয় কয়েকটি সংস্থার কর্তাব্যক্তিদেরও যুক্ত করা হয়েছিল।

সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়ার দুদিন পর পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, খোদা বক্স চৌধুরী ও শহুদুল হক এবং ৬ জুলাই সিআইডির কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন, মুন্সি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০০ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল সুপার মার্কেট সংলগ্ন একটি অফিসে গোপন বৈঠক করে শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল।

তৎকালীন উপমন্ত্রী সালাম পিন্টুর সহোদর মাওলানা তাজউদ্দিন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জঙ্গিদের যুক্ত করেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

“২০০৪ সালের প্রথম দিকে বনানীর হাওয়া ভবনে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করে জঙ্গিরা এবং এরপরেই ওই বছরের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা।”

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ১১ বছর পুর্তি তথা ১২ বছরে পা রাখলেও অদ্যাবধি শেষ হয়নি এর বিচার। আসামিদের বেশিরভাগই বাইরে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার হস্তান্তরের ৭ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও রাষ্ট্রপক্ষ এখনও আশাবাদি দ্রুত শেষ হয়ে যাবে বিচারকাজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত