সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ১৩:৪৩

‘বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করলে বাসায় শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন’

সিলেটে ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি বিষয়ক সেমিনার চলছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় সিলেট নগরীর তালতলাস্থ বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে হলে দিনব্যাপী সেমিনার শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেট বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করেছে।

উদ্বোধনি পর্বে আলোচকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মধ্যে সিলেট সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। সিলেটের খুব কাছাকাছি ডাউকি ফল্ট এর অবস্থান। এছাড়া সিলেট অঞ্চলে মাটির নিচে বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও খনিজ পদার্থ থাকায় ঝুঁকি আরো বেশি রয়েছে। তাই, সিলেটবাসীকে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে। তবেই, উচ্চ ভবনের উপরও শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন।

বক্তারা সম্প্রতি নেপালে সংঘটিত ভূমিকম্পে তাদের প্রস্তুতি, উদ্ধার তৎপরতা, ক্ষয়ক্ষতি ও ঘাটতি পর্যালোচনা করে বলেন, আমাদের দেশের জনগণকে এখনই সচেতন হতে হবে। বিল্ডিং কোড মানার পাশাপাশি ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশাররফ হুসেন, পিএসসি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক মো. কামরুল আহসান, বিপিএম, মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেটের নির্বাহী পরিচালক মো. মোসলেম উদ্দিন।

কামরুল আহসান বলেন, ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয় না, ক্ষতি হয় প্রস্তুতি ও সচেতনতার অভাবে। সরকার ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম বিস্তৃতি করছে। প্রশিক্ষণ বাড়ানো ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। তবুও আমাদের অনেক কিছু করণীয় আছে।

তিনি আরও বলেন, অনেকে সচেতনভাবে অপরাধ করে থাকে। এ ব্যাপারে আমাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। বিল্ডিং কোড না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

জহির বিন আলম বলেন, সিলেটে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অনেক। তবে, এখন যেসব ভবন নির্মাণ হচ্ছে সেগুলো বিল্ডিং কোড মেনেই হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে সিলেটের মানুষ এখন অনেকটা সচেতন হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, সিলেটে বিদ্যুতের দক্ষ কারিগর কম। যে কারণে ঘন ঘন বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে সিলেটবাসীকে সচেতন হওয়া দরকার আছে।

দুর্যোগ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, সিলেট ভূমিকম্পে একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। সচেতন থাকতে হবে। অন্যথায়, যে কোন সময় অঘটন ঘটতে পারে।

সিলেটের পাশ দিয়ে ডাউকি ফল্ট লাইন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জাপানি এক গবেষকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সিলেটে যেকোন সময় ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করলে রাতে শান্তিমত ঘুমাতে পারবেন। তাই, সিলেটবাসীকে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

মূল প্রবন্ধে মোশাররফ হোসেন সারাদেশে ভূমিকম্প ঝুঁকির প্রেক্ষাপট ও সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ বিষয়ে কথা বলেন।

আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ার অব এফএসসিডির আওতায় সিলেটসহ সারাদেশে ৩৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কর্মী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

মোশাররফ হুসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব জনবল ছাড়াও বর্তমানে পাঁচহাজার কর্মী প্রশিক্ষণ চলছে। এছাড়া সরকার উদ্ধার তৎপরতার জন্য উন্নত যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হচ্ছে।

বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ, সড়ক প্রশস্ত করা, ভূমিকম্প সহ প্রাকৃতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় সকল বিভাগের সমন্বয় সাধন ও সচেতনতা বাড়ানো দরকার বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে গ্রুপ আলোচনা রয়েছে। শেষ পর্বে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন।


আপনার মন্তব্য

আলোচিত