নিজস্ব প্রতিবেদক

০৮ মে, ২০২১ ০২:০০

সড়কে-শপিং মলে মধ্যরাত পর্যন্ত ভীড়, তবু নাকি ‘ব্যবসা ভালো হচ্ছে না’

করোনা ঠেকাতে বিধি নিষেধ ঘোষণা করেছে সরকার। রাত ৮ মধ্যেই সব শপিং মল দোকানপাট বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবু সিলেট নগরীতে মধ্যরাত পর্যন্ত লেগে থাকছে তীব্র যানজট। সড়কে-শপিং মলে ভিড় লেগে থাকছে মানুষজনের। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ব্যবসা ভালো হচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, শপিং মল বন্ধ রাখার নির্দেশনা তুলে নেওয়ার পর সিলেটের ঈদ বাজার আস্তে আস্তে জমতে শুরু করে। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত সিলেট নগরীর বিপণি বিতানগুলোতে ভিড় করছেন সব বয়সের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। তবে এই কেনাকাটায় স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বেশিরভাগ ক্রেতা বিক্রেতা।

মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও ব্যবসা বেশি ভাল হচ্ছে না বলে জানান বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী।

তারা বলেন, গতবছরের করোনা পরিস্থিতির কারণে যে লোকসানে পড়তে হয়েছে সেটা এখনো তারা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তার উপর এবছর রোজার শুরুর সময় থেকে বন্ধ ছিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাই এখন ক্রেতাদের ভিড় ও পণ্য বিক্রি হলেও লোভের পরিমাণ খুব কম হবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

এদিকে করোনার এই প্রকোপের সময় কেনাকাটায় সামাজিক দূরত্ব মানা, মাস্ক পড়ার বিষয়টি অধিকাংশ লোকজন আমলেই নিচ্ছে না। ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই মানছেন না সরকারী বিধিনিষেধ।

নগরীর আম্বরখানা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, বারুতখানার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন শপিংমল ও বিপনীবিতান ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর থাকছে। যার ফলে দিন থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন সময় নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা সড়কে জ্যাম থাকছে। তবে বিভিন্ন শপিংমলে কিছুটা স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও বেশিরভাগ বিপণি বিতানে সেভাবে মানা হচ্ছে না।

জিন্দাবাজারের আনন্দ গার্মেন্টসের এক বিক্রয় কর্মী বলেন, ব্যবসা অনেক ভালো হচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ক্রেতারা আসছেন, জামা কাপড় কিনছেন। অন্যসময় রোজায় ইফতারের পর ক্রেতারা বেশি আসতেন। কিন্তু এবছর যতক্ষণ দোকান খোলা থাকে ততক্ষণ ক্রেতারা আসেন।    

নগরের ফুটপাতের ব্যবসায়ী সুমন মিয়া বলেন, একদিকে করোনা, একদিকে লকডাউন আর সাথে আছে উচ্ছেদের ভয়। ভ্যানে নতুন পণ্য তুলতে পারি নি। আগের পণ্য দিয়েই ব্যবসা করছি। দুই তিন দিন যাবত ব্যবসা জমতে শুরু করেছে।

পূর্ব জিন্দাবাজারে চাইল্ড ওয়ার্ল্ড নামক দোকানে বাচ্চাদের জন্য ঈদের নতুন পোশাক কিনতে আসা এপি বেগম বলেন, বছর ঘুরে একবারই ঈদ আসে। তাই নিজে না কিনলেও বাচ্চাদের কাপড় কিনে দিতে হয়। করোনার ঝুঁকি আছে যেনেও বের হয়েছি। তবে মাস্ক পরে এসেছি। সকাল সকাল আসছিলাম ভিড় এড়ানোর জন্য এখন দেখি সকাল ১১টায় দোকানগুলোতে ভিড়। তাই চাইলেও সামাজিক দূরত্ব মানতে পারছি না।

বন্দরবাজারে মধুবন মার্কেটে ঈদের নতুন পোশাক কিনতে আসা নাতাশা তাবাসসুম বলেন, করোনার কারণে ভেবেছিলাম অনলাইনে শপিং করবো। কিন্তু ঘরে থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসতেছে। তাই একটু ঝুঁকি নিয়ে একটা ড্রেস কিনতে চলে এসেছি। তবে আমি শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংয়ে এসেছি।   
 
জিন্দাবাজারের চৌধুরী গার্মেন্টসের পরিচালক মাহবুব পলাশ বলেন, ব্যবসা ভাল হচ্ছে। ঈদ বাজার জমে উঠেছে। তবে এই ২ বছরে করোনার কারণে অনেক লোকসান হয়েছে। তাই এখন এই ঈদ বাজারে লাভ হলেও সেই লোকসান কাটিয়ে উঠা যাবে না।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, এই করোনাকালে ঈদবাজারে ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও যেরকম ব্যবসা হওয়ার কথা সেরকম ব্যবসা হচ্ছে না। কারণ করোনার জন্য প্রবাসীরা দেশে আসছেন না। সচেতন মানুষজন অনলাইনে শপিং করছেন। মার্কেটে বেশিরভাগ ক্রেতাই নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তশ্রেনীর। তাই ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ চাচ্ছিলেন সে পরিমাণ ব্যবসা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এই ২ বছর করোনা পেনডামিকের জন্য ব্যবসায়ীরা বৈশাখ, পূজাসহ কোনো উৎসবে ব্যবসাতো দূরের কথা দোকানই খোলতে পারেনি। তাই ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে ছিলেন। তাই এই ঈদে বিক্রি বেশি হলেও লাভের পরিমাণ অনেক কমে যাবে ব্যবসায়ীদের।

ঈদ কেনাকাটায় স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন,  ঈদ কেনাকাটায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এ তালিকায় ক্রেতা বিক্রেতা সবাই আছেন। তবে আমরা ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দিয়েছি স্বাস্থ্যবিধি মানতে। আমি ক্রেতা বিক্রেতা সবার কাছে অনুরোধ করবো সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন। অন্তত নিজের সুরক্ষার জন্য, পরিবারের সুরক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত