আসাদুজ্জামান, ফ্রান্স থেকে

১২ জুন, ২০১৬ ০৯:৫৩

ফ্রান্সে ফুটবল সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষ [ভিডিও]

ইউরো ফুটবল ২০১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার ম্যাচের আগে ও পরে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।ফ্রান্সের মার্সেই শহরে ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত এই সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ত্রিশ জন আহত হয়েছে।

খেলাকে কেন্দ্র করে গত তিন দিন থেকে ফ্রান্সে যে সব শহরে খেলা হচ্ছে প্রায় সব কয়টি শহরেই বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে।মার্সেই শহরে গত তিনদিন থেকে শুরু হওয়া উত্তেজনা খেলার আগের রাতে এবং খেলার দিনে হিংস্রতায় রুপ নেয়। রাতে ফ্রান্স বনাম পোল্যান্ড এর খেলা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুরের কারণে শহরের কেন্দ্রস্থলের প্রায় সবকটি বার, রেস্তুরা, দোকান পুলিশ বন্ধ করে দেয়।

শনিবার রাত ১১ টার দিকে একটা রাশিয়ান বন্ধুকে সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হয়ে অবাক হতে হয়, অনেক খোঁজার পরও কোন খাবারের দোকান খোলা নেই দেখে।

আজ দুপুরের পর থেকে মার্সেই শহরের প্রাণকেন্দ্র পুরাতন বন্দরের কাছাকাছি ইংল্যান্ড বনাম রাশিয়ার সমর্থকদের মধ্যে চলতে থাকে কথা কথা নিয়ে উত্তেজনা পরবর্তীতে তা হিংস্রতায় রুপ নেয়।

প্রথমে দিকে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে তা ছড়িয়ে পরে প্রায় সর্বত্র।একসময় ইংল্যান্ডের সমর্থকরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ এবং সাংবাদিকদের দিকে মদের খালি কাঁচের বোতল ছুঁড়তে থাকে সাথে আশেপাশের দোকানে ভাংচুর করে।

এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলার পড় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।তারপরও বিক্ষিপ্তভাবে চলতে থাকে উত্তেজনা বিভিন্ন জায়গায়। এতে পথচারিসহ বেশ অনেকেই আহত হয়। আমারপাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সময় এক ফটোসাংবাদিকের ক্যামেরার ল্যান্স ফাটিয়ে দেয় উত্তেজিত সমর্থকদের কেউ একজন। ভাগ্য ভাল ওর মাথায় হ্যালমেট ছিল না হলে তাঁর পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ হতে পারত। আমার নিজের পায়ে বোতলের ভাঙ্গা কাঁচের টোকরা জিন্সের প্যান্ট ভেদ করে ঢুকে পায়ের অনেকটা কেটে ফেলে।

কথা ছিল একজন ব্রিটিশ বন্ধুকে রিসিভ করব্য বিকেল চারটার সময়,তাঁকে খোঁজে পেতে প্রায় আমাকে এক ঘণ্টা খোঁজতে হয়।তাঁকে রিসিভ করি বিকেল পাঁচটায়।সে এই অবস্থা দেখে দৌড়ে অনেক দূর চলে যায়।শেষে অনেক খোঁজেপেতে তাঁকে বের করতে হয় আমাকে।

খেলা দেখে বাসায় ফেরার পড় ব্রিটিশ বন্ধু আমাকে জানাল, খেলার প্রথম ৮৫ মিনিট ভালাই শান্তশিষ্ট ছিল।দুই দলের সমর্থকেরা পাশাপাশি বসেই খেলা দেখছিল। 

কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার দুই মিনিট পুর্বে রাশিয়া গোল করে সমতা ফেরানোর পর গ্যালারিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।পরবর্তীতে,সমর্থকদের মধ্যে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। খেলা শেষ হওয়ার প্রায় অনেক্ষন পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ডি বার্নহ্যাম বলেন, ইংল্যান্ড দলের সমর্থকদের আচরণ ছিল লজ্জাজনক।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অন্তত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আমি যখন এই লেখা লিখছি ঘড়ির কাঁটায় বাজে রাত প্রায় আড়াইটা। এই রাতে বাসা থেকে কিছুটা দূরে শুরু হয়েছে একটি ছোট গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা। আমি বাসায় লিখতে লিখতে শুনছি পুলিশের গাড়ীর অবিরত সাইরেন!

এত এত ঘটন অঘটন ঘটানোর পরও কোন দল জয়ের মুকুট পড়তে পারেনি। ১-১ গোলে সমতা রেখে খেলা শেষ হয়েছে।পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে দুই দলের খেলোয়াড় এবং সমর্থকদের।

ভিডিও :

আপনার মন্তব্য

আলোচিত