সদরুল আমিন, ছাতক

২২ এপ্রিল, ২০২১ ২২:৫৯

ধান তোলায় ব্যস্ত হাওরপারের কৃষক

সুনামগঞ্জের ছাতক

বাতাসে মাঠের পর মাঠজুড়ে দুলছে সোনালি ধান। সেই ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ছাতকের কৃষাণ-কৃষাণীরা। এই অঞ্চলে পহেলা বৈশাখ থেকে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয় বহুকাল আগে থেকেই।

তবে গত কয়েক বছর ধরে আগাম জাতের ধান আবাদ হওয়ায় কিছু ধান আগেই কাটা-মাড়াই শুরু হয়। সপ্তাহ দেড়েক ধরে আগাম জাতের কিছু ধান কাটা শুরু হলেও এ সপ্তাহে থেকে পুরোদমে শুরু হয়েছে ধান কাটা মাড়াই-ঝাড়াই।  

ছাতক উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ছাতক উপজেলায় ছোট-বড় হাওর রয়েছে ৬৩টি। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো চাষাবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৮শ ৩০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফসী ১১ হাজার ৫১০ হেক্টর, হাইব্রিড ৩ হাজার ২৩০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান ৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, হাওরে ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিকরা। পাশপাশি হাওরের ধানের খলায় কাজ করছেন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা। কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা কেউ ক্ষেত থেকে ধান কেটে খলায় টানছেন, কেউ রোদে ধান শুকানোর কাজ করছেন, কেউ মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এসব কাজে বড়দের সঙ্গ দিচ্ছে শিশু-কিশোররা।

স্থানীয় একাধিক কৃষক জানান, বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন। গতবার শিলাবৃষ্টিতে কোনো কোনো হাওরে সামান্য ক্ষতি হলেও এবার তুলনামূলক বেশি ফলন হবে বলে আশা করছেন।

কালারুকা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সত্তার জানান, আমি ৬ বিঘা জমি চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার আরো বেশি ফসল ঘরে তুলতে পারবো। কিছু আগাম জাতের ধান ঘরে তুলেছি। যেগুলো বাকি রয়েছে আশা করছি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আগামী সপ্তাহ-দশ দিনের মধ্যে ঘরে তুলতে পারবো। ফসল ঘরে তুলতে পারলে লাভবান হবো।’

আরেক কৃষক তৈমুছ আলী জানান, অতি বৃষ্টি বা অতিরিক্ত খরা না হওয়ার কারণে এবছর তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। রোগ-বালাই ও পোকায় বেশি একটা আক্রমণ করতে পারেনি। তবে প্রকৃতি অনুকুলে থাকলে স্বপ্নের সোনালী ধান যথাসময়ে ঘরে তুলতে পারবো এমন আশা করেছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিক হোসেন খান বলেন, ‘এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। দু’সপ্তাহ পূর্বেই কৃষকদের উৎসাহিত করতে আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলার চৌকা হাওরে ধান কাটা উৎসব করেছি। কিছু আগাম জাতের ধান আগে কাটলেও এখন সকল হাওরে পুরোদমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে।’
 
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রহমান বলেন, ‘হাওরে ধান কাটার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। চলতি বছর শ্রমিক সংকট নিরসনে উপজেলার বিভিন্ন কৃষকের মাঝে কৃষি বিভাগ থেকে ১১টি কম্বাইন হারভেস্টার (ধান কাটার মেশিন) দেওয়া হয়েছে। কৃষকদেরকে ধান পাকার সাথে সাথে দ্রুত কেটে ঘরে আনার জন্য বলে দেয়া হয়েছে। আর কৃষি অফিসের কর্মীরাও মাঠে কাজ করছেন। আশা করছি কৃষকরা সঠিক সময়ের মধ্যে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারবেন।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত