১৩ মে, ২০২১ ০১:৩৮
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে একটি বনরুই উদ্ধার করেছে বনবিভাগ। বিশ্বব্যপী বিপন্ন এবং বাংলাদেশে মহা বিপন্ন অবস্থায় থাকা বনরুইটি বর্তমানে লাউয়াছড়ার জানকিছড়া রেসকিউ সেন্টারে পর্যবেক্ষণে আছে।
স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এন্ডেঞ্জারড ওয়াইল্ড লাইফ'র (সিইডাব্লিউ) উদ্যোগে এই বনরুইটি উদ্ধার করা হয়েছে।
বনবিভাগ ও সিইডাব্লিউ এর সুত্রে জানা যায়, মঙ্গবার রাতে কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা খাসীয়া পুঞ্জি এলাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেবের সাথে মেঘা নামের এক ব্যাক্তি মুঠোফনে যোগাযোগ করে জানায় তার কাছে একটি বনরুই রয়েছে তিনি তাদের চিড়িয়াখানায় এটি বিক্রি করতে চান। তার কিছুক্ষন পরেই সেই মুঠোফন বন্ধ হয়ে যায়৷ কোন ভাবেই আর তার সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছিলো না৷ ইতিমধ্যেই সজল দেব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বন বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেন৷
জানা যায়, বুধবার সকালে টিম সিইডাব্লিউ এর সোহেল শ্যাম পাপ্পুর সাথে সজল দেব যোগাযোগ করলে সাথে টিম সিইডাব্লিউ জেলার প্রতিটি খাসিয়া ও গারো পল্লিতে মেঘা নামের ব্যাক্তিকে খুঁজতে থাকে পরে যে নাম্বার থেকে কল দিয়ে বনরুইটি বিক্রির কথা বলে হয়েছিল সেই নাম্বার দিয়ে খোঁজ করতে থাকে।
সিইডাব্লিউ এর সদস্য সোহেল শ্যাম পাপ্পু জানান, এক সময় নিশ্চিত হই মেঘা নামের কেউ নেই দ্বিতীয় ধাপে আমরা সেই মুঠোফনের নাম্বার ছড়িয়ে দেই দুই এলাকায় আমাদের সহকর্মী ও দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের কাছে৷ এবং নাম্বারটির ব্যাবহারকারীর পরিচয় ও লকেশন ট্রেস করার চেস্টা করতে থাকি৷ এই চেষ্টায় জানতে পারি জনৈক ব্যাক্তিটির নাম মেঘা নয় জুয়েল৷ তিনি কুলাউড়া উপজেলার জাপান পান পুঞ্জির বাসিন্দা৷
তিনি বলেন, সাথে সাথে টিম সিইডাব্লিউ যোগাযোগ করে৷ ঐ প্রান্ত থেকে তখন জানানো হয় বনরুইটি গত রাতেই খাঁচা থেকে পালিয়ে যায়৷ তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয়ায় টিম সিইডাব্লিউ তাকে চাপ প্রয়োগ করে। ততক্ষনে টিম সিইডাব্লিউ এর সদস্য খোকন থউনাউজাম (ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার), সোহেল শ্যাম পাপ্পু (ওয়াইল্ড লাইফ রেস্কিউয়ার), কাজল হাজরা (ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার), নির্ঝর নিলয় (ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার) কুলাউড়ায় রওয়ান দেয়।
তিনি বলেন, এর মধ্যেই বিভাগীয় বনকর্মকর্তা রেজাউল করিম নির্দেশনায় জীব বৈচিত্র সংরক্ষন কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার এবং মৌলভীবাজার সদর রেঞ্জ অফিসার গোলাম সরোয়ারের নেতৃত্বে বনবিভাগের ৬ জনের একটি দল ও সাথে সাথে রওয়ানা দিয়ে দেয় লকেশনের উদ্দ্যেশ্যে৷ সাথে যোগ দেন বণ্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব৷
পরবর্তীতে সেখান থেকে বনরুইটি উদ্ধার শেষে বনবিভাগের উপস্থিতে স্থানীয় বাসিন্দারা জীববৈচিত্র রক্ষায় ভুমিকা রাখার এবং যেকোন বন্য প্রাণি শিকার করা বা ধরা থেকে বিরত থাকার অঙ্গিকার করেন৷ এবং হেডম্যান শেখর চিরান এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
উদ্ধার হওয়া বনরুইটি বর্তমানে জানকিছড়াস্থ বনবিভাগের রেস্কিউ সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে৷
জুয়েল দফো জানান, তাদের পুঞ্জির একজন এটি ধরে তার কাছে দিয়েছিল এবং থাকে জানায় এটি বিক্রি করলে প্রচুর টাকা পাবেন তাই তিনি টাকার লোভে বিক্রি করার জন্য সজল দেবকে কল দেন।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, বনরুইটি আমরা উদ্ধার করে লাউয়াছড়ার রেসকিউ সেন্টারে রেখেছি। ২/৩ দিন সেবা করে একটু সুস্থ করে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করব।
তিনি আরও জানান, এই বনরুইটি উদ্ধার করতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিইডাব্লিউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
আপনার মন্তব্য