১৩ মে, ২০২১ ০০:৫৯
গতবছর রোজার ঈদে করোনার কারণে গৃহবন্দি ছিলেন মানুষজন। সিলেটের বেশিরভাগ শপিংমল-ফ্যাশন হাউসও বন্ধ ছিল। তাই কেনাকাটা করতে অনলাইনে ঝুঁকেছিলেন ক্রেতারা। এবছর চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে আরোপ করা হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। এবছর সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হয়েছে শপিংমল, ফ্যাশন হাউস ও বিভিন্ন বিপনিবিতান। তারপরও সিলেটের অনলাইনে চলছে জমজমাট কেনাকাটা।
সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকায় কাকলি শপিং সেন্টারের ২১৩, ২১৮, ২২৪, ২২৫ নং শপে পাওয়া যায় জায়ানস এক্সক্লুসিভ কালেকশন নামের একটি পেইজের পণ্য। রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে এই পেইজের পরিচালক রাফি হামিদ লাইভে এসে বিভিন্ন পোশাক প্রদর্শনী করেন। লাইভের কমেন্টে যেভাবে ক্রেতারা ভিড় করছেন ঠিক সেভাবে ওই শপগুলোতেও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। রাফি অনলাইনে লাইভে বিভিন্ন অফার দিচ্ছেন। ক্রেতারাও নিমিষেই সেটা লুফে নিচ্ছেন।
বুধবার (১২ মে) ইফতারের আগে কাকলি শপিং সেন্টারের শোরুম থেকে লাইভে এসে ‘লুটপাট অফার’ নামে পোশাকের একটি অফার দেন রাফি হামিদ। মাত্র সাড়ে চারশ টাকায় মেয়েদের টপসের এই অফার লুফে নেন ক্রেতারা। তিনি জানান, আজ রাত ৩টা ও চাঁদ রাত (আগামীকাল) রাত ৩টা পর্যন্ত তাদের সিলেটের শোরুম গুলো খোলা থাকবে।
এই পেইজের পরিচালকের মত সিলেটের অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন লাইভ পণ্য প্রদর্শনী বিক্রি নিয়ে।
শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা, মেহেদী উৎসব এবং চাঁদ রাতের ডিসকাউন্টে কেনাকাটার অফার নিয়ে বুধবার (১২ মে) দুপুর ২টায় লাইভে আসেন অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘গ্ল্যামডাস্ট’ এর পরিচালক সিলেটের শিবগঞ্জ এলাকার আমিনা খুশি। লাইভে এসে তিনি বলেন, আজকে আমাদের শেষ কেনাকাটা। আগামীকাল প্রোডাক্টের শেষ ডেলিভারি দিব। এসময় তিনি মেহেদি, আইশেডো, অরগান অয়েলসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী প্রদর্শনী ও বিক্রি করেন। এরে আগে রোজার শুরু থেকে তিনি লাইভে এসে নারীদের জন্য বাহারি ডিজাইনের কুর্তি, থ্রিপিস, টুপিসসহ বিভিন্ন পোশাক প্রদর্শন ও বিক্রি করেন।
সিলেটের বেশিরভাগ অনলাইন বিক্রেতাই এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ক্রেতারাও অনলাইনে কিনে নিচ্ছেন কাপড়, কসমেটিকস, গহনা, বাচ্চাদের কাপড়, জুতা। গতবারের চেয়ে এবারের ঈদে ৩/৪ গুণ বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। তাই ঈদ ও লকডাউনের চাপে হঠাৎ পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও জানান সিলেটের বিভিন্ন অনলাইন ব্যবসায়ীরা।
‘গ্ল্যামডাস্ট’ এর পরিচালক আমিনা খুশি বলেন, রোজার শুরু থেকেই ক্রেতারা বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনছেন। তবে এখন বেশি সেইল হচ্ছে লেডিস ও বাচ্চাদের ড্রেস, মেহেদি কসমেটিকস, গহনা। এবার লকডাউনে মার্কেট খোলা থাকলেও অনলাইনের বাজার ভালই ছিল। কারণ বেশিরভাগ সচেতন মানুষ এই করোনাকালে অনলাইনে শপিং করতে স্বাছন্দ্যবোধ করেন।
সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও রয়েছে বেশ কয়েকটি অনলাইন শপ। যার মধ্যে অনেকের বিভিন্ন শপিংমলে শোরুম আছে। চাহিদার কারণে শপিংমলের শোরুমের ব্যবসায়ীরা ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেইজ ও গ্রুপ খুলে পণ্য বিক্রি করছেন। মূলত শাড়ি, রেডি-আনরেডি সালোয়ার কামিজ, কুর্তি, শার্ট, কসমেটিকস, গহনা ইত্যাদি অনলাইনে বিক্রি করেন তারা। বেশিরভাগ বিক্রেতারাই একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদের ফেসবুক পেইজ বা গ্রুপে লাইভে এসে পণ্য বিক্রি করেন। অনেকেই আবার পণ্যের ছবি ও দাম ফেসবুক পেইজ বা গ্রুপে দিয়ে ব্যবসা করছেন অনেকে।
‘চায়ের ফাঁকে কেনাকাটা’ নামক ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে ব্লক, বাটিক, হেন্ডপেইন্টেড ড্রেস, শাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন এই পেইজের পরিচালক শেখ সামিয়া রহমান। এই পেইজ থেকে তিনি ও তার স্বামী এমএআল মাহফুজুল হক রিপন। বুধবার (১২ মে) বিকেল ৫টায় লাইভে এসে বেশ কিছু পাঞ্জাবি প্রদর্শনী ও বিক্রি করেন। এর আগেও বেশ কয়েকদিন তারা দুজন লাইভে এসে ড্রেস, শাড়ি, পাঞ্জাবি বিক্রি ও প্রদর্শনী করেন।
‘চায়ের ফাঁকে কেনাকাটা’ পেইজের পরিচালক শেখ সামিয়া রহমান বলেন, এবারের ঈদে অনেক ভাল সেইল হয়েছে। রোজার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকা সেইল দিয়েছি। এখন শেষ মুহূর্তের অর্ডার পাওয়া কিছু হেন্ডপেইন্ট ড্রেসের কাজ শেষ করছি। কাল ডেলিভারির সাথে সাথে এবারের ঈদে অর্ডার শেষ হবে।
আপনার মন্তব্য