মারূফ অমিত

২২ জুন, ২০১৫ ০৪:৩৬

টাইগারদের সিরিজ জয়: ক্রিকেটপ্রেমীদের অনলাইন প্রতিক্রিয়া

ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের "ওডিআই" সিরিজে জয়ী হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল সরব। ঢাকা, সিলেটসহ সারা দেশে আনন্দের আবহে মিছিল করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছিল অনলাইন উদযাপন পর্ব। ফেসবুকের ক্রিকেটপ্রেমীদের তেমন কিছু প্রতিক্রিয়া, উচ্ছ্বাস আর আশাবাদের স্ট্যাটাস:

সাংবাদিক জাহিদ নেওয়াজ খান মুস্তাফিজ,সাব্বির,সৌম্যদের সোনা রোদের সাথে তুলনা করে লিখেছেন: "হাত নাড়াতে শেখার পর থেকেই সম্ভবত: ব্যাটে হাত, দৌড়াতে শেখার পর থেকেই রান।

স্কুলে যাওয়ার আগেই সার্কিট হাউজ মাঠে লিগ দেখতে দেখতে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বাদ ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামে যাকে তখন মারাকানার মতো বড় মনে হতো। এমসিসি, হায়দ্রাবাদ ডেকান ব্লুজ এরকম দলের সঙ্গে ম্যাচে লাঞ্চের সময় দীর্ঘ মিছিলের মতো মানুষের ভিড়ে বাসায় এসে ভাত-টাত খেয়ে আবার যেতাম। কল্লোল কচিকাঁচার মেলা বা এরকম কোনো ক্লাব একবার বাটারবন খাইয়েছিলো। বিদেশীদের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ দেখার মতো সেই বাটারবনের স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে।আমাদের লোকাল হিরো বেলাল ভাই তখন বাংলাদেশ মধ্যাঞ্চলের প্লেয়ার। সকাল-বিকাল তাকে দেখি তাই হায়দ্রাবাদের জাহিদ নামে একজন নামের মিলের কারণেই হয়তো আরও বড় হিরো। একবার স্টেডিয়ামের কাঁটাতার ডিঙিয়ে তার কাছাকাছি চলে গিয়ে চীৎকার করে বললাম, মাই নেম ইজ জাহিদ। টু-ও বলার দরকার ছিলো, ৭/৮ বছর বয়সে সেটা বোঝার কথা না। মিডঅফ বা মিডঅনে ফিল্ডিং করছিলেন তিনি। আমার চীৎকারে কাছে এসে টফি বা চুইংগাম দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি সেটা খাইনি। পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি অনেকদিন।

এরপর বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে দেখা টেলিভিশনে। ৮৬ সাল হবে সম্ভবত,এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিলো শ্রীলংকা। কে কতো রান করেছিলো মনে নেই, রেকর্ড দেখলেই জানা যাবে। কিন্তু মনে আছে ১০০র কিছু বেশি রান করা, হতে পারে ১৩২, বাংলাদেশ অলআউট যে হয়নি এটাই ছিলো আমাদের কাছে গৌরবের। আরো পরে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের সম্ভাবনা জেগেছিলো ৯০ দশকের শুরুর দিকে, শারজাতে এশিয়া কাপেই হবে হয়তো। এবারও প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা। প্রথম বলেই বোধহয় উইকেট পেয়েছিলেন সাইফুল, ক্যাচ ধরেছিলেন বুলবুল। ওই ম্যাচে যতোদূর মনে পড়ে ২১২ রানে বুকড হয়েছিলো শ্রীলংকা। কিন্তু আমরা অলআউট হয়ে যাই ১৮৭ বা ১৮৮ রানে। শেষের দিকে অসাধারণ এক দৌড়ের ওপর একটা ক্যাচ নিয়েছিলেন ভাস। জয়ের সম্ভাবনা এসেও এই হারিয়ে যাওয়াটা দেখা টেলিভিশনে। আর সামনাসামনি এরকম সম্ভাবনা এসে মিলিয়ে যাওয়াটা দেখা এখনকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। বৃৃষ্টিতে সম্ভবত: ৩৮ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ১৩৬/৩৭/৩৮ এরকম রান করেছিলো। শেষ বলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য বোধহয় ২ রানের দরকার ছিলো। বোলার ছিলেন হিথ স্ট্রিক, ব্যাটিংয়ে আমাদের পেসার জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার দুলু। কিন্তু হয়নি। আগেই বেরিয়ে যাওয়ার কারণে দুলুর উইকেট গুঁড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন আমাদের এখনকার বোলিং কোচ স্ট্রিক। তবে এ হারের চেয়েও পরাজয়ের জ্বালা বেশি হয়েছিলো রেডিওতে শোনা নাইরোবির সেই ম্যাচ যেটা হেরে আমরা ৯৬ বিশ্বকাপ খেলতে পারলাম না।

তবে ধীরে ধীরে ততোদিনে কিন্তু আমরা পরিণত হতে শুরু করেছি। ৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত। ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াও খোঁজখবর শুরু করলো। ইউএনবিতে শখের বশে দুয়েকটা ক্রিকেট রিপোর্ট করার কারণে আমাকে খুঁজে নিলো ক্রিকইনফো। তার চেয়েও ভয়ংকর বিষয় ঘটলো ৯৯ বিশ্বকাপের আগে। আমার কাছে অফিশিয়াল স্যুভেনির কমিটি লেখা চেয়ে বসলো। অন্য লেখকদের নাম মনে করলে এখনও লজ্জায় মরে যাই। লেখক তালিকায় ছিলেন সুনীল গাভাস্কার, ম্যালকম মার্শাল, ব্যারি রিচার্ডস; এরকম বিখ্যাত সব ক্রিকেট লিজেন্ডস। অন্যরা এনালিসিস দিলেও আমার লেখা ছিলো রিপোর্টের মতো। ইতিহাস সাক্ষী, তখনকার বিসিবি প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরীকে কোট করে আমি লিখেছিলাম, স্কটল্যান্ড ছাড়া আরও একটি দলকে হারিয়ে চমক দেখাতে পারে বাংলাদেশ। সেই গৌরব এসেছিলো পাকিস্তানবধের মাধ্যমে। ওই রাতে আমরা পরে গাবতলী গিয়ে গরু কিনে এনেছিলাম।

পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক জয়ের পথ ধরেই টেস্ট স্ট্যাটাস। পনেরো বছরে আজকের অবস্থায় বাংলাদেশ। ঘরের মাটিতে টানা ১০ ম্যাচে জয় আমাদের। পাকিস্তানের পর প্রথমবারের মতো ভারতের সঙ্গে সিরিজ জয়। র‍্যাংকিংয়ে ৭ নম্বরে যাওয়ার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতাও অর্জন করেছি। আর সোনা রোদের আলো হয়ে এসেছে মুস্তাফিজ যেখানে সূর্যের মতো মাশরাফি, চাঁদের আলো হয়ে সাকিব-মুশফিক-তামিম।

আজ যখন বিস্ময় আনন্দে আমরা ভেসে যাচ্ছি তখন প্রেক্ষাপটটাও মনে হচ্ছে। এসব কিছুই হঠাৎ পাওয়া নয়। আসলে আমাদের বেড়ে উঠার গল্পের মতোই ক্রিকেটে আমাদের উত্থান। এক মুস্তাফিজই তাই শেষ নয়। পূর্ব প্রজন্ম যে ভিতটা দিয়ে গেছে, যে পরিবেশটা নিশ্চিত করে গেছে, সেখানে আরও মুস্তাফিজ, আরও সাব্বির, আরও সৌম্যরা আসতেই থাকবে। ভারত-পাকিস্তানই তাই শেষ নয়, টাইগারদের নান্দনিক থাবায় শিল্পিত ক্ষত-বিক্ষত হবে অন্যসব ক্রিকেট পরাশক্তিও। আমাদের সমান বয়সী বাংলাদেশের যে ক্রিকেট, দর্শক হিসেবে আমরা যে ক্রিকেটকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজকের অবস্থায় দেখছি, সেই ক্রিকেটের উত্তর প্রজন্ম নিশ্চিত বিশ্বকাপ দেবে আমাদের পরিণত বয়সের আগেই।"

সাংবাদিক জ ই মামুন লিখেছেন: "ধবল ধোলাই, বাংলা ওয়াশের অপেক্ষা। সত্য সুন্দর শুভ্রতার প্রতীক সাদা। সাদা ছাড়া অন্য কোনো রঙ ভাসেনা আর চোখের সামনে। একটাই ধোলাই হবে, ধবল ধোলাই! জয় বাংলা, জয় বাঘের বাচ্চার দল!"

আইনজীবী নূর উস সাদিক তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন: "ভারতীয় ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সিরিজ জয় উপলক্ষে আমার অহংকারের সব উপলব্ধি আমি উৎসর্গ করে দিলাম আগামী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে "

শামীম আরা নীপা লিখেছেন: "কিচুই লিখতাম পারতাছি না ক্যারে? টিভির সামনে গেছি আর আসছি, উত্তেজনায় বইতাম পারছি না ঠিক মত! জীবনে এত পরীক্ষা দিছি, কোনদিন হার্টবিট বাড়ে নাইক্কা মগার আইজ হার্টবিট বাইড়া অবস্থা খারাপ জিতা গেইম জাইনাও! আবেগে সত্যই কাইন্দালছি! জিলাপি খাইছি তারপর লিখতাম বসছি। সাবাশ বাংলাদেশ,সাবাশ মাশরাফি বাহিনী। চুম্মা দিলেও আইজ মন ভরবো না, আমার বাচ্চাদের কে কাঁধে তুইলা য্যামনে দৌড়াইতাম ঠিক তেমন দৌড়াইতে মন চাইতাছে বাচ্চা লোক গুলারে কাঁধে তুইলা!

ভালবাসা এবং অভিনন্দন এবং শুভকামনা নিরন্তর। বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন জাগানিয়া বাহিনী, তোমাদের কারণেই আজ বাঙালি আনন্দের জলে সিক্ত, বাকহারা, জয়ের স্বপ্নে বিভোর। সাবাশ,সাবাশ, সাবাশ।"

নাসরিন হক সামনে চলার প্রত্যাশা নিয়ে লিখেছেন:"হালুম, অভিনন্দন টিম বাংলাদেশ। জয় বাংলা বলে আগে বাড়ো।"

তানভীর চৌধুরী পিয়েল লিখেছেন:"অনন্য রেকর্ড মুস্তাফিজের! প্রথম দুই ম্যাচের প্রতিটিতে পাঁচ উইকেট। শান্তি!"

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাইদুল রিমন লিখেছেন: "বিশ্বকাপে ভারতের জুচ্ছুরি করে আমাদের হারিয়ে দেয়ার পর কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। আজ আমরা সত্যি সত্যি প্রতিশোধই নিলাম। কি যে ভাল লাগছে। কি দাপুটে দুইটা জয়ই। আমরা চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিছি সেই দিন আর নাই, আমাদের সাথে তোমাদের পার্থ্যক্যটাও দেখিয়ে দিছি। আমরা সিরিজ জিতেছি বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি, বিশ্ব সেরা ব্যাটিং লাইনআপ, ধোনির মত বিশ্বসেরা ক্যাপ্টেনের নেতৃত্ব দেয়া এক দলের বিপরীতে। এই ভারতকে ছোট বা দুর্বল করে দেখা ভূল হবে। কারন তাতে আমাদের জয়ের মহিমা খাটো হয়। অভিনন্দন টাইগারস। অভিনন্দন মুস্তাফিজ।"

ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আলী কামাল সুমন লিখেছেন: "হিসেবে ইন্ডিয়ার ১১টা প্লেয়ারকে কিন্তু একলা আমাদের মোস্তাফিজই খতম করে দিয়েছে! গত ম্যাচে ৫, আর এই ম্যাচে ৬!আগামী ম্যাচে 'আইসিসি' খতম করার মিশনে নামবে মোস্তাফিজ!! কারণ ইন্ডিয়ার আর কোন উইকেট নাই যে! অলাউট!"

বাংলাদেশের ভারত বধে ভারতীয় অনেক বাঙালিকেও অভিনন্দন জানিয়ে স্ট্যটাস দিতে দেখা গেছে।

অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় নামের এক ভারতীয় লিখছেন: "সাবাস বাংলাদেশ। যোগ্য দল হিসেবে সিরিজ জয় করলো ধোনির শেষের শুরু হলো কি না সেটাও আলোচনার বিষয় হবে আগামী দিনে, তবে শাস্ত্রীটা কোচিং থেকে বিদায় নিলে সবচেয়ে খুশী হবো ওভাররেটেড মাল একটা, খালি গাভাসকারের সাথে গুটলিং করে করে পয়সা কামিয়ে গেলো, আর গাভাসকারের নেতৃত্বে একদল লোক চিরকাল বিশাল ক্রিকেটিং ব্রেন বলে প্রচার করে ওর জিন্দেগী বানিয়ে দিয়ে গেলো, আপদ বিদেয় হলে ভালো হয় এই সুযোগে যে কোন দিন দ্রাভিড বা গাঙ্গুলী বা কুম্বলে ওর থেকে বেটার কোচ হবে।"

রাজর্ষি বসু লিখেছেন-  "একটাই পাওয়া দুর্বিনীত উত্তর ভারত ও গোবলয়বাসী বাঙালি রক্তের তেজ বুঝবে"

সনাতানু কুমার দাস তাঁর বাংলাদশী বন্ধুদের অভিনন্দন জানিয়ে লিখছেন-
"বাংলাদেশের বন্ধুদের অনেক অভিনন্দন ।যোগ্য দল হিসাবেই আপনারা সিরিজ জিতে নিয়েছেন ।আমি পুরো খেলা দেখিনি ।যতটুকু দেখেছি তাতে আপনাদের খেলোয়াড়দের আগ্রাসী মনোভাবটা চোখে লেগে আছে ।একজন বাঙালী হিসেবে নয় ,একজন ভারতীয় হিসেবেই আপনাদের ক্রিকেটীয় শক্তিকে সমীহ করছি ।অনেক অনেক অভিনন্দন ।আপনারা আরো অনেক গৌরব আনুন।"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত