সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:৫৯

ওয়েড-স্টয়নিস ঝড়ে ভাঙল পাকিস্তানের স্বপ্ন

ক্রিকেটের জগতে বহুল প্রচলিত একটি কথা রয়েছে। ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। এরই জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত দেখা গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে।

ম্যাচের ১৮ তম ওভারে জয়ের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। অজিদের জয়ের সুবাস দিতে থাকা ম্যাথিউ ওয়েড ম্যাচের ১৯তম ওভারে শাহিন আফ্রিদির বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ মিড উইকেটে। আর সেই ক্যাচ হাত ফসকে বেড়িয়ে গিয়েছিল হাসান আলির।

ওয়েডকে জীবন ফিরিয়ে দেয়ার খেসারতটা খুব বাজেভাবেই দিতে হল পাকিস্তানকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেটে হেরে বিসর্জন দিতে হল তৃতীয় শিরোপার স্বপ্ন। আর অজিদের এই জয়ের সেই জীবন পাওয়া ম্যাথিউ ওয়েড। সঙ্গে ছিলেন মার্কাস স্টয়নিস।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে স্টয়নিসের দায়িত্বশীল ও ওয়েডের টর্নেডো ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া।

পাকিস্তানের দেয়া ১৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে এক ওভার ও পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে তরী ভেরায় অজিরা।

বল হাতে নেমে শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরে পাকিস্তান। ইনিংসের তৃতীয় বলেই দুর্দান্ত এক ইন সুইঙ্গারে রানের খাতা খোলার আগে অ্যারন ফিঞ্চকে সাজঘরের রাস্তা বাতলে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।

পরের বলেই দুর্দান্ত এক ইয়োর্কারে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ান মিচেল মার্শের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লেগ স্ট্যাম্প মিস হওয়ায় এলবিডব্লিউ থেকে সে যাত্রায় বেঁচে যান মার্শ।

প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিয়ে বিপজ্জনক জুটি গড়ে তোলেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। গড়েন ৫১ রানের জুটি।

কিন্তু বেরসিকের মতো অজিদের জয়ের স্বপ্ন দেখানো সেই জুটি ভেঙ্গে দেন শাদাব খান। ২২ বলে ২৮ রান করা মার্শকে ফেরান আসিফ আলির তালুবন্দি করে।

মার্শের বিদায়ের পর শাদাবের বোলিং তোপে দিশেহারা হয়ে পড়েন অজি ব্যাটাররা। স্টিভেন স্মিথকে ফখর জামানের ক্যাচ বানিয়ে বাগিয়ে নেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট।

তখনও ডেভিড ওয়ার্নারের কল্যাণে জয় হাতছানি দিচ্ছিল অস্ট্রেলিয়াকে। কিন্তু আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে সাজঘরের পথ ধরতে হয় ওয়ার্নারকেও। রিভিউ দুটো হাতে থাকলেও কোনো এক অজানা কারণে সেটি প্রয়োগে কোনো আগ্রহই দেখা যায়নি বাঁহাতি এই ব্যাটারকে।

শাদাবের বলে উইকেটের পেছনে রিজওয়ানের হাতে ধরা দেয়ার আগে খেলেন ৩০ বলে ৪৯ রানের ঝড়ো এক ইনিংস।

এরপর নিজের স্পেলের শেষ ওভারে ৭ রান করা ম্যাক্সওয়েলকে ফিরিয়ে থলেতে পুরেন চতুর্থ উইকেট। চার ওভারের স্পেলে ২৬ রানের বিনিময়ে শিকার করেন চারটি উইকেট। এটিই এখন পর্যন্ত এই স্পিনারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে শাদাবের সেরা স্পেল।

কিন্তু জয়ের স্বপ্ন জিইয়ে রাখেন মার্কাস স্টয়নিস ও ম্যাথিউ ওয়েড। শেষদিকে ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে এক ওভার হাতে থাকতেই উপহার দেন ৫ উইকেটের দুর্দান্ত এক জয়।

শেষ পর্যন্ত স্টয়নিস অপরাজিত থাকেন ৩১ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে আর ওয়েড খেলেন ১৭ বলে ৪১ রানের টর্ণেডো ইনিংস।

আগামী রোববার ফাইনালে ক্রিকেটের শর্টার ফরম্যাটের শ্রেষ্ঠত্ব বাগিয়ে নেয়ার মিশনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে ওশেনিয়ার আরেক ক্রিকেট পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া।

এর আগে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত সূচনা করে পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটিতেই ৭১ রানের পুঁজি পায় তারা।

১০ম ওভারের শেষ বলে অ্যাডাম জাম্পাকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লং অনে ডেভিড ওয়ার্নারের তালুবন্দি হন বাবর আজম। আর তাতেই ভাঙ্গে তাদের দুর্দান্ত সেই জুটি। মাঠ ছাড়ার আগে ৩৪ বলে ৩৯ রানের ইনিংস।

এরপর দুইবার জীবন পাওয়া মোহাম্মদ রিজওয়ান শুরু করেন তাণ্ডবলীলা। অজিদের ক্যাচ মিসের খেসারত হিসেবে তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক।

ইনিংসের ১৮ তম ওভার থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে আসে অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ১৪৩ রানে স্টার্কের বল মিড অফে উড়িয়ে মারতে স্মিথের হাতে ধরা পড়েন রিজওয়ান। তার আগে খেলেন ৫২ বলে ৬৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।

রিজওয়ানের বিদায়ের পর রানের খাতা খোলার আগেই মাঠ ছাড়েন আসিফ আলি। এক রান করেই সাজঘরের পথ ধরেন শোয়েব মালিকও।

শেষদিকে ফখর জামানের ৩২ বলে ৫৫ রানের ঝড়ো ইনিংসের কল্যাণে অজিদের সামনে ১৭৬ রানের পুঁজি দাঁড় করায় পাকিস্তান।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটি উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক। একটি করে উইকেট ঝুলিতে পুরেন প্যাট কামিন্স ও অ্যাডাম জাম্পা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত