নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ মার্চ, ২০১৫ ১৮:২৯

কেনো সাকিব? কেনো রুবেল নয়?

এখানেই বোধহয় অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মর্তুজা অনন্য। তিনি সবসময়ই আক্রমনাত্মক। আগ্রাসী। কোয়ার্টার ফাইনালে এই আগ্রাসী নেতার নেতৃত্বেই মাঠে নামবে টাইগাররা। ভারতের কপালে বোধহয় দুঃখই আছে!

৪৮ তম ওভারের খেলা শেষ। দুই ওভারে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ১১ রান। উঁকি দিচ্ছে আগের ম্যাচের স্মৃতি। ধারাভাষ্যকাররাও মনে করিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচের এই সময়কারর কথা। কিভাবে ৩ বলে দুইবার স্ট্যাম্পে লালবাতি জ্বালিয়ে বাংলাদেশকে অসাধারণ এক বিজয় এনে দিয়েছিলেন রুবেল, এ নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিলেন তারা। এবং আজকে আবারো ৪৯ তম ওভারে বল হাতে রুবেল এমন ক্যারিশমা দেখাতে পারবেন কী না এ নিয়েও আলোচনা চললো। এসময় টিভি ক্যামেরায়ও বারকয়েক দেখানো হলো রুবেল হোসেনের মুখ। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন ৪৯ তম ওভারে রুবেল হোসেনের হাতেই বল তুলে দেওয়া হবে।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ৪৯ নম্বর ওভারে বল করতে আসলেন অধিনায়ক সাকিব নিজে। ধারাভাষ্যকারদের কণ্ঠেও ফুটে উঠলো বিস্ময়ের সুর, ‌'ওহ নট রুবেল!?' এই ওভারেই শেষ হয়ে যায় খেলা। কাঙ্খিত ১১ রান তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।


খেলা আসলে আগের ওভারেই অনেকটা নিউজিল্যান্ডের মুঠোয় চলে যায়। বিধ্বংসী হয়ে উঠা এন্ডারসনকে সরাসরি বোল্ড করে নাসির ফিরিয়ে দিলেও শেষ বলে ছয় খেয়ে বসেন এই অকেশনাল স্পিনার। ভেট্টরির তুলে মারা বলটি লং অনে দাঁড়ানো সাব্বির হোসেনের মাথার সামান্য উপর দিয়ে আঁচড়ে পড়ে বাউন্ডারির ওপারে। এই ছয়েই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। তখন ১২ বলে প্রয়োজন ১১ রান। হাতে ৩ উইকেট। নিউজিল্যান্ডের জয় তখন সময়ের ব্যাপার।

তবু সেই সময়ে আরেকটু আক্রমনাত্মক হতে পারতেন অধিনায়ক সাকিব। আজকের ম্যাচে সাকিব বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার। চার-চারটি উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। তবু সেই মূহূর্তে প্রয়োজন ছিলো গতির ঝড়ে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়ার সর্বশেষ প্রচেষ্টা চালানো। প্রয়োজন ছিলো দু'একটা ম্যাজিকেল ডেলিভারি। যা রুবেল হোসেনের পক্ষেই তখন সম্ভব ছিলো। তাও তখন স্ট্রাইকিং এন্ডে নবাগত টিম সাউদি, যিনি আবার মূলত বোলার। এসন পরিস্থিতি গতি আর সুইং-ই হতে পারতো মোক্ষম অস্ত্র। ক্রিজে নতুন আসা ব্যাটসমানে ঘাবড়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাই হতে পারতো কৌশল। কিন্তু কেনো যেনো সেদিকে গেলেন না অধিনায়ক সাকিব। বরং কিছুটা রক্ষনাত্মক কৌশলই বেছে নিলেন তিনি। নিজেই এলেন বল করতে।
আজকের ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, তারউপর অসাধারণ লড়াই করে হেরেছে বাংলাদেশ। তাই আজকের ম্যাচের এসব টুকটাক ব্যাপার নিয়ে হয়তো তেমন আলোচনা হবে না। বাংলাদেশের জন্য আজকের ম্যাচটি বাঁচা মরার লড়াই হলে, আলেচনা করা যেতো সাকিবের ফিল্ডিং সাজানো নিয়েও। এক্ষেত্রেও একটু যেনো বেশী রক্ষনাত্মকই ছিলেন সাকিব। প্রতিপক্ষের উইকেট তুলে নেওয়ার চেয়ে, রান আটকাতেই যেনো বেশী মনোযোগী ছিলেন তিনি। কিন্তু এই বিশ্বকাপে যেখানে হরহামেশা ৩/৪শ' রান হয়ে যাচ্ছে সেখানে উইকেট ফেলা ছাড়া ২৮৮ তে আটকানো কতটুকু সম্ভব? তাও ফর্মের তুঙ্গে থাকা নিউজিল্যান্ডকে? নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে এক ম্যাচের জন্য অধিনায়কত্ব পাওয়া সাকিব কী ছন্দে থাকা একদি দলকে নিয়ে কোনাে ঝুঁকি নিতে চাননি?

এখানেই বোধহয় মাশরাফি বিন মর্তুজা অনন্য। অন্তত বর্তমান বাংলাদেশ দলে। তিনি সবসময়ই আক্রমনাত্মক। আগ্রাসী। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচেই দেখুন না, একের পর এক বাউন্ডারি হাকিয়ে যখন বাটলার ওকসরা বাংলাদেশের মুঠো থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাচ তখনও ফিল্ড সেটাপে মাশরাফি আগ্রাসী। সার্কেলের ভেতরেই রেখে দিয়েছেন বেশীর ভাগ ফিল্ডার। জানতেন, দল হারলে তিনি সমালোচিত হতে পারেন। তবু রক্ষনাত্মক কৌশল বেছে নেন নি মাশরাফি। বরং তার মন্ত্রই হলো, এ্যাটাক ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স।

সাকিব বাংলাদেশের সেরা তারকা। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডর। এই বিশ্বকাপে এখনো তিনি চেনা রুপে আভির্ভূত হতে পারেন নি। টাইগার ভক্তরা আশায় আছেন, কোয়ার্টারেই দেখা মিলবে চেনা সাকিবের। ভারতকে গুড়িয়ে দেবেন ব্যাটে বলে। তবে নেতা হিসেবে, অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি এখনো অতুলনীয়। এখেনা অপ্রতিদ্বন্দ্বি। সবসময়ই আগ্রাসী।
কোয়ার্টার ফাইনালে এই আগ্রাসী নেতার নেতৃত্বেই মাঠে নামবে টাইগাররা। ভারতের কপালে বোধহয় দুঃখই আছে!

 

 

 

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত