এস আলম সুমন, কুলাউড়া

১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:৩৪

কুলাউড়ায় ৪ প্রার্থীর লড়াইয়ে কে হাসবেন শেষ হাসি?

আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুলাউড়া পৌরসভা নির্বাচন। শনিবার অনুষ্ঠিত কুলাউড়া পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট যুদ্ধে লড়াই করছেন ৪জন প্রার্থী।  কে হবেন পৌর মেয়র এ নিয়ে পৌর বাসিন্দাদের মধ্যে চলছে আলোচনা। প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক নাকি ব্যাক্তি অবস্থান সে বিষয়ে ভোটার ও সচেতন মহলের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
 
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজ কুলাউড়া পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) নারকেল গাছ প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব শফি আলম ইউনুছ, বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ এবং স্বতন্ত্র জগ প্রতীকের প্রার্থী শাজান মিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পৌরবাসীর দাবি, দলীয় অবস্থান ছাড়াও তাদের ব্যক্তি অবস্থান থাকায় এবারের নির্বাচনে ৪ প্রার্থীই হেভিওয়েট। ভোটের লড়াইয়ে যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি খুব কম ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হতে পারেন। বিএনপির প্রার্থী কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ নির্বাচনে প্রথম দিকে এগিয়ে থাকলেও শেষ মুহূর্তে ভোটের মাঠে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন। সেদিক থেকে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন নৌকার প্রার্থী। ভোটারদের ধারনা চতুর্মূখি লড়াই হতে পারে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র দলীয় এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব শফি আলম ইউনুছ বিজয়ী হন। এবারের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান। তার সাথে দলীয় মনোনয়ন চান সাপ্তাহিক কুলাউড়া সংলাপ পত্রিকার সম্পাদক অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ এবং শফিউল আলম শফি। দলের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন। আবারো দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন বর্তমান মেয়র শফি আলম ইউনুছ।

এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাজী আপ্তাব আলী কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ও কাতার প্রবাসী শাজান মিয়া। বর্তমান মেয়র শফি আলম ও সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ ছাড়া এবারের নির্বাচনে নতুন মুখ সিপার উদ্দিন আহমদ এবং শাজান মিয়া। নির্বাচনে নতুন মুখ হলেও রাজনৈতিক ও ক্রীড়াঙ্গনে অনেক পরিচিত মুখ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সিপার উদ্দিন আহমদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী শাজান মিয়া প্রবাসী হলেও সামাজিক অঙ্গনে পরিচিত মুখ। পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত দেড় দুই বছর ধরে সিপার উদ্দিন আহমদ ও  শাজান মিয়া পৌর এলাকায় গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করে আসছেন। করোনার লকডাউনে অসহায় কর্মহীন হয়ে পড়া সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় খাদ্য বিতরণসহ সরব কার্যক্রম চালিয়ে যান এই দু’জন।

সরেজমিনে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা যায়, প্রার্থী ও সমর্থকরা গণসংযোগ এবং উঠান বৈঠকে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পৌরশহরসহ প্রতিটি মহল্লায় বিশেষ করে বিকেল থেকে মধ্যরাত অবধি ভোট নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। মধ্যরাতভর কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি তরুণ, মধ্যবয়স্ক ও বয়স্কদের মধ্যে পৌষের শীতেও চায়ের কাপের আড্ডায় প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে চলছে বাকযুদ্ধ। কাউন্সিলর প্রার্থীদের গণসংযোগও নির্বাচনী প্রচারণায় সেই আলোচনায় তৃতীয়মাত্রা পাচ্ছে।

ভোটারদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৪ জনই পরিচিত মুখ। বর্তমান ও সাবেক মেয়র আগে থেকে মাঠে প্রকাশ্যে তেমন সরব ছিলেন না। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বছর খানেক ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন। মনোনয়নপত্র জমার পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাজান মিয়ার পাশাপাশি বর্তমান মেয়র শফি আলম ইউনুছ এবং সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ ও তাঁদের সমর্থকরা সরব হয়ে ওঠেছেন। সাধারণ ভোটারদের ধারণা এবারের ভোটে মেয়র পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে ব্যক্তি অবস্থান বেশি গুরুত্ব পাবে। এছাড়াও মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে ভোটারদের অবস্থানের ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতার প্রভাব পড়তে পারে। সচেতন ভোটারদের দাবি, নির্বাচনে অনেক প্রার্থী টাকা দিয়েও ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন। পৌর এলাকার জলাবদ্ধতাসহ নানা দুর্ভোগ দূরীকরণে পরিকল্পনা নিয়ে যিনি কাজ করবেন বলে আশ্বস্ত করতে পারবেন এমন প্রার্থীই ভোটের লাড়াইয়ে এগিয়ে থাকবেন বলে ধারণা করছেন ভোটাররা।

সিপিবির সাবেক মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি খন্দকার লুফুর রহমান এবং জাসদের জেলা সভাপতি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম শামীম জানান, এখনো পর্যন্ত ৪ মেয়র প্রার্থী শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। প্রার্থীদের দলীয় রাজনৈতিক অবস্থানের চেয়ে ব্যক্তি অবস্থান অতীতের মতো এবারো কুলাউড়া পৌর নির্বাচনে গুরুত্ব পাবে এবং প্রার্থীদের পক্ষে ভোটারদের সমর্থন আদায়ে আঞ্চলিকতারও প্রভাব পড়বে।

তারা আরো জানান, যতটুকু ধারণা করতে পারছি নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি থাকবে। প্রার্থীরা নিজেদের টাকার প্রভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করা অপপ্রয়াস চালাবেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পৌরসভার উন্নয়নে পড়বে। তাই সবাইকে সচেতন হয়ে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়া উচিত।

নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা শুকুর মাহমুদ বলেন, ৯টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্নে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনে পুলিশ বিজবিসহ ৯টি কেন্দ্র নয়জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত