সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১৪ অক্টোবর, ২০২০ ১৬:৫৭

ঘরে থেকেই সাজা ভোগ করবে ১৪ শিশু, করতে হবে ৮টি কাজ

অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয় সেটাই আইনের নিয়ম, কিন্তু বিচারের কাঠগড়ায় যখন শিশু তখন আদালতও তাদের ভষিষ্যৎ কথা চিন্তা করে দিলেন ভিন্নধর্মী সাজা। বুধবার বিভিন্ন অপরাধে সুনামগঞ্জে শিশু অপরাধের ১০ টি মামলায় রায় দিয়েছেন আদালত। ওইদিন দুপুুরে নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ রায় প্রদান করেন।

রায়ে ১৪ শিশুকে একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তদারকির মধ্যমে বাড়িতে থেকে ৮ টি শর্ত পালনের নির্দেশ দেন আদালত।

মামলায় শিশু আসামিরা হলেন, আহমেদ সালেহ তায়্যিব (পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র পাস করে টাকা গ্রহণের অপরাধ), আবু সাইদ, মিজানুর রহমান, রাব্বুল মিয়া, জুনায়েদ আলম  (মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিকটিমের ছবির সাথে সংযুক্ত করে ফেইসবুকে ছাড়া ও মানহানি),  মামুন মিয়া (পুলিশকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলে বাধা প্রদান ও আসামি পলায়নে সহায়তা করা), রুহুল আমিন (শ্লীলতাহানির অপরাধে অভিযুক্ত), আলী আকবর, মো.মন্তাজ আলী (দলবদ্ধভাবে লাঠি দিয় মারপিঠ করে সাধরণ জখম করার অপরাধ), মো. তারেক (মাদক রাখার অপরাধ), আব্দুল হান্নান (লাঠি দিয়ে মারপিঠ করার অভিযোগ),  রতন বিশ্বাস (বিরুদ্ধে মাদক রাখার অভিযোগ), ফয়জুল ইসলাম (জুয়া খেলার অপরাধ) এবং দ্বীন ইসলাম (দলবদ্ধ ভাবে লাঠি দিয় মারপিঠ করে সাধরণ জখমসহ হত্যার হুমকি প্রদানের অপরাধ)। আদালত তাদের প্রত্যেককে আমাগী ১ বছর প্রবেশনের মাধ্যমে বাড়িতে থেকে করতে হবে বিভিন্ন সংশোধনমূলক কর্মকাণ্ড করার নির্দেশ দেন।

বিজ্ঞাপন



প্রবেশনের শর্তনুযায়ীদের তাদের প্রত্যেকেকে ৮টি শর্ত মানতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তার মধ্যে প্রত্যেকে বাবা মায়ের আদেশ নির্দেশ মেনে চলতে হবে, বাবা মায়ের সেবা করা,  প্রতিদিন যার যার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা, প্রত্যেকে কম পক্ষে ২০টি গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করা, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে, মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে এবং ভবিষ্যতে কোনও অপরাধারে সাথে নিজেকে না জড়ানোর নির্দেশনা প্রদান করেন আদালত।

এদিকে মামলার রায়ে খুশি হয়েছেন শিশুদের অভিভাবকরা। আদালতের দেওয়া নির্দেশনাগুলো তাদের সন্তানদের পালনে ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে বলে ধারণা তাদের।

শিশু অপরাধে অভিযুক্ত এক শিশুর অভিভাবক নজরুল ইসলাম বলেন, আদালতে  রায়ে  আমরা খুশি হয়েছি। আদালত তার ভবিষ্যতের উন্নয়নের যে ৮টি শর্ত দিয়েছেন তা সে পালন করবে এবং আমরা তার দিকে নজর রাখবো। আমি চাই আমার সন্তান যেন ভবিষ্যতে এই কালো ছায়া থেকে বেড়িয়ে এসে আলোর পথে চলতে পারে।

এ ব্যাপারে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. রুহুল তুহিন বলেন, আমাদের বিচার অঙ্গনে এই আইনটি এতোদিন প্রয়োগ ছিলনা আজকে আমি মনেকরি যুগান্তকারী দিন। আজকে ১০টি মামলায় ১৪ জন অভিযুক্ত শিশুকে আদালত প্রবেশন কর্মকর্তার অধিনে ১ বছর বাড়িতে থেকে প্রবেশন শর্তগুলো মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন সেটি আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে আরও বিশ্বস্থ করেছে।      

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো.শফিউর রহমান বলেন, আদালত শিশুদের সংশোধনের জন্য বাড়িতে থেকে প্রবেশনের মাধ্যমে ৮টি কাজ করার শর্ত দিয়েছেন এবং তাদের নিয়মিন একটি নোটখাতায় লিপিবদ্ধ করতে হবে, আগামী ১ বছর তাদের বাড়িতে রেখে দেখা যাবে যদি তার  উন্নয়ন না হয় তাহলে তাকে পুনরায় আটক করে টঙ্গি কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত