শাকিলা ববি

০৬ মে, ২০২১ ২৩:৩২

শেখ হাসিনার নামেই সিলেটের সেই পার্কের নামকরণ

নানা জটিলতা শেষে অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেই করা হয়েছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় নির্মিত সেই শিশু পার্কটির নামকরণ। ‌দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে নির্মিত এই পার্কটির নামকরণ করা হয়েছে- 'জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্ক'।

ইতোমধ্যে পার্কের মূল ফটকে 'জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্ক' লেখা হয়েছে। প্রায় ১৫ বছর আগে নির্মাণ কাজ শুরু করা এই পার্কটি শীঘ্রই উদ্বোধন করা হবে বলে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা গেছে।

সকল কাজ শেষ হলেও এতোদিন নামকরণ জটিলতায় আটকে যায় এই পার্কের উদ্বোধন। এরআগে বিভিন্ন সময়ে 'এম. সাইফুর রহমান শিশু পার্ক', 'সিলেট ন্যাচারাল পার্ক', 'দক্ষিণ সুরমা শিশু পার্ক'- এরকম বিভিন্ন নামে পার্কটির নামকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

সিলেটের শিশু-কিশোরদের জন্য সরকারি উদ্যোগে কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। এই অভাব পূরণে ২০০৬ সালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে একটি শিশু পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।

প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই শিশু পার্কের যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। বিভিন্ন ধরণের রাইডও বসানো হয়েছে। কিন্তু সব কাজ শেষেও নামকরণ জটিলতায় চালু করা যায়নি পার্কটি। এদিকে দীর্ঘদিন অব্যহৃত অবস্থায় ফেলে রাখায় নষ্ট হচ্ছে রাইডগুলো। চুরি হয়ে যাচ্ছে ট্রান্সমিটারসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি।

জানা যায়, ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাংসদ প্রয়াত এম. সাইফুর রহমানের উদ্যোগে এই পার্ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেসময়  মাটি ভরাট, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন স্থাপন, দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণসহ পার্কের অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়। তখন পার্কটির নামকরণ এম. সাইফুর রহমানের নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন


তবে বিএনপি সরকার ক্ষমতা ছাড়লে বন্ধ হয়ে যায় পার্কটির কাজ। অভিযোগ রয়েছে, সাইফুর রহমানের নামে থাকায় সিলেট সিটি করপোরেশনের তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র এই পার্ক চালু করতে কোনো উদ্যোগ নেননি।

এরপর ২০১৩ সালে বিএনপি দলীয় নেতা ও সাইফুর রহমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এই পার্ক চালুর ব্যাপারে আবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৭ সালে পার্কে বিভিন্ন রাইড বসানোর কাজ শুরু হয়। চীন থেকে এনে বিভিন্ন আধুনিক রাইড বসানো, বিদ্যুৎসংযোগ চালুসহ আনুসাঙ্গিক কাজ শেষ হয় তখন। তবে এরপর থেকেই দেখা দেয় নামকরণ জটিলতা।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) একটি সূত্র জানা যায়, সাইফুর রহমানের নামে পার্কটি নামকরণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠালে এতে রাজী হয়নি মন্ত্রণালয়। এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষ থেকে পার্কটি শেখ হাসিনার নামে নামকরণের দাবি জানানো হয়। এরপর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ‘সিলেট ন্যাচারাল পার্ক’, ‘দক্ষিণ সুরমা পার্ক’ নামে নামকরণের চেষ্টা চালানো হয়। এতে সফল না হওয়ায় আটকে যায় পার্ক চালুর উদ্যোগ। তবে শেষ পর্যন্ত ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্ক’ নামেই এই পার্কের নামকরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি এই নামে পার্ক চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি ভালো পার্কটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিসিক।

সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান ও নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলছেন, এই পার্কের কাজ চলমান ছিল। প্রকৌশলীরা বলছেন, এখন পার্কের প্রায় সব কিছু তৈরি আছে। মেয়র চাইলে যে কোনো সময় উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করতে পারবেন।    

তবে এরআগে ২০১৭ সালে পার্কে রাইড বসানোর কাজ শুরুর পর ৬ মাসের ভিতর পার্কটি চালু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল সিসিক। তবে রাইডগুলো বসানোর পর আরও ৪ বছর অতিক্রম হলেও শিশু পার্কটি চালু করতে পারেনি সিসিক।

বিজ্ঞাপন



সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক ধাপে প্রায় ১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে পার্কটি তৈরির জন্য। রাইড বসানোর কাজও প্রায় শেষ। প্রায় ১৫টি রাইড বসানো হয়েছে। এর মধ্যে আছে রেলগাড়ি, স্লিপার, সসরাইড, বোট, হানি, সুইং, নাগরদোলা ইত্যাদি। পার্কটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকাকালীন বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের সরঞ্জামাদি চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে এতদিন বিকল্পভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে কাজ চলছে। এখন সাবস্টেশনের সকল সরঞ্জামাদি আনা হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় যে রাইডের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেগুলোও সংস্কার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, পার্কটি তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। বর্তমানে রাইড বসানোসহ প্রায় সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলোরও কাজ চলছে। নাম সংক্রান্ত জটিলতাও আর নেই। ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্ক’ নামেই পার্কটি চালু হবে।

তিনি বলেন, বিদুৎ সাবস্টেশনের যে মালামাল চুরি হয়েছিল সেগুলোও আনা হয়েছে। ট্রান্সফরমার এখন বসাচ্ছি না। কারণ উদ্বোধনের আগে ট্রান্সফরমার বসালে চুরি হয়ে যেতে পারে। তাই মেয়র মহোদয় উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করলে ট্রান্সফরমারটি বসানো হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত