রেজুওয়ান কোরেশী, জগন্নাথপুর

০৪ মে, ২০২১ ২১:৩৩

জগন্নাথপুরে হাওরে হারভেস্টারে ধান কেটে খুশি কৃষক

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওর পাড়ের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মাহমুদ আলী। প্রতি বছরের মতো এবারো নলুয়ার হাওরে সাত হাল (১২ কেদারে এক হাল) জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন তিনি। এবার ১০ দিনে তিনি সব জমির ধান তুলতে পেরে খুশি। কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের মাধ্যমে সব জমির ধান কাটা মাড়াই, ঝাড়া বস্তাবন্দী করতে পেরে তার সময় ও অর্থের অপচয় রোধ হওয়ায় তিনি আনন্দিত।

মাহমুদ আলী বলেন, নাইয়া (ধান কাটার শ্রমিক) দিয়ে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়া ও বস্তাবন্দী করতে দুই মাস সময় লাগতো এবার মেশিনে (হারভেস্টার) কম সময়ে কম খরচে ধান তুলতে পেরেছি। এই মেশিন আমাদের বড় উপকার করছে।

শুধু মাহমুদ আলী নন উপজেলার ২৯ জন কৃষক এবার হাওরে কম্বাইন হারভেষ্টার যন্ত্রের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে ধান কাটতে পেরেছেন। সোমবার উপজেলার হাওরগুলোর শতভাগ ধানকাটা শেষ হয়েছে। হাওর ব্যতীত উঁচু জায়গায় কিছু জমির ধানকাটা বাকি রয়েছে।

কৃষকরা জানান, ধানকাটার প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে এ যন্ত্র দিয়ে ধান কাটলে খরচ কম ও সময় সাশ্রয় হয়। এছাড়াও মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধানের অপচয় হয় না। এ যন্ত্র দিয়ে ধান কাটলে এক দিনে ১৫ থেকে ২০ কেদার বোরো জমির ধান, কাটা, মাড়াই, ঝাড়া ও বস্তাবন্দী করা যায়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক দিনে ১০ জন কৃষি শ্রমিক আড়াই থেকে তিন মণ ধান কাটতে পারেন। বর্তমানে জনপ্রতি কৃষি শ্রমিকের প্রতিদিনের মজুরী রয়েছে সাতশত থেকে আটশত টাকা। আর হারভেষ্টার যন্ত্র দিয়ে কেদার প্রতি ধান কাটা হচ্ছে দুই থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায়।

জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারীভাবে এ যন্ত্রটি কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলতে সরকার ৭০ ভাগ ভুর্তকির মাধ্যমে যন্ত্রটি প্রদান করছে। এবার উপজেলার ২৯ জন কৃষক ৭০ ভাগ ভুর্তকির মাধ্যমে এ যন্ত্র পেয়েছেন।

পিংলার হাওরে কথা হয় হারভেস্টার যন্ত্রের মালিক মজিদপুর গ্রামের বাসিন্দা এমদাদুর রহমান সুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি তিন লাখ টাকা কিস্তি দিয়ে এবছর ধান কাটার জন্য এ যন্ত্রটি সরকারী ৭০ ভাগ ভুর্তকি সুবিধা নিয়ে এনেছি। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০কেদার জমির ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়া ও বস্তাবন্দী করতে পারছি । যা দেখে অনেক কৃষক ভাড়ায় এ যন্ত্রটি নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন ।

জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক সফিক মিয়া বলেন, হাওরে এ বছর এমনিতেই কৃষি শ্রমিক সংকট রয়েছে। এ যন্ত্রটি আমাদের শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছে। তিনি বলেন যন্ত্রের মাধ্যমে আমি একদিনে ১৫ কেদার জমির ধান কাটতে পেরেছি খুব ভালো লাগছে।

জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বোরো মৌসুমে প্রতি বছর শ্রমিক সংকট, অকাল বন্যাসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখা দেয়। তাই এবার কৃষকদের কথা চিন্তা করে ২৯ টি কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র আনার ব্যবস্থা করি।

তিনি বলেন, আমরা কৃষি বিভাগ থেকে পরিকল্পনা করে যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষকদের ধান কাটতে উৎসাহ দিয়ে মাঠে কাজ করি।সবগুলো হারভেস্টার যন্ত্র কে কাজে লাগিয়ে ১৫ দিনে ধান কাটার শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসি। সোমবার উপজেলার সবকটি হাওরের শতভাগ ধানকাটা শেষ হয়েছে। উঁচু জায়গায় কিছু ধান রয়েছে। তিন চার দিনের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হবে।

তিনি আরও জানান, জগন্নাথপুর উপজেলায় ছোটবড় ১৫টি হাওরে এবার ২০ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় ধান কাটার যন্ত্রের শতভাগ সুফল পেয়েছেন কৃষকরা। হারভেস্টারের কারণে আমরা দ্রুত সময়ে ধান তোলা শেষ করতে পারছি।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, হারভেস্টার যন্ত্রের কারণে কৃষকরা দ্রুত সময়ে ধান তুলতে পেরেছেন। বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা খুশি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত