তাহিরপুর প্রতিনিধি

০৫ মে, ২০২১ ১৯:৫৮

তাহিরপুরে বাদামের বাম্পার ফলন

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরে এবার বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। কম পরিশ্রমে বেশী লাভবান হওয়া যায় বিধায় গত বছরের তুলনায় এবার অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে বোরো ধানের পরিবর্তিতে বাদাম চাষ করেছেন।

কোন প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন না হয়ে বাদামের বাম্পার ফলন হলেও করোনা সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকায় অনেকটা বিপাকে পড়েছেন বাদাম চাষিরা। লকডাউনের কারণে আসছেন না পাইকারগন। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন বলে আশঙ্কা কৃষকদের মধ্যে।

বাদাম চাষি ও স্থানীয় এলাকাবাসী সাথে কথা বলে জানায়, উপজেলার অনেক কৃষক এবার বোরো জমি ছাড়াও পতিত জমিতেও বাদাম চাষ করেছেন। একটু নিচু জমিতে বোরো ধান চাষ এবং অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে চাষ করা হয় বাদাম। জানুয়ারি (পৌষ মাসে) বাদাম রোপণ করা হয় আর এপ্রিল-মে মাসে বাদাম তোলা হয়।

সরজমিনে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে সবুজ পাতার সমারোহে প্রখর রোদের মধ্যেই উৎসব মুখর পরিবেশে শিশু,নারী ও পুরুষ সবাই বাদাম তুলছে। কেউ বাদামের গাছ তুলছেন কেউ আবার গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে রাখছেন। অনেকেই আবার শখের বসে, বাড়তি আয়ের জন্য, অনেকে আবার অনেকে নিজেরা খাবারের জন্য বাদাম তুলতে এসেছেন। তবে বিনা পারিশ্রমিকে বাদাম তুলছে না মানুষজন।

বাদাম তুলতে আসা শফিক মিয়া জানান, অনেকে জায়গায় সবাই মিলে যে পরিমাণ বাদাম তুলেন তা জমিয়ে ১০ ভাগ করে নয় ভাগ কৃষকের আর এক ভাগ যারা তুলবে তাদের। এতে করে যারা বাদাম তুলছেন সারাদিন ৪-৫শত টাকার বাদাম পেয়ে যান। আবার কোন কোন দিন আরও বেশী। এতে করে ভালই লাভবান হচেছন সবাই। এছাড়াও রমজান মাস সময় ও ভাল কাটে বলে জানান বাদাম তোলতে আসা অনেকে।

আরও জানা যায়, সুনামগঞ্জে দুইটি মৌসুমে বাদাম চাষ হয়। অক্টোবরের শেষের দিকে বীজ বপন করা হয়। সে বীজ থেকে তিন মাস পরে বাদাম তোলা হয়। আবার জানুয়ারি মাসে বীজ বপন করে এপ্রিল-মে মাসে বাদাম তোলা হয়। বাদাম একটু বেলে দোআঁশ মাটি ও উঁচু এলাকায় বাদাম চাষ ভালো হয়। জমিতে সামান্য বৃষ্টির কারণে যদি পানি জমে যায় তাহলে গাছ পচে যাবে।

বাদাঘাট ইউনিয়নের কৃষক মো. আব্দুল মতিন জানান, এবার ৫ কিয়ার জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। প্রতি কিয়ারে ৫-৬ মন বা তার চেয়ে বেশি হতে পারে। আর প্রতি মন বাদামের বাজার মSল্য ২৫শ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার বেশী। স¤প্রতি করোনার সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে লকডাউনের কারণে বাদাম কেনার জন্য বাইরে থেকে কোনো পাইকার না আসায় কৃষক অনেকটা বাধ্য হয়েই বাড়িতে আলাদা গোলা তৈরি করে বাদাম সংরক্ষণ করবেন। লাভ কেমন হবে তা এখনি বলতে পারছেন না কৃষকরা। কারণ বাজার ধর উঠা নামা করে।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, চলতি বছর উপজেলার বাদাঘাট, দক্ষিণ বড়দল, শ্রীপুর উত্তর, বড়দল উত্তর, বালিজুড়ি, তাহিরপুর সদর ইউনিয়নসহ ছয়টি ইউনিয়নে ১৩২০হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। আর বেশি চাষ হয়েছে বাদাঘাট আর উত্তর বড়দল ইউনিয়ন। আর বাদাঘাট ও বালিজুড়ী ইউনিয়নের বাদামের দুটি প্রদর্শন প্লট আছে কৃষি অফিসে। বাদামের ফলনও গত বছরের তুলনায় এবার ভাল।

মাফিকুল মিয়া, আমিনুল মিয়াসহ কৃষকরা জানান, ফলন হলেও করোনা সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে লকডাউন চলায় পরিবহন বন্ধ থাকায় গত বছরের মত এবার বাদাম বিক্রি করতে পারছি না। ফলে বাদাম সংরক্ষণের জন্য আলাদাভাবে ব্যবস্থা করতে গিয়ে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। আর আগে জমি থেকে বাদাম উত্তোলন করার পরপরই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে জমি থেকেই কিনে নিয়ে যেত।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান-উদ-দৌলা জানান, এ বছর উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে ৬টিতেই বাদামের ফলন ভালো হয়েছে। এখন বোরো ধান কাটার পাশাপাশি উৎসব মুখর পরিবেশ কৃষকরা বাদাম তুলা আর শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। আমি ও আমার সহকর্মীরা কৃষকদের সাবক্ষনিক প্রয়োজনীয় পরার্মশ দিয়েছে। করোনার প্রভাবে কৃষকরা বাদাম বিক্রি করতে পারছেন না। তবে করোনার সমস্যা উন্নতির সাথে সাথে কৃষকরাও তাদের কষ্টে ফলানো বাদামের দাম পাবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত