স্পোর্টস ডেস্ক

১৩ মার্চ, ২০১৫ ০০:৩৪

পারবে কী বাংলাদেশ?

হ্যামিলটনে অধিনায়ক মাশরাফি নিয়ে বেশ ভালো নাটকই করল বাংলাদেশ দল। দেশ-বিদেশের সাংবাদিকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন মাশরাফি, তিনি খেলছেন কী-না এমন প্রশ্নও ওঠে এসেছিল কিন্তু বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট কোন উত্তর করেনি। সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নও এড়িয়ে গেলেন কোচ।

প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ ১২ জনের নাম দেয়ার পক্ষে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাও চেপে গেছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহেও অধিনায়কের ইস্যু এড়িয়ে গেছেন। পরে দল ঘোষণা করার কথা জানান তিনি। কৌশলগত কারণেই হয়তো-বা বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। কিন্তু মাশরাফি যে খেলছেন না তা অনেকটা নিশ্চিত।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার সময় ঠাণ্ডা বাতাসে গলা বসে গেছে তার। ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। হাঁটুর সমস্যা প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে। স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাঁটুর আঘাত নিয়ে খেলে দলকে জিতিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালের আগে তাঁর কিছু বিশ্রামের দরকার বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন ম্যানেজমেন্ট।

অসুস্থতা তো আছেই, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেস্না ওভার রেটের জন্য ম্যাচ ফির ৪০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে তাকে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সেস্না ওভার রেট হলে তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হবেন অধিনায়ক। আইসিসির নতুন নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়তে চাচ্ছেন না নড়াইল এক্সপ্রেস।

মাশরাফি না থাকলেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা জিততে চান কোচ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আজকের ম্যাচ নিয়েই তাদের সব পরিকল্পনা। খেলোয়াড়দেরও সেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন জয়ের কথা ভাবছেন, তার একটা ব্যাখ্যাও দিলেন হাথুরুসিংহে, 'কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় আত্মবিশ্বাস খুবই উঁচুতে। প্রথম লক্ষ্যটা আমরা অর্জন করে ফেলেছি। যেটা এ ম্যাচে স্বাধীনভাবে খেলার সুযোগ দিচ্ছে।' শেষ ম্যাচে অলরাউন্ড ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। টানা দুই ম্যাচে 'ব্যাটিং ইউনিট' ধারাবাহিক। পেস বোলিংও ভালো হচ্ছে। তার চেয়েও বড় বিষয়, চাপের ম্যাচগুলো জিতেছে।

মাশরারিফ ভাষায়, 'আগে আমরা চাপের ম্যাচগুলো হেরে যেতাম। বিশ্বকাপে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে পারফর্ম করা সম্ভব হচ্ছে। আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খুব চাপ ছিল। স্কটল্যান্ডের ৩১৮ রান চেজ করে জেতা সহজ ছিল না। ইংল্যান্ডের ম্যাচটা আরও কঠিন ছিল। বাকি ম্যাচগুলো এভাবে খেলতে পারলে ভালো কিছু হতে পারে।'

হ্যামিলটনে আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাঠে নামে টাইগাররা। এবারের বিশ্বকাপে কিউইরা এখনও কোনো ম্যাচে হারেনি। কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় টাইগাররাও রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে হ্যামিলটনে আজও মাশরাফিরা লাল-সবুজের নিশান ওড়াবে- ১৬ কোটি বাংলাদেশীর প্রত্যাশা এমনটাই।

হ্যামিলটনে বুধবার রাত থেকেই বৃষ্টি। মাঠে অনুশীলন করাও সম্ভব হয়নি। পিচ ঢেকে রাখা হয়েছে ত্রিপল দিয়ে। দুই দিনে কিছু ময়েশ্চার জমে যেতে পারে। আজ সকালেও বৃষ্টি হলে উইকেট আর ব্যাটিংবান্ধব থাকবে না। তিন পেসার নিয়েই তখন একাদশ সাজাতে হবে। মাশরাফির জায়গায় শফিউল ইসলামকে দেখা যেতে পারে।

এদিকে হ্যামিলটনের সেডন পার্ক তুলনামূলক ছোট মাঠ। চার-ছয় হাঁকানোর সুযোগ বেশি থাকে। তামিম ইকবাল উইকেটে জমে গেলে বড় ইনিংস খেলতে পারেন। নিউজিল্যান্ডে তার ভালো স্মৃতি রয়েছে। সেঞ্চুরির অভিজ্ঞতা আছে ইমরুল কায়েসের। উইকেট দেখার পর গতকাল ক্রিকেটারদের নেটে বিশেষ সেশনও করালেন কোচ। উইকেটে কিছু ঘাস আছে বলেও জানালেন তিনি। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের উইকেট স্পিন ধরে।

সাকিব আল হাসান এবং আরাফাত সানি নিজেদের মেলে ধরতে পারলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিউই অধিনায়ক সাকিবের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন, 'কলকাতা নাইট রাইডার্সে একসঙ্গে খেলেছি। মাঠে এবং মাঠের বাইরে সে অসাধারণ একজন মানুষ। নিজের দিনে সে অনেক কিছু করতে পারে। তার সম্পর্কে আমরা ভালো জানি।'

রুবেল হোসেন এবং তাসকিন আহমেদও বাজির ঘোড়া হতে পারেন। রুবেলের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন ম্যাককালাম। কিন্তু তিনি ফর্মে থাকলে বড় আর ছোট বোলার বলে কিছু থাকবে না। কিউই দলটা দারুণ ছন্দে আছে। বিশ্বকাপের পাঁচ ম্যাচ জিতে গ্রুপের শীর্ষে তারা। প্রতিটি প্রতিপক্ষকেই অলআউট করেছেন ভেট্টরিরা।

বাংলাদেশ ঘরের মাটিতে তাদের বিপক্ষে টানা দুটি সিরিজ জিতলেও বিশ্বকাপের হিসাব ভিন্ন। কন্ডিশন, ফর্ম ও স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা- সবকিছুই কিউইদের অনুকূলে। সুতরাং জিততে হলে নিজেদের সেরা ক্রিকেটই খেলতে হবে সাকিবদের।

সর্বশেষ সাত ম্যাচের ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায় বাংলাদেশ জিতেছে সবগুলো ম্যাচই। যদিও ম্যাচগুলো ছিল বাংলাদেশের মাটিতে।

এদিকে নিউজিল্যান্ড আছে তাদের সেরা ফর্মে। পর পর পাঁচ ম্যাচ জিতে গ্রুপের শীর্ষে আছে তারা। বাংলাদেশ কী পারবে তাদের বিজয়রথ থামাতে?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত