নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ অক্টোবর, ২০১৫ ২১:৩৬

আমার ছেলে হত্যার ভিডিও নেই, আমি কী বিচার পাবো না: প্রশ্ন সাঈদের বাবার

রাজন হত্যার মতো আমার ছেলের হত্যার ভিডিও নেই। ফলে সারাদেশে এ নিয়ে আলোড়নও সৃষ্টি হয়নি। তাই বলে কী আমি ছেলে হত্যার বিচার পাবো না- প্রশ্ন রাখলেন শিশু আবু সাঈদের বাবা মতিন মিয়া।

সিলেট নগরীর দর্জিবন্দ বসুন্ধরা ৭৪ নম্বর বাসার বাসিন্দা মতিন মিয়ার ছেলে ছেলে আবু সাঈদ (৯)। রায়নগর শাহমীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলো সে।

চলতি বছরের ১১ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টার স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণ করা হয় শিশু সাঈদকে। পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান, পুলিশের সোর্স আতাউর রহমান গেদা, জেলা ওলামা লীগ নেতা নুরুল ইসলাম রাকিব ও মাহিদ হোসেন মাসুদ মিলে অপরহরণ করে সাঈদকে। পরের দিন (১২ মার্চ) কনস্টেবল এবাদুরের বাসায় শিশুটিকে হত্যা করে ঘাতকরা। লাশ গুম করে রাখা হয় এবাদুরের ভাড়া বাসার ছাদের চিলেকোঠায়। হত্যার পর ঘাতকেরা সাঈদের বাবা ও মামা জয়নাল আবেদীনের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

পরে ১৪ মার্চ রাত ১০টায় কনস্টেবল এবাদুরের বাসার ছাদের চিলেকোঠা থেকে ৭টি বস্তায় মোড়ানো আবু সাঈদের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

সাঈদকে হত্যার চার মাস পর গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে নৃশংস নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয় শিশু সামিউল আলম রাজনকে। সেই হত্যাকান্ডের ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দেশজুড়ে ক্ষোভের মুখে রাজন হত্যার আসামীদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে উদ্যোগী হয় সরকার।

এরফলে হত্যাকান্ডের চার মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে রাজন হত্যার বিচার কাজ। আগামী ৮ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায়ের তারিখ ধার্য করা হয়েছে। তবে আটকে আছে রাজনের চার মাস আগে সিলেটে খুন হওয়া শিশু সাঈদ হত্যার বিচার কাজ।

এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাঈদের বাবা মতিন মিয়া সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাজন হত্যার ঘটনা অত্যন্ত নৃশংস। এই হত্যার ভিডিও সকলকেই নাড়া দিয়েছে। রাজন হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন হওয়ায় আমিও খুশি। এটি একটি দৃষ্ঠান্ত হয়ে থাকবে। কিন্তু আমার ছেলেকে হত্যার সময় ঘাতকরা ভিডিও করেনি বলে আমি কী বিচার পাবো না, প্রশ্ন রাখেন মতিন মিয়া।

ছেলের হত্যার পরপরই সিলেট নগর ছেড়ে স্বপরিবারে জগন্নাথপুরের খালিশপুরে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন মতিন মিয়া। সেখানেই অবস্থান করছেন এখন।

সাঈদের মামা জয়নাল আবেদীন জানান, বৃহস্পতিবার সিলেট মহানগর হাকিম আদালতে সাঈদ হত্যার মামলার অভিযোগ পত্রের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এরআগে মামলার নথি উচ্চ আদালতে থাকায় দু'দফা পিছিয়ে যায় শুনানি।

জানা যায়, হত্যার প্রায় ছয়মাস পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিশু আবু সাঈদ হত্যা মামলায় চারজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র প্রদান করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মোশাররফ হোসাইন।

পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান, পুলিশের সোর্স আতাউর রহমান গেদা, জেলা ওলামা লীগ নেতা নুরুল ইসলাম রাকিব ও মাহিদ হোসেন মাসুদকে অভিযুক্ত করে এ অভিযোগপত্র প্রদান করা হয়।

এরআগে এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়, সিলেট মহানগরীর বিমানবন্দর থানার পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর, জেলা ওলামা লীগের এক নেতা নুরুল ইসলাম রাকিব, সোর্স আতাউর রহমান গেদাকে। এদের তিনজনই আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত