স্পোর্টস ডেস্ক

০৪ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:০০

এবাদতের বোলিং নৈপুণ্যে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১৩০ রানের লিডের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে নিউ জিল্যান্ড। এরপর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বাংলাদেশের দাপট। ঠিক যেন মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের চূড়ায় উঠে বসে আছে সফরকারীরা। এর পেছনে পুরো কৃতিত্বটাই পেসার এবাদতের। তার বোলিং নৈপুণ্যে ১৪৭ রান তুলতেই পাঁচ ব্যাটারকে হারিয়েছে কিউইরা। আর চতুর্থ দিন স্বাগতিকরা শেষ করেছে মাত্র ১৭ রানের লিড নিয়ে।

মঙ্গলবার মাউন্ট মাঙ্গানুইতে চতুর্থ দিন শেষেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে। প্রথম ইনিংসে ১৩০ রানে পিছিয়ে থাকা নিউ জিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে তুলেছে ৫ উইকেটে ১৪৭  রান। বাংলাদেশ থেকে তারা এগিয়ে আছে কেবল ১৭ রানে।  পথের কাঁটা হয়ে ৩৭ রান করে ক্রিজে আছেন একাধিক জীবন পাওয়া অভিজ্ঞ রস টেইলর।

শেষ দিনে বাকি ৫ উইকেট দ্রুত ফেলে দিয়ে ম্যাচ জেতার সুযোগ থাকছে মুমিনুল হকের দলের। এমন একটি দিনে বাংলাদেশের নায়ক এবাদত। ডানহাতি এই পেসার ১৭ ওভার বল করে ৩৯ রান দিয়ে পেয়েছেন ৪ উইকেট।

অথচ দিনটা শেষ হতে পারত আক্ষেপ সঙ্গী করে। দুটি ক্যাচ হাতছাড়ার পর একটি রান আউটের সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। এসবের মাঝে জুটি গড়ে নিউ জিল্যান্ডকে স্বস্তির জায়গায় নিয়ে যাচ্ছিলেন টেইলর ও উইল ইয়ং।

এক স্পেলে পর পর তিন উইকেট নিয়ে তাদের ভিত নাড়িয়ে দেন এবাদত। তৃতীয় উইকেটে ৭৩ রানের জুটির পর ইয়ংকে শিকার ধরেন তিনি। এবাদতের শর্ট বলে পুল করতে গিয়েছিলেন ৬৯ রানে থাকা ইয়ং। বলে বাউন্স ছিল না যথেষ্ট। বোল্ড হয়ে যান কিউই ওপেনার। ওই ওভারেই দারুণ এক ইয়র্কারে হেনরি নিকোলসের স্টাম্প উড়িয়ে দেন এবাদত।

পরের ওভারে ভেতরে ঢোকা বলে টম ব্ল্যান্ডেলকে শিকার ধরেন তিনি। আচমকা তিন উইকেট হারিয়ে বসে নিউ জিল্যান্ড। এর আগে ডেভন কনওয়েকেও ফিরিয়েছিলেন এবাদত।

বাংলাদেশ সুযোগ হাতছাড়া না করলে টেইলর-ইয়ং ফিরতে পারতেন অনেক আগে, মিরাজের বলে। টেইলর হতে পারতেন রান আউটও। সেসব সুযোগ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের।  সকালে ১৩০ রানের লিডের পর বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৪৫৮ রানে। এরপর নামা নিউ জিল্যান্ডকে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। রান আটকে দিয়ে বাড়াচ্ছিল চাপ।

নবম ওভারে আসে সাফল্য। প্রথম ইনিংসে দারুণ বল করেও উইকেট না পাওয়া তাসকিন আহমেদ ধরেন প্রথম শিকার। তার বলে স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন স্বাগতিক অধিনায়ক টম ল্যাথাম।

এরপর কনওয়ে-ইয়ং মিলে প্রতিরোধ গড়োলেও রানের চাকা ছিল মন্থর। আঁটসাঁট বল করে চাপ বাড়াচ্ছিল বাংলাদেশ। সেই চাপেই মিলে যায় পরের উইকেট। ৩৪ রানের জুটির পর বিদায় নেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান কনওয়ে। এবাদতের  বলে ব্যাটে-প্যাডে লেগে তার ক্যাচ যায় স্লিপে। ঝাঁপিয়ে চোখ ধাঁধানো ক্যাচ নেন সাদমান ইসলাম। আম্পায়ার অবশ্য এলবিডব্লিউ-ক্যাচ কোন আউটই দেননি, পরে রিভিউ নিয়ে উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ।

খানিক পর ৩১ রানে বিদায় নিতে পারতেন ওপেনার ইয়ং। মিরাজের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। কিছুটা নিচু হওয়া সেই ক্যাচ গ্লাভসে জমাতে পারেননি উইকেটকিপার লিটন দাস। এরপর এবাদতের বলে হতাশাজনকভাবে একটি মূল্যবান রিভিউ নষ্ট হয়। এবাদতের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে থাই প্যাডে লাগিয়েছিলেন টেইলর। কট বিহাইন্ডের আবেদন করে বাংলাদেশ। বোলার ও কিপার ছিলেন না আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু ফিল্ডার মিরাজের গলা শোনা যায়। তিনি অধিনায়ক মুমিনুলকে বলে বল আগে লেগেছে ব্যাটে। রিভিউ নিলে দেখা যায় ব্যাট ছিল না আশেপাশে।

এরপর তাসকিনের বলেও আরেকটি রিভিউ নষ্ট হয় মিরাজের ভুল পর্যবেক্ষণে। ইয়র্কার লেন্থের ডিফেন্স করেছিলেন টেইলর। বল পায়ের পাতায় লেগেছে ভেবে হালকা আবেদন করেন তাসকিন। আম্পায়ার সাড়া না দিলে মিরাজ আবারও মুমিনুলকে বলেন- তিনি দেখেছেন বল আগে লেগেছে টেইলরের পায়ে। রিভিউ নিলে দেখা যায় বল লেগেছে একদম মাঝব্যাটে।

এর আগে এবাদতের বলে শুরুতে নষ্ট হয়েছিল একটি রিভিউ। অর্থাৎ তিনটি রিভিউই হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।

রিভিউ হারানোর হতাশার সঙ্গে খানিক পর যোগ হয় ক্যাচ হাতছাড়ার আক্ষেপ। মিরাজের বলে স্লগ সুইপে ক্যাচ উঠিয়েছিলেন ১৮ রানে থাকা টেইলর। ডিপ স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন এই ম্যাচে পাঁচটা ক্যাচ নেওয়া সাদমান।

৫০তম ওভারে এবাদতের বলে অফ সাইডে ঠেলেছিলেন ইয়ং। বল ফিল্ডারের হাতে থাকায় রান ছিল না। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে টেইলর রানের জন্য বেরিয়ে গিয়েছিলেন অনেকটা। তার ফেরার সময়ও ছিল না। কিন্তু ব্যাকআপ করে স্টাম্প ভাঙ্গার জন্য নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে কোন ফিল্ডার ছিল না বাংলাদেশের, বোলার এবাদতও বল ধরে লাগাতে পারেননি স্টাম্পে। ২৯ রানে আরেক জীবন পান টেইলর।

বাংলাদেশের অস্বস্তির সময় দূর হয় দুই ওভার পরই।  এবাদত আনেন জোড়া সাফল্য। তার শর্ট বলে পুল করতে গিয়েছিল ইয়ং। বলে ছিল না যথেষ্ট বাউন্স। লাইন মিস করে তিনি বোল্ড। পরে নিকোলসকে দারুণ এক ভেতরে ঢোকা ইয়র্কর লেন্থের বলে শিকার ধরেন এবাদত। পরের ওভারে ব্ল্যান্ডেলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে এনে দেন তিনি।

এর আগে আগের দিনের ৬ উইকেটে ৪০১ রান নিয়ে নেমে ইয়াসির আলি রাব্বির সঙ্গে জুটি জমিয়ে তুলেছিলেন মিরাজ। প্রথম সেশনের বেশিরভাগ সময় তারা ক্রিজে থাকলেও হুট করেই নামে ধস। ৪৭ করা মিরাজের বিদায়ে ভাঙ্গে সপ্তম উইকেটে ৭৫ রানের জুটি। সঙ্গীর বিদায়ে আস্থার সঙ্গে খেলতে থাকা ইয়াসিরও ২৬ রান করে থামান দৌড়। এরপর দ্রুত বাংলাদেশের টেল ছেঁটে ফেলেন ট্রেন্ট বোল্ট-টিম সাউদিরা। শেষ দিকে তড়িঘড়ি গুটিয়ে গেলেও লিড যথেষ্ট বড় হওয়ায় ম্যাচ জেতার পথেই থাকে বাংলাদেশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত