নিজস্ব প্রতিবেদক

০৫ মে, ২০২১ ১৪:২৪

অভিযোগ প্রমাণিত হলে আকবরের মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান আহমদকে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র প্রদান করেছে  পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

বুধবার জমা দেওয়া এই অভিযোগপত্রে এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে যেসব আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে তা প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের মৃত্যুদন্ডও হতে পারে বলে জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদ উজ জামান বলেন, অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২, ৫০১ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ১৫(২), ১৫(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই দুই আইনের একটিতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও অপরটিতে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবনের কথা উল্লেখ আছে। ফলে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের মৃত্যুদন্ডও হতে পারে।

১৯৬২ পৃষ্টার এই অভিযোগপত্রে ৬৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে জানিয়ে এসপি বলেন, এরমধ্যে ১০ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। যাদের মধ্যে ৭ জন পুলিশ রয়েছেন।

তবে রায়হানকে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে নির্যাতন পূর্ব পরিকল্পিত কিংবা পূর্ব বিরোধের জের ধরে নয় বলে দাবি করেছে এই এসপি।

তিনি বলেন, তদন্তে রায়হান আহমদকে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানোর প্রমাণ মিলেছে। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ বহিস্কৃত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, বহিস্কৃত সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) আশেকে এলাহি, পুলিশের কনস্টেবল হারুনুর রশিদ ও টিটু চন্দ্র দাস নির্যাতনে অংশ নেন বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।

আর নির্যাতনের আলামত নষ্ট ও অভিযুক্তদের পালাতে সহয়াতা করেন বহিস্কৃত এএসআই হাসান উদ্দিন এবং কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান। অভিযোগপত্রে এই ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

নগরের আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর রাতে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। কাষ্টঘর সুইপার কলোনি থেকে তাকে ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যান এই ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ও তার সহকারীরা।

ফাঁড়িতে রায়হানকে ধরে আনা প্রসঙ্গে এসপি খালেদ উজ জামান বলেন, সাইদুল শেখ নামের এক ব্যক্তির করা ছিনতাইয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রায়হানকে কাষ্টঘর থেকে ধরে আনে পুলিশ।

এসপি বলেন, সাইদুল ইয়াবা সংগ্রহ করতে কাষ্টঘর এলাকায় গিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলাও রয়েছে। সাইদুলের দাবি, ইয়াবা সংগ্রহকালে সেখানে রায়হানের সাথে তার বাকবিতন্ডা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই পুলিশ সুপার আরও বলেন, সাইদু্লের অভিযোগ পেয়ে রায়হানকে কাষ্টঘর থেকে ধরে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসবাদকালে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে মারা যান।

রায়হানের মা সালমা বেগম প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, অন্য কারো ইন্ধনে পূর্ব পরিকল্পনার জেরে রায়হানকে তুলে এনে নির্যাতন করেছে পুলিশ।

তবে বুধবার এসপি খালেদ উজ জামান বলেন, দীর্ঘ তদন্ত, সবার সাক্ষ্যগ্রহণ এবং রায়হান, আকবরসহ সংশ্লিষ্টদের মোবাইল ফোন আলাপ সংগ্রহ করেও আমরা এরকম কোনো প্রমাণ পাইনি। রায়হানকে নির্যাতনের সাথে পূর্ব বিরোধের কিছু পাওয়া যায় নি।

প্রসঙ্গত, নগরের আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর রাতে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। কাষ্টঘর সুইপার কলোনি থেকে তাকে ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যান এই ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ও তার সহকারীরা। এরপর কয়েক ঘণ্টা চলে নির্যাতন। শেষ রাতে এক পুলিশ সদস্যের মোবাইল থেকে নিজের চাচাকে ফোন করে রায়হান। এসময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে দ্রুত ১০ হাজার টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে আসার জন্য চাচাকে অনুরোধ করে। ভোরের ফজরের নামাজের পূর্ব মূহূর্তে টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে হাজির হন চাচা। তবে তখন তাকে রায়হানের সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এরপর ১১ অক্টোবর সকালে আবার চাচা ফাঁড়িতে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অসুস্থ হয়ে পড়ায় রায়হানকে ওসমানী হাসপাতপালে পাঠানো হয়েছে। পরে হাসপাতালের মর্গে গিয়ে রায়হানের মরদেহ দেখতে পায় পরিবার।

১১ অক্টাবর রাতেই হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। রায়হান হত্যার বিচার দাবিতে সিলেটজুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। অবশেষে প্রায় সাত মাস পর চাঞহল্যকর এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র প্রদান করা হলো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত