কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

২১ এপ্রিল, ২০২১ ১৮:২০

কমলগঞ্জে খাসিয়া যুবককে অন্ধকার কক্ষে আটকে রেখে মারধর

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ফরমি সুচিয়াং (২৮) নামের এক খাসিয়া যুবককে অন্ধকার কক্ষে আটকে হাত-পা বেঁধে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে কুরমা পান পুঞ্জির পি, রিয়াং খংলার ছেলে। গত মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বেলা ১টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে।

আহত যুবকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। কুরমা বনবিটের বনকর্মীরা এই নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
 
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ওই যুবক বুধবার দুপুরে জানান, গত মঙ্গলবার বেলা ১টায় রাজকান্দি বনরেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে কুরমা বনবিটের নব নিযুক্ত বিট কর্মকর্তা রাজ্জাক আহমেদসহ বনকর্মীরা সাদা পোষাকে পান জুমের ভেতর প্রবেশ করেন। করোনাকালে পানজুম এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না বলে তাদের প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাই। এতে বন গার্ড জহির মিয়া, বন প্রহরী ফুরকান মিয়া ও নতুন বনবিট কর্মকর্তা রাজ্জাক আহমেদ ও রাজকান্দি বনরেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামসহ ৪/৫ জন মিলে আমাকে ধরে নিয়ে লাঠি দিয়ে পেটায়। পরে আবার হা-পা বেঁধে নিয়ে কুরমা বনবিটের একটি অন্ধকার কক্ষে আটকে রেখে অমানসিক নির্যাতন করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরমি সুচিয়াং-কে ধরে নিয়ে যেতে দেখে দুটি শিশু কুরমা খাসিয়া পুঞ্জিতে খবর দেয়। খবর পেয়ে মারধরের শিকার যুবকের মামা ডালিম সুচিয়াং ও পুঞ্জির সহকারী হেডম্যান মার্নী ছারলেস সঙ বিকেলে কুরমা বনবিটে যান। সেখানে মুচলেখা দিয়ে আহত ফরমি সুচিয়াংকে ছাড়িয়ে নিয়ে পুঞ্জিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। রাতে অবস্থা খারাপ হলে বুধবার সকালে তাকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।

আলাপকালে কুরমা খাসিয়া পুঞ্জির সহকারী হেডম্যান মার্নী ছারলেস সঙ মুঠোফোনে বলেন, ‘বনের জমিতে ফরেষ্ট ভিলেজার হিসেবে বসবাস করে পান চাষ করি আমরা। আমাদের যুবক যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তা হলে তার বিচার করা যেত। এভাবে বনে প্রথম দফা মারপিট করে আবার বনবিটে নিয়ে একটি কক্ষে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা উচিত হয়নি। এ ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও খাসি সোসাল কাউন্সিলকে অবহিত করা হয়েছে।’

তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি বলে তিনি জানান।

খাসিয়া হেডম্যানদের সংগঠন খাসি সোসাল কাউন্সিলের সভাপতি মাগুরছড়া পুঞ্জির হেডম্যান জিডিসন প্রধান সুচিয়াং বলেন, ‘এভাবে কাউকে হাত-পা বেঁধে মারধর করা ঠিক হয়নি। এ ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা জানাই। সাথে সাথে তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচারও দাবি করছি।’
 
ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এভাবে কাউকে মারপিট করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

এ বিষয়ে রাজকান্দি বনরেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যুবকটি বনের গাছ গাছালি ছাটাই করছিল। এজন্য তাকে শাসন করা হয়েছে।’ তবে মুচলেখা ও মারধরের বিষয়ে ওই কর্মকর্তা কিছু বলতে চাননি।

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’


আপনার মন্তব্য

আলোচিত