ক্রীড়া প্রতিবেদক

১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:৫২

সিলেটের শুরুই কী মাশরাফির শেষ?

আজ (শুক্রবার) আরেকটি অভিষেকের অপেক্ষায় সিলেট। টেস্ট, টি২০-র পর আজ বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের মধ্য দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হচ্ছে সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। সাড়ে ১৮ হাজার ধারণ ক্ষমতার এই নয়নাভিরাম স্টেডিয়াম আজ পা রাখছে একদিনের ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

দ্বিতীয় ম্যাচটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতে নিয়ে আজকের ম্যাচকে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে পরিণত করেছে। ফলে দু’দলের কাছে এই ম্যচটি হয়ে ওঠেছে সিরিজ জয়ের মিশন। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অন্য সবকিছুই গৌণ হয়ে যায়।

তা না হলেও সিলেটের অভিষেকের মতো আরেকটি কারণেও আজকের ওয়ানডেটি বাংলাদেশ ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ম্যচই হতে পারে দেশের মাটিতে মাশরাফি বিন মর্তুজার শেষ ম্যাচ। সিলেটেই দেশীয় মিশনের সমাপ্তি টানতে পারেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি।

২০১৯ বিশ্বকাপকে যদি মাশরাফি ক্যারিয়ারের ‘ফিনিশিং লাইন’ ভাবেন, তবে সিলেটের ওয়ানডেটা দেশের মাঠে অধিনায়কের শেষ ম্যাচ হিসেবে ধরতে হবে। যদিও শেষ কি না, এ প্রশ্নে মাশরাফি আগের মতোই বলবেন, ‘বলতে পারছি না কী হবে সামনে। হতেও পারে, নাও হতে পারে।’

তবে দেশের মাঠে ‘মাশরাফির শেষ’ ধরে সাংবাদিক থেকে শুরু করে দর্শক—আগ্রহের কমতি নেই! সিলেট স্টেডিয়ামে এর আগেও আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে। এই তো কদিন আগে বিশাল ঢাকঢোল পিটিয়ে টেস্ট অভিষেক হয়েছে দৃষ্টিজুড়োনো এই ভেন্যুটির। গত বছর বিপিএল থেকেই ভীষণ পরিচিতি পেয়েছে মাঠটি। তবুও আজকের ম্যাচটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ যেনো সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রথম গেটের টিকিট বুথে বৃহস্পতিবার ছিলো উপচে পড়া ভিড়। এ তো গেলো কাউন্টারের কথা, আদতে নগরজুড়েই তো টিকিটের জন্য হাহাকার।

এ ম্যাচ নিয়ে সংবাদমাধ্যমেরও যে ভীষণ আগ্রহ, সেটি প্রেসবক্স দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টেও আসেননি এমন অনেকে এসেছেন ম্যাচটা কাভার করতে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফিকে বিদায়-সংক্রান্ত একটা প্রশ্নও করেননি কেউ। একজন প্রশ্ন করলেন তাঁর এক বিশেষ অর্জন নিয়ে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের নিয়মিত অধিনায়কেরই দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্ট ম্যাচেই ছিটকে পড়েন মাঠ থেকে। সেন্ট ভিনসেন্টে ওই ঘটনার পর ফিরে এসে আবার অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন। ২০১০ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে চোট পেয়ে আবারও তাঁকে চলে যেতে হয় মাঠের বাইরে। ২০১১ বিশ্বকাপে বাদ পড়াটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা। প্রায়ই বলেন, অধিনায়কত্ব দূরে থাক, ২০১১ বিশ্বকাপে বাদ পড়ার পর ক্যারিয়ারটা আর এগোবে কি না, সেটি নিয়েই ছিলেন অনিশ্চিত। মাশরাফি তবুও ফিরেছেন, সংশপ্তক হয়ে লড়েছেন। পুরস্কার হিসেবে জাতীয় দলকে লম্বা সময়ের জন্য নেতৃত্ব দেওয়ার স্বাদ পেয়েছেন ২০১৪ সালের অক্টোবরে, যেটি এখনো চলছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে সফলতম অধ্যায় রচিত হয়েছে তাঁরই নেতৃত্বে।

গত ওয়ানডেতে ছুঁয়েছিলেন হাবিবুল বাশারকে। আজ টস করতে নামলেই হাবিবুলকে টপকে রেকর্ডটা নিজের করে নেবেন মাশরাফি। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচে (৭০) নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডটা হবে তাঁরই। মাশরাফি কীভাবে দেখছেন এই অর্জন?

অধিনায়ক জানালেন, কখনো ভাবেননি আসতে পারবেন এতটা দূর, ‘শুরু যেমন করেছিলাম, সে রকম আশা নিয়ে শুরু করিনি। দুবার অধিনায়কত্ব পেয়েছি। শুরুতে এক-দুই-তিন-চার-পাঁচ ম্যাচ পর চোটে পড়ে গিয়েছি। অধিনায়কত্ব নিয়ে কখনো ভাবিনি। আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাংলাদেশের হয়ে খেলা। প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যখন (অধিনায়কত্ব) পাই, অনেক আশা ছিল। টেস্টে তখন দারুণ ছন্দে ছিলাম। ২০১৪ সালে যখন আবার পাই, তখন নিজেকে নিয়ে ভবিষ্যতে চিন্তা করা বা খেলোয়াড় হিসেবে কোনো কিছু ঠিক করতাম না। চলতে থাকুক যত দিন পারা যায়—এটাই ভেবেছি। এভাবে করতে করতে প্রায় চার বছর হতে যাচ্ছে। এটা আমার এবং আমার পরিবারের জন্য অনেক গর্বের ব্যাপার। বাংলাদেশ দলে লম্বা সময়ে অধিনায়কত্ব করতে পেরেছি। কাল যদি মাঠে নামতে পারি, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি অধিনায়কত্ব করার সুযোগ হবে। অবশ্যই এটা অসাধারণ অনুভূতি।’

মাশরাফির মনে যখন অন্য রকম অনুভূতি, তখন কান পাতলে শোনা যাচ্ছে বিদায়ের করুণ সুর। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবারের মতো খেলতে এসেছেন সিলেটে। এই ‘প্রথম’ই যদি দেশের মাঠে তাঁর ‘শেষ’ হয়ে থাকে, এ অনুমানে সংবাদ সম্মেলন শেষে অনেক সাংবাদিক পেশাদারি আবরণ থেকে বেরিয়ে ছবি তুলতে চাইলেন অধিনায়কের সঙ্গে। তখন মাশরাফির রসিকতা, ‘শেষ ম্যাচ বলে ছবি তুলতে চান?’

সাংবাদিকেরা নিশ্চুপ। ‘ম্যাশ’কে নিয়ে যে তাঁদের শেষ বলতে ইচ্ছে করে না!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত