সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৭:২৫

টেংরাটিলার গ্যাসক্ষেত্রের ক্ষতিপূরণ দেয়া না হলে কঠোর আন্দোলন হুমকি

টেংরাটিলা দাবী আদায় সংগ্রাম পরিষদ সিলেটের সভাপতি নুরুল আমিন বলেছেন, ১১ বছর আগে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে পরপর দুই দফা ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। খননকারী প্রতিষ্ঠান কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকো দুই দফা অগ্নিকান্ড ঘটিয়ে বিশাল ক্ষতি করেছে। যে ক্ষতি কোনো দিন পোষাবে না। আজ এক যুগ হতে চললেও সেই ক্ষত চিহ্ন এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে টেংরাটিলার মানুষ। টেংরাটিলায় এখনও বুদবুদ হচ্ছে। বর্ষার মৌসুমে দৃশ্যমান হয় চতুর্দিকে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বুদবুদ হয়।

আর বর্তমানে যে শুষ্কমৌসুম চলছে এই সময়ে গ্যাসের বিকট গন্ধে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এজন্য মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও ব্যহত হচ্ছে। অনতিবিলম্বে এলাকাবাসী ক্ষতিপূরণ দিয়ে ও পুনরায় গ্যাস খনন শুরু করার দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করতে সংগ্রাম পরিষদ বাধ্য হবে।

রোববার (১ জানুয়ারি) দুপুরে সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহস্থ সংগ্রাম পরিষদ সিলেটের অস্থায়ী কার্যালয়ে সভাপতির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন তিনি।

সংগ্রাম পরিষদের নেতা আলমগীর হোসেনের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন টেংরাটিলা দাবি আদায় সংগ্রাম পরিষদ সিলেটের নেতা আব্দুল আহাদ এলিছ, রফিকুল ইসলাম, আমির আলী, রিপন হাওলাদার, সানি আলম সাগর, ওসমান আলী, নাসির উদ্দিন, নাদিম আমিন নাইম, আলী হোসেন, লিটন আহমদ, ইসমাইল হোসেন, ফারুক হাসান, ইকবাল হোসেন, নিশিকান্ত পাল, সুবর্ণা সিনহা, সাদিয়া আমিম, শান্তা আক্তার, সামিয়া আক্তার, কামাল মিয়া, আব্দুল করিম বাবলু, মির্জা আলমগীর প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, টেংরাটিলা এলাকায় বিগত ২০০৫ সালে ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন টেংরাটিলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ দুটি দিন টেংরাটিলার ট্র্যাজেডির দিন। ভয়াবহ ও বিভীষিকার দিন। এ দুটি দিন টেংরাটিলাবাসী কোনোদিন ভুলতে পারবেন না। কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর চরম অদক্ষতার কারণে গ্যাস ভাণ্ডার খ্যাত টেংরাটিলায় দুই দফা অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। দুই বারে কম হলেও ৬ মাস আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে। দ্বিতীয় দফা রিলিফ কুপে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। পরপর দুই বারের আগুনে টেংরাটিলা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়েছে। প্রকৃতিঘেরা টেংরাটিলা পরিণত হয় বিরানভূমিতে। এখানের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হয়ে পড়ে। টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে আশপাশের এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে যাযাবর জীবনযাপন করেন।

বক্তারা আরো বলেন, এই অগ্নিকান্ডে টেংরাটিলা, আজবপুর, খইয়াজুড়ি, শান্তিপুর ও গিরিশ নগরের ৬১৬ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। ওই ৫টি গ্রাম টেংরাটিলা গ্যাসকুপের চতুর্দিকের এক কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত। পরবর্তীতে সরকার বারবার টিম পাঠিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে ৬১৬টি পরিবার নির্ধারণ করেন। এই পরিবারগুলো এখনও অসহায়। ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও তারা পায়নি কোনো ক্ষতিপূরণ। প্রথমে অনাহারে, অর্ধাহারে জীবন যাপন করলেও এখন কিছুটা ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে এলাকার মানুষ। তবে, এখনও ক্ষতিপূরণের আশায় পথ চেয়ে বসে আছে মানুষ।

কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকো অগ্নিকান্ডের সময় সিঙ্গাপুর থেকে বীমার টাকা আদায় করলেও বাংলাদেশ সরকার কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি। বরং তারা পর্যায়ক্রমে টেংরাটিলা থেকে চলে যায়। এ কারণে আমাদের দাবি হচ্ছে টেংরাটিলায় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ নাইকোর কাছ থেকে আদায় করে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হোক। পাশাপাশি দেশের সম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটিও সরকার আদায় করুক। আমাদের দৃঢ় ধারনা টেংরাটিলায় নাইকো পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকান্ড ঘটিয়েছে। নতুবা তারা এতো অদক্ষের মতো গ্যাসের ভাণ্ডার বলে খ্যাত টেংরাটিলায় গ্যাস কুপ খনন করতো না। আর দুই দফা অগ্নিকান্ডের পর তারা নীরবেই চলে গেছে। এই অবস্থায় টেংরাটিলায় অফুরন্ত গ্যাস ভাণ্ডার এখনও অক্ষত রয়েছে। বিভিন্ন সময় গ্যাস বিশেষজ্ঞরা অনুসন্ধান চালিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তাঁরা আরো বলেন, আজ থেকে ১১ বছর পূর্বে বাংলাদেশ সরকারের খনন কাজ ততটা দক্ষ ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। এখন বাংলাদেশের গ্যাস সেক্টর সিলেট তথা বাংলাদেশের গ্যাস সেক্টরের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গৌরবময় সময় অতিবাহিত করছে। এই অবস্থায় টেংরাটিলার প্রতি সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একবার নজর দিলেই টেংরাটিলা আবার সচল হবে। আমাদের স্পষ্ট দাবি হচ্ছে টেংরাটিলা দেশী কোম্পানি পেট্রোবাংলা দিয়ে ফের সচল করা হোক। এতে করে সরকার গ্যাস সংকট কাটাতে পারবে।

টেংরাটিলা আবার সচল হোক সেই আশায় পথ চেয়ে আছে টেংরাটিলাবাসী। বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। সুতরাং, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি রাখতে পারি। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই কেবল জনগণের প্রকৃত মনের ভাষা বুঝতে পারেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি টেংরাটিলার প্রতি আপনি সুনজর দিন।

টেংরাটিলাকে সচল করতে ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে এবং ৫ জানুয়ারি টেংরাটিলা ট্র্যাজেডির দিন সিলেট শহরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।  



আপনার মন্তব্য

আলোচিত