ডেস্ক রিপোর্ট

৩০ মার্চ, ২০১৬ ১৯:১১

মৌলভীবাজারে হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের বিক্ষোভ মিছিল

 মহান মে দিবসে স্ববেতন সর্বাতœক ছুটি, হোটেল সেক্টরে নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ ন্যূনতম মূল মজুরি ১০ হাজার টাকা ঘোষণা, ঢাকার ঘরোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে কিশোর শ্রমিক রিয়াদের খুনিকে গ্রেফতার, হোটেল সেক্টরে শ্রম আইন কার্যকর ও শ্রীমঙ্গলে স্থায়ী শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠার দাবিতে দেশব্যাপী হোটেল শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ২৩০৫ এর উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্টিত হয়।

৩০ মার্চ বিকেলে শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয় হতে নেতাকর্মীরা সমবেত হয়ে মিছিল বের করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌমুহনায় এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।

জেলা হেটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মীর মোঃ জসিমউদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, হোটেল শ্রমিক নেতা শাহিন মিয়া, রিকশা শ্রমিক সংঘের সভাপতি সোহেল আহমেদ প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলে্‌ মহান মে দিবস আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণীর ঐক্য ও সংহতি প্রকাশের দিন। মহান মে দিবস উপলক্ষে ১ মে সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণী ছুটি ভোগ করে থাকেন। বাংলাদেশের সর্বস্তরের সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা ছুটি ভোগ করলেও আমরা হোটেল শ্রমিকরা এই সুযোগ থেকে বি ত হয়ে আসছি। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে মে দিবসে ছুটি কার্যকর করা গেলেও ছুটির দিনের বেতন ও খানা-দানা প্রদান করা হয় না। আমাদের চাকরীর যেমন নেই নিশ্চয়তা, তেমনই বাচাঁর মত মত মজুরি ও কাজ শেষে অনেক ক্ষেত্রে মজুরিরও নিশ্চয়তা নেই। বর্তমানে আমরা যে মজুরি পাই তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মাসের ১০ দিন চলাও দায়।

তারা আরও বলেন, সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে সরকারি চাকুরীজীবীদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনে ব্যাপক বৈষ্যম তৈরি করে বেতন প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি এমপি,মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেতন-ভাতাও দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু হোটেল শ্রমিকসহ দেশের কোটি কোটি শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি এক টাকাও বৃদ্ধি করা হয়নি, অথচ এই শ্রমিকরাই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর সরকার হোটেল সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরির গেজেট প্রকাশ করার ৬ বছর পর সম্প্রতি এই সেক্টরে নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করেছেন। কিন্তু মজুরি বোর্ডে যাতে মালিকদের স্বার্থরক্ষা হয় এজন্য সরকার শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে হোটেল শ্রমিকদের সম্পর্কহীন এমন একজন মনোনীত করেছেন।

বক্তারা বলেন, সারাদেশে হোটেল শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন রেজিঃ নং- বিঃ ২০৩৭  এবং এর অন্তর্ভূক্ত বিভিন্ন ইউনিয়নের দাবি উপেক্ষা করে মালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী সরকার যে মজুরি বোর্ড গঠন করেছেন তা অবিলম্বে বাতিল এবং নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ ন্যূনতম মুল মজুরি ১০ হাজার টাকা ঘোষণার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, দেশে প্রচলিত শ্রম আইনে যে সামান্যতম সুযোগ-সুবিধা আছে তা থেকেও আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমরা যেমন ন্যায্য মজুরি পাই না তেমননি নেই আমাদের জীবনের নিরাপত্তা। ঢাকার ঘরোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের ১৬ বছরের কিশোর শ্রমিক রিয়াদকে একই হোটেলের মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল ঠান্ডা মাথায় গুলি করে খুন করার ৬ মাস হয়ে গেলো। খুনী সোহেলের গ্রেফতারের দাবিতে গত বছর ২৯ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীকে এবং এবছর ১৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশ থেকে এক যোগে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি করা হয়। কিন্তু তারপরও আজ পর্যন্ত সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়নি। এমতবস্থায় আমাদের ন্যায্য মজুরি, আইনী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বেঁচে থাকার স্বার্থেই আন্দোলনের বিকল্প কোন পথ খোলা নেই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত