নবীগঞ্জ প্রতিনিধি

২৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:৪৮

১৬ বছরেও হয়নি কিবরিয়া হত্যার বিচার

১৬ বছরেও শেষ হয়নি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার বিচার কাজ। মামলাটি দ্রুত সম্পন্নের লক্ষ্যে হবিগঞ্জ থেকে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলেও তা কাঙ্ক্ষিত গতি পাচ্ছে না। গত পাঁচ বছরে মামলার মোট ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এরআগে তদন্ত কাজে সময় ক্ষেপণ করা হয়েছে প্রায় ১০ বছর ধরে।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন এই আওয়ামী লীগ নেতা। আজ এই হত্যাকাণ্ডের ১৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে।

এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তিন দফায় তদন্ত করে সিআইডি। প্রথমদফায় ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাদী মজিদ খান। পরে ২০০৭ সালে মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য ফের সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এরপর ২০১১ সালের ২০ জুন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি হান্নানসহ ২৪ জনকে আসামি করে অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

২০১১ সালের ২৮ জুন শাহ এএমএস কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া এই অভিযোগপত্রের উপরও না-রাজি আবেদন করেন।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর সিআইডি সিলেট রেঞ্জের সিনিয়র এএসপি মেহেরুন নেছা পারুল সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। পরে গত ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তবে নানা অজুহাতে এই আদালতেও পিছিয়ে যাচ্ছে মামলার কার্যক্রম।

সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি সরোয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল জানান, ২০১৫ সালের জুনে মামলাটি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়। এ মামলায় মোট ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলায়ও ২০২০ সনের ২২ অক্টোবর চার্জ গঠন করা হয়। আজ বুধবার (২৭ জানুয়ারি) উভয় মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে।

তিনি আরও জানান, এ মামলার মূল আসামিদের বিরুদ্ধে সারাদেশে জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। তাদেরকে দেশের বিভিন্ন আদালতে হাজির করার জন্য এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করতে হয়। তাই মামলার ধার্য তারিখে সব সময় আসামিদের আদালতে হাজির করা সম্ভব হয় না। এতে মামলার বিচার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।

মামলার আসামিদের মধ্যে তিন জনের ইতোমধ্যে অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন, মুফতি আব্দুল হান্নান, শরীফ সাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপন।

এদিকে, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীসহ নয়জন আসামি পলাতক রয়েছে। এছাড়া, এ মামলার আসামি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফ চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গৌছসহ জামিনে রয়েছেন ৯ জন।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের এক জনসভা শেষে গ্রেনেড হামলায় কিবরিয়া ও তার ভাতিজা মঞ্জুরুল হুদাসহ ৫ নেতাকর্মী নিহত এবং হবিগঞ্জ-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরসহ ৭০ জন আহত হন। ঐ দিন রাতে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান সদর থানায় বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন।

মামলার বাদী ও আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি বলেন, ‘বিচার নিয়ে আমি হতাশ নই। কেননা এ দেশে যুদ্ধাপরাধ বিচার, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার হয়েছে। কাজেই কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচারও হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্রিমিনাল কোর্টের মামলায় সঙ্গত কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে যায়।’

শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া মামলার প্রসঙ্গে বলেন, এখনও ঠিকমত তদন্ত হয়নি এবং তিনটি মিথ্যা চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। একটির সঙ্গে আরেকটির কোনও সম্পর্ক নেই। দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর তদন্তকারী কর্মকর্তারা দিতে চাননি। আসল মদদদাতা কারা এবং গ্রেনেডের উৎস কী- প্রশ্ন দুটির উত্তর সরকার কখনও দিতে চায়নি।

তিনি আরও বলেন, ‘মিথ্যা তদন্তের ভিত্তিতে কোনও চার্জশিট আমরা মানি না এবং মিথ্যা তদন্তে বিচার হলে মানব না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত