নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ মার্চ, ২০২১ ২২:৩৭

কামরান-হকের পর কয়েস: করোনায় সিলেটের রাজনীতিতে শূন্যতা

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন সিলেটের আরেক রাজনীতিবিদ। বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) দুপুরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেট-৩ আসনের সাংসদ ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী কয়েস।

বৈশ্বিক এই মহামারি অন্য অনেক সেক্টরের মতো সিলেটের রাজনীতিতেও বড় আঘাত এনেছে। সিলেটের বড়মাপের কয়েকজন রাজনীতিবিদ প্রাণ হারিয়েছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। কয়েসের আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান এবং সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ হক। করোনার ধাক্কায় হঠাৎ করেই শূন্যতা দেখা দিয়েছে সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃত্বে।

এই তিনজন ছাড়াও সিলেটের আরও বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, করোনার প্রথম ঢেউ শেষে এখন দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ফলে দেশে আবার বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। মারাও যাচ্ছেন অনেকে।

মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ৭ মার্চ ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। ৮মার্চ তার করোনা ধরা পড়ে। এরপর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তারা বয়স হয়েছিলো ৬৬ বছর।

দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই সাহায্য-সহায়তা নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। যা দেশজুড়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়।

এরআগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ জুন ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। গত ৫ জুন সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় ৬৯ বছর বয়সী কামরানের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার আগে ২৭ মে তার স্ত্রী আসমা কামরান কোভিড-১৯ আক্রান্ত হন।

এরপর গত ৩ জুলাই করোনায় মারা যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুল (এমএ হক) হক। ৩ জুলাই সকালে সিলেটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

মৃত্যুর পর আসা নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে করোনা ধরা পড়ে হকের।

১১ মার্চ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৭৯ জন।

দেশে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। টিকার প্রথম ডোজ প্রদান কার্যক্রম চলছে। সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী গত ১০ ফেব্রুয়ারি টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকার দুটি ডোজ গ্রহণের পর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।

সিলেটে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গতবছরের ৫ এপ্রিল। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগি অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন করোনা আক্রান্ত হন। পরে মারা যান তিনি। আর সিলেটের রাজনীতিবিদ হিসেবে গতবছরের ২১ মে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলের। এরপর গতবছরের ২৪ সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ করোনায় আক্রান্ত হন।

এছাড়া বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরী, মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি শাহরিয়ার কবীর সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক সাইফুল আলম রুহেল, সিলেট মহানগরীর ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কামাল ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মাসুকসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

কয়েসের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার হেলিকপ্টারযোগে তার মরদেহ সিলেট আসবে। বিকেল ৫টায় ফেঞ্চুগঞ্জের কাসিম আলী স্কুল মাঠে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত