স্পোর্টস ডেস্ক

০৩ জুলাই, ২০১৭ ০১:১৫

বিসিবির সভাপতি পদ ছাড়তে চান নাজমুল হাসান

‘সেপ্টেম্বরে হতে যাওয়া বিসিবি নির্বাচনে সভাপতির পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাও করতে পারি।’ -কথাটা নাজমুল হাসান পাপনের। আগেও কয়েকবার বলেছেন, রাজনীতি ও চাকরির পাশাপাশি ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বে থাকায় তার ওপর বেশ চাপ পড়ছে। আগামীতে তাই সভাপতি পদে নির্বাচন করতে চান না। রোববার সেই কথাটাই আরেকবার বললেন দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থার প্রধান।

বিসিবির সভাপতি পদে থাকায় আইসিসি ও এসিসি’র সভায় প্রতিনিধিত্ব করতে হয় নাজমুল হাসানকে। বোর্ডের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হয়। সব মিলিয়ে অনেক দায়িত্ব। একসঙ্গে তালমিলিয়ে সব কাজ ঠিক রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রোববার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তাই সভাপতি পদে আর নির্বাচন না করার ইঙ্গিত তার।

‘ক্রিকেট বা খেলাধুলা এমন একটা জিনিস, যেটা থেকে আমাদের দূরে সরে থাকা কঠিন। ক্রিকেট বোর্ডে যদি থাকতেই হয় পরিচালক হয়ে থাকাই ভাল। সভাপতিত্ব করা এখন আমার জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এটা হল আমার মনের কথা। কেননা এখানে পর্যাপ্ত সময় দিতে হয়। আমি মনে করি, যে পরিমাণ সময় আমাকে ক্রিকেটে দিতে হচ্ছে সেটা মোটামুটি ফুলটাইম। এরপর কোন সমস্যা হলে সেটাও দেখতে হচ্ছে, যেহেতু আমি সব প্লেয়ারের সঙ্গেই কমবেশি জড়িত। চাপটা অনেক বেশি। তাছাড়া ভ্রমণও বেশি হয়ে যাচ্ছে। আইসিসি, এসিসি, চাকরি ও রাজনীতি তো আছেই। সব মিলিয়ে চাপ সামলানো কঠিন হয়ে গেছে।’

২০১২ সালে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেন নাজমুল হাসান। পরের বছর ১০ অক্টোবর হন নির্বাচিত সভাপতি। গত চার বছর সাফল্যের সাথেই দায়িত্ব সামলেছেন। এ সময়ে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। শক্তিশালী হয়ে উঠেছে টিম টাইগার্স। ওয়ানডে টেবিলে নিজেদের সেরা অবস্থানে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। টেস্টেও শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারাচ্ছে লাল-সবুজের দল। শক্ত ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়েছে টাইগার ক্রিকেট।

নাজমুল হাসান মনে করছেন তিনি বোর্ডে না থাকলেও পরে যিনি আসবেন ক্রিকেটকে ঠিকই এগিয়ে নেবেন, ‘আহামরি শূন্যতা তৈরি হবে না। আমি না থাকলে অন্য যেই আসুক, খারাপ হবে না। আমাদের দল যে ছন্দে আছে তাতে আগামী ৮ বছর সমস্যা হওয়ার কথা না। তাছাড়া কেউ এসে তো আর চাইবে না তার সময়টা খারাপ যাক।’

তিনি নির্বাচন না করলেও বিসিবি নির্বাচন ঠিক সময়েই হবে জানালেন নাজমুল, ‘ঠিক সময়েই নির্বাচন হবে। আগেও হতে পারে; দেরি হওয়ার কোন সুযোগই নেই।’

গেল চার বছরে বাংলাদেশ দল ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্যে আছে। এজন্য সিনিয়রদের পাশাপশি নবীন ক্রিকেটারদের অবদানকে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন বোর্ড সভাপতি, ‘সিনিয়র প্লেয়ারদের অবদান অস্বীকার করার কোন পথ নেই। এখানটায় আপনি যদি দেখেন, মেজর ব্রেক-থ্রু এসেছে দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোতে। পাকিস্তান, ভারত, সাউথ আফ্রিকা, এই তিনটা সিরিজ ছিল টার্নিং পয়েন্ট। যাতে তামিম-সাকিব-মুশফিক ছাড়াও ম্যাচ জেতাতে নতুন প্লেয়ারদের বড় অবদান ছিল। আফ্রিকার সাথে একচেটিয়া খেলে গেছে সৌম্য। বেশীরভাগ ম্যাচ জেতার পেছনে কারণ ছিল মোস্তাফিজ। শততম টেস্ট জিতলাম, মোসাদ্দেকের কিন্তু দারুণ ভূমিকা ছিল। ও ইনিংসটা না খেললে হয়ত অন্যরকম হয়ে যেতে পারত। ইংল্যান্ডের সাথে টেস্ট জয়ে ছিল মিরাজের অসাধারণ বোলিং। নতুন নতুন প্লেয়ার আসাতেই আমরা সাফল্যের দিকে আছি।’

প্রতিভাবান ও তরুণ খেলোয়াড়দের তাই আরও বেশি বেশি সুযোগে পক্ষে নাজমুল হাসান, ‘দেশে আরও অনেক ভালো ভালো প্লেয়ার আছে। সমস্যা হল কাকে বাদ দেব। ওদের সুযোগ না দিলে আবার ওরা হঠাৎ কিভাবে ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলবে। সেজন্য এখনই ওদের দলে টানতে হবে। কাউকে না কাউকে এক-দুই ম্যাচে বসিয়ে দিতে হবে।’

এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় গেলে বোর্ড অহেতুক সমালোচনার মুখে পড়ে বলেও মনে করছেন সভাপতি, ‘কাউকে বাদ দিতে হয় যখন, তখন অনেকেই মনে করে বোর্ডে হয়ত গণ্ডগোল চলছে। পছন্দ-অপছন্দের কথা আসে।’

শত সমালোচনার পরেও অবশ্য নতুনদের সুযোগের পক্ষেই মত তার, ‘দেশের কথা, দলের কথা চিন্তা করে আমাদের তো নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দিতেই হবে। তার মানে এই নয় পুরনো কেউ বাদ পড়ছে। একটা ম্যাচ হয়তে খেলল না। তাতে ওরকম কিছু হয় না। নবীনদের এখন যদি সুযোগ না দেই, একসময় দেখা যাবে ৭-৮ জন সিনিয়র প্লেয়ার অবসরে চলে গেলে বিরাট একটা শূন্যতা তৈরি হবে। তখনকার অবস্থাটা একবার চিন্তা করে দেখুন। তাই নতুন প্লেয়ার আসার সুযোগ আরও বাড়াতে হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত