১৯ মার্চ, ২০১৫ ২০:৩১
বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে এমন নির্লজ্জ্ব পক্ষপাতিত্ব হয়েছিল কীনা আমি জানি না। বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ডের আম্পায়ারেরা যে কাহিনির জন্ম দিয়েছেন সেটা নিতান্ত হাস্যকর অবাঞ্ছিত বালখিল্য বেহায়াপনা।
ক্রিকেট বাণিজ্যের নামে নির্লজ্জ্ব পক্ষপাতিত্বের কারণে আইসিসির প্রতি তীব্র ঘৃণা জানাচ্ছি।
আমরা বাংলাদেশ সৎ ক্রিকেটে বিশ্বাসি, খেলাকে খেলা হিসেবেই দেখতে আগ্রহি ছিলাম, হয়ত আমরা ক্রিকেট নিয়ে একটু বেশিই আবেগি কিন্তু বেহায়া পক্ষপাতিত্বের কারণে এভাবে বঞ্চিত হবো ভাবিনি।
বলের অর্ধেকের বেশি অংশ ছিল স্ট্যাম্পলাইনে, বোলার মাশরাফির আবেদনের জবাবে ফিল্ড আম্পায়ার ইয়ান গৌল্ড জানিয়ে দিলেন নটাউট। রিভিউয়ে গেলো বাংলাদেশ, সেখানে দেখা গেলো বল ছিল স্ট্যাম্পলাইনে এবং বলের মুভমেন্ট, হাইট সবগুলো মিলেই আঘাত করত উইকেটে। নাহ, এখানেও আম্পায়ার দিলেন নটাউট। ব্যাট করছিলেন তখন সুরেশ রায়না, রীতিমত রানের জন্যে সংগ্রাম করছিলেন তিনি।পরে করলেন অর্ধশতক।হতভাগ্য বোলারের নাম মাশরাফি!
শতক হাঁকানো ব্যাটসম্যান রোহিত শর্ম্মা তখন নব্বুইয়ের ঘরে। রুবেল হোসেনের ফুলটস দেখে হাঁকালেন, বল ওঠে গেলো শূন্যে, ক্যাচও ধরা হয়ে গেলো। ফিল্ডার-বোলার যখন উল্লাসে মাতবে তখন দেখা গেলো পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিমদার এক হাত তুলে ইঙ্গিত করছেন বল ছিল নো-বল!
আলিমদারের এই সিদ্ধান্তে হতভম্ভ সবাই- এটা কেমনে সম্ভব? কোমর সমান বল ত ছিল না। কমেন্ট্রিবক্সে লাফিয়ে ওঠলেন অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট শ্যেণ ওয়ার্ণ! প্রশ্ন করে ওঠলেন-এই বল কীভাবে নো-বল হয়, এটা কোনক্রমেই কোমরের ওপরে ছিল না। আলিমদারের মতো একজন আম্পায়ারের কাছ থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসা হতাশাজনক। বলটা তখন নিচু হয়ে নামছিল।
কমেন্ট্রিবক্স শুধুই নয় ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষণ টুইটারে টুইট করে বলেন-ওই সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় টুইটারে লক্ষ্মণ লেখেন, 'খারাপ সিদ্ধান্ত। বলটি অবশ্যই কোমরের ওপরে ওঠেনি। রোহিতের ভাগ্যপ্রসূত সুযোগ। বাড়তি ২০ রান পাওয়ার জন্য এটা ব্যাবধান গড়ে দিতে পারে।'
লক্ষ্মণের ধারণাই ঠিক হয়েছে- ৯০ রানে থাকা রোহিত পরে তুলে নিয়েছেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত তাসকিনের বলে বোল্ড হয়ে থেমেছেন ১৩৭ রানে গিয়ে, যার ওপর দাঁড়িয়ে ভারত পেয়ে যায় বিশাল এক সংগ্রহ।
এ ত গেলো ব্যাটিংকালিন সময়ে আম্পায়ারদের নির্লজ্জ্ব পক্ষপাতিত্বের ইতিহাস। বাংলাদেশ যখন ব্যাট করছিল তখন বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপের সফল ব্যাটসম্যানকে আউটের সিদ্ধান্ত জানান থার্ড আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস।
১৭তম ওভারের খেলা চলছিল। মোহাম্মদ শামির বাউন্সারে হুক করলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। লাইনে দাঁড়ানো ফিল্ডার দ্বিতীয় চেষ্টায় ক্যাচ ধরলেন তবে টিভি রিপ্লেতে দেখে গেল ক্যাচ ধরার সময় জাদেজার পা ছিল লাইনে। ক্রিকেটিয় নিয়মে এটি ছক্কা হবার কথা কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস খুব একটা সময় না দিয়েই লাল বাতি জ্বালিয়ে দিলেন অর্থাৎ আউট মাহমুদুল্লাহ!
গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের সেরা ব্যাটসম্যান আউট! এরকম সময়ে অনেকবার করে রিপ্লে দেখে তবেই সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন আম্পায়ার কিন্তু তড়গড়ি করে ভারতের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত দেয়ায় আম্পায়ারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে স্বাভাবিকভাবেই!
হ্যাঁ, আম্পায়ারেরা ভুল করতে পারেন, তারাও মানুষ কিন্তু ইচ্ছেকৃত ভুলগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায় আমি জানি না। ফিল্ড আম্পায়ার ইয়ান গৌল্ড, আলিমদার এবং থার্ড আম্পায়ার স্টিভ ডেভিসের খেলা পরিচালনার স্টাইল বলে দিচ্ছিল মাঠের খেলার চাইতে টেবিল গেমের ফলাফলের দিকেই তারা আগ্রহি।
আম্পায়ারেরা কেন সফল করবেন টেবিল গেম? কেন হবে টেবিল গেম? খেলা ত খেলাই! ১২তম বিশ্বকাপে এসে কেন হবে এমন খেলা? কার কী লাভ এতে?
আইসিসির বর্তমান ক্ষমতাধর তিন শক্তিশালী দেশ ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। কয়েক দিন আগে তারা বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশকে দ্বিতীয় সারির ক্রিকেট দেশে ফেলে দিতে অনেক চেষ্টা-কসরত করেছিল। আইসিসির অন্যান্য দেশগুলোর কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি কিন্তু বিগ-থ্রি দমে যাওয়ার পাত্র না।
গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচ থেকে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে নামার আগে ইতিহাস এবং পূর্ব পারফরম্যান্স বলছিল বড় টুর্ণামেন্টগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কাছে হারছে ভারত। ২০০৭ বিশ্বকাপ সর্বশেষ এশিয়া কাপ যার সবিশেষ প্রমাণ। তাছাড়া এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্স তাক লাগিয়ে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। ইংল্যান্ডকে হারানোর পর নিউজিল্যান্ডকে যেভাবে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ যেখানে ভারতের সাবেক খেলোয়াড়েরা বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।
টেবিল গেমের মুল কারণ বাণিজ্য। ১২০ কোটি লোকসংখ্যার দেশ ভারতের জয় খুব দরকার ছিল টুর্ণামেন্ট বাঁচিয়ে রাখতে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠান হলেও সে দেশগুলোতে উপমহাদেশিয় দেশগুলোর মতো তেমন সাড়া নেই। সুতরাং বিশাল এই জনসংখ্যার লোককে ক্রিকেটের মধ্যে রাখতে দরকার ছিল আইসিসির ছিল এ টেবিল গেম প্লে!
ফেয়ারপ্লে হলে বাংলাদেশ জিতে যেত তা বলছি না কিন্তু অন্তত লড়াই হতো। দুই দলের শক্তিমত্ত্বা বিচার করা যেত কিন্তু তা হয়নি। খেলার প্রথম অর্ধে যখন ধারাবাহিকভাবে আম্পায়ারেরা ভুল সিদ্ধান্তে ভারতের পক্ষে খেলা পরিচালনা করছিলেন তখনই আসলে ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। যার প্রভাব পরিলক্ষিত হয় খেলোয়াড়দের চোখেমুখে।
এত কিছুর পর ভারত আহামরি কোন স্কোর করতে পারেনি। ৩০২ রান এই রানের ফুলঝুরিময় বিশ্বকাপে খুব বেশি কিছু নয় যেখানে একাধিক চার শতাধিক রানের স্কোর হয়েছিল। বাংলাদেশের সামর্থ্য ছিল এই রান চেজের, এর আগে এই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ ৩১৭ রান চেজ করেছিল। কিন্তু যখন বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহকে আউট দিয়ে দেন আম্পায়ার তখন খেলা আর খেলা থাকে না। আম্পায়ার যেখানে দেখিয়ে দেওয়ার কথা ছিল সিক্স সেখানে ব্যাটসম্যানকে বলে দেন- তুমি আউট!
ক্রিকেট বাণিজ্যের যাঁতাকলে এ খেলা তার চিরকালিন ভদ্রলোকের খেলা পরিচিতির মোড়ক হারিয়েছে। ১৯ মার্চ সিডনিতে ক্রিকেট বাণিজ্যের নামে ক্রিকেটের কফিনে বিশাল এক পেরেক ঠুকে দিলো খোদ আইসিসি। এখন প্রমাণ হলো ক্রিকেট শুধু মাত্র খেলাই নয়; ক্রিকেট মানে রাজনীতিও!
পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলা বাংলাদেশকে টুপিখোলা অভিনন্দন!
আপনার মন্তব্য