ক্রীড়া প্রতিবেদক

০১ মে, ২০১৫ ১৭:৫৬

টেস্টে বাংলাদেশের সুন্দরতম দিন



টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য একেবারেই হাতেগোনা। ক্রিকেটের এই সংস্করনে বাংলাদেশ এখনো নবীন। ফলে পাঁচদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের দিন এসেছে খুব সামান্যই। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যেক'টি সুন্দরতম দিন, তারমধ্যে আজকেরটি নিঃসন্দেহে উপরের দিকেই থাকবে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের ৪র্থ দিনটি একেবারেই নিজের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। আরো স্পষ্ট করে বললে- নিজের করে নিয়েছেন তাইজুল তামিম আর ইমরুল। সকালে বল হাতে তাইজুল ঝলকের পর দিনের বাকীটা সময় ব্যাট হাতে তামিম-ইমরুল তান্ডব। ৪র্থ দিনে কোনো সুযোগই পায় নি পাকিস্তান। এরফলে ৩য় দিন শেষে ম্যাচে অনেকটাই পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ ৪র্থ দিনে ফিরে এসেছে ভালোমতোই। এই অবস্থা থেকে যে কোনো ফলাফলই অপ্রতাশিত হবে না। এমনকি বাংলাদেশর জয়ও! অথচ ৩য় দিন শেষে কে ভাবতে পেরেছিলো এমনটি!

তামিম ইকবাল যখন খেলেন বোলার-ফিল্ডারদের দর্শক হয়ে যেতে হয়। প্রতিপক্ষ দল তখনও যদি তামিমকে প্রতিপক্ষ ভাবেন তাহলে নির্ভেজাল ক্রিকেট আনন্দ থেকে তাদের বঞ্চিত হয়ে যেতে হয়। কে জানে খুলনায় পাকিস্তানিদের মনের অবস্থা কেমন ছিলো?

ওয়ানডেতে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির পর প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ দলের খুব প্রয়োজনে তামিম যেভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন সেক্ষেত্রে ম্যাচে ফিরছে বাংলাদেশ, বলাই যায়! তামিম আর ইমরুলের দুর্দান্ত ডাবল সেঞ্চুরি পার্টনারশীপে তিন দিন ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেও প্রথম বারের মতো চাপে পড়ছে পাকিস্তান।

তামিম একাই সেঞ্চুরি করেননি, সেঞ্চুরি করেছেন তার ওপেনিং পার্টনার ইমরুল কায়েসও। এই জুটির অবিচ্ছন্ন ২৭৩ রান বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম উইকেট এবং যে কোন উইকেট জুটির সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এর আগে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তারা দুজন করেছিলেন ২২৪ রান। খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে সে রেকর্ড ভঙ্গ করে নতুন রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ।

কেবল প্রথম উইকেট জুটির বাংলাদেশি রেকর্ডই নয় তামিম-ইমরুল জুটি আরেকটা রেকর্ড ভাঙলো। টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে যে কোন উইকেটে সেরা জুটির রেকর্ড মুশফিক ও আশরাফুলের এবং তা ছিল ২৬৭ রানের। খুলনায় তামিম-ইমরুল, মুশফিক-আশরাফুলকে দ্বিতীয়তে নামিয়ে আনলেন।

তামিম ইকবালের এ সেঞ্চুরি হচ্ছে পর পর তিন টেস্টে তিন সেঞ্চুরি আর ইমরুল কায়েসের পর পর দুই টেস্ট টানা দুই সেঞ্চুরি। তামিম তার সেঞ্চুরির মাধ্যমে স্বদেশি মোহাম্মদ আশরাফুলের তিন টেস্টে তিন সেঞ্চুরির রেকর্ডে ভাগ বসালেন।  

বাংলাদেশের যে কোন উদ্বোধনী উইকেট জুটির সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডই কেবল নয় এই টেস্ট তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস দুজনই তাদের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। এর আগে এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে তামিমের ২৫ আর ইমরুলের ৫১ রানই ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন।  

বাংলাদেশের ইনিংস শুরুর আগে পাকিস্তানিদের ভাবনায় ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট না করা কিন্তু তামিম-ইমরুলের পাল্টা আঘাত সে হিসাবকে বদলে দিয়েছে। দিনশেষ তামিম ১৩৮ আর ইমরুল ১৩২ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশ মাত্র ২৩ রানে পিছিয়ে আছে পাকিস্তান থেকে।  

এর আগে প্রথম ইনিংসে ৬২৮ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকরা ৩৩২ রানে অলআউট হওয়ায় ২৯৬ রানের লিড পায় তারা।

শুক্রবার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ৫ উইকেটে ৫৩৭ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে পাকিস্তান।

বৃহস্পতিবার যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই যেন শুরু করেন সরফরাজ-শফিক। দ্রুত রান তুলতে থাকা এই জুটি ভাঙার কৃতিত্ব অভিষিক্ত মোহাম্মদ শহীদের। তার বলে বদলি ফিল্ডার লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরেন সরফরাজ।

৮২ রান করে পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ভাঙে ১২৬ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি। এরপর আর ভালো করতে পারেনি অতিথিরা। স্বাগতিকদের চমৎকার বোলিংয়ে ৩৪ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান।

তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে দ্রুত ফিরে যান পাকিস্তানের শেষ ব্যাটসম্যানরা। ছয় টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারে এনিয়ে তৃতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট নেয়ার পথে ওয়াহাব রিয়াজ, ইয়াসির শাহ ও জুলফিকার বাবরকে আউট করেন তাইজুল।

১৬৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে তাইজুল বাংলাদেশের সেরা বোলার। এই দিনের পতন হওয়া অন্য উইকেটটি নেন সাকিব আল হাসান। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে শফিককে ফেরান বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার।

শুক্রবারও মাঠে নামেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। তার জায়গা আগের দুই দিনের মতো ‘কিপিং’ করেন ইমরুল কায়েস। দিনের আট ওভার খেলা হওয়ার পর তিনি সরে দাঁড়ালে গ্লাভস হাতে উইকেটে পেছনে আসেন মাহমুদউল্লাহ। পরে বাবরকে স্টাম্পিংও করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত